সম্পাদক সমীপেষু...
শুধু ঝাঁ-চকচকে হাসপাতাল তৈরি করলেই শিশুমৃত্যু কমবে?
পশ্চিমবঙ্গে শিশুমৃত্যুর উপর (১৪-২) একটি উত্তর সম্পাদকীয় নিবন্ধে স্বাতী ভট্টাচার্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছেন। প্রয়াসটি ধন্যবাদযোগ্য। কিন্তু যে যুক্তি দিয়ে সরকারের সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলি নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছেন, সেগুলির মধ্যে কিছু অসঙ্গতি চোখে পড়েছে। তাঁর মন্তব্যগুলি সুপাঠ্য হলেও, শিশুমৃত্যুর মতো একটি জটিল সমস্যার এক অতিসরলীকৃত ব্যাখ্যা করার চেষ্টা হচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।
শিশুমৃত্যুর হার (IMR) তাঁর কাছে চিকিৎসা পরিষেবা মানের সূচক বলে মনে হয়নি। তাঁর মতে, শিশুমৃত্যু নির্ণীত হয় মাথাপিছু আয় বাড়লে, ধনী-গরিবদের রোজগারের ফারাক কমলে ইত্যাদি। শিশুমৃত্যুর হার অবশ্যই উন্নয়নের সূচক। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবার অবস্থানও এই সূচকের অন্তর্গত। ১৯৯০ সালে প্রকাশিত প্রথম আন্তর্জাতিক মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন (হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট) সৌদি আরব এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে তুলনা করে দেখিয়েছিল যে, মাথাপিছু ৬২০০ ডলার আয় নিয়েও সৌদি আরবে শিশুমৃত্যুর হার ছিল ৭০। একই সময়ে মাথাপিছু ৪০০ ডলার আয় নিয়ে শ্রীলঙ্কায় শিশুমৃত্যুর হার ছিল ৩২। শ্রীলঙ্কার সাফল্যের পিছনে অন্যতম বড় ভূমিকা ছিল উন্নততর স্বাস্থ্য পরিষেবার। ভারতের অন্য কয়েকটি রাজ্যের (যেমন গুজরাত) সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শিশুমৃত্যুর হার বনাম মাথাপিছু আয় ইত্যাদি তথ্য দিয়ে তুলনা করলে পাঠকেরা আলোকিত হতেন।
‘সন্তানহারা বাপ-মাকে’ পরিসংখ্যান দেওয়া অবশ্যই অযৌক্তিক এবং অমানবিক। তা সত্ত্বেও তথ্যটা বলতে হয় তাঁদের জন্য, যাঁরা শিশুমৃত্যুর জন্য কেবল মাত্র হাসপাতালগুলিকেই দায়ী করেন। মনে রাখতে হবে, সুইডেনের মতো অতি উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা-সমন্বিত দেশেও এখন প্রতি হাজারে ৪/৫টি বাচ্চা মারা যায়।
হাসপাতালের ‘গুণপনা’ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত হাসপাতালের হেলথ ইনডেক্স নেটওয়ার্কের একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করেছেন শ্রীভট্টাচার্য। এই প্রতিবেদনটিতেও তুলনীয় সূচকের কোনও মাপকাঠি আমাদের চোখে পড়েনি। প্রতিবেদনটি জানায় যে, দেশকে তার নিজের সূচক তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া ISO সার্টিফিকেশনের কথাও উল্লেখিত হয়েছে লেখাটিতে। পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যে ১২টি মাধ্যমিক স্তরের হাসপাতালে ISO সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া চলছে। ভারতের কোথাও হাসপাতালের গুণপনা মাপার কোনও ব্যবস্থা হয়নি। আমরা অন্য কয়েকটি বড় হাসপাতালের তথ্য এনে দেখেছিলাম, আমাদের রাজ্যের হাসপাতালগুলির রোগী ভর্তি বনাম মৃত্যুর নিরিখে তুলনীয় কি না। এটি একটি স্বীকৃত পদ্ধতি, যার পোশাকি নাম কেস ফ্যাটালিটি রেট। বিকল্প সূচকগুলি কী হতে পারত, তা নিয়ে কোনও প্রস্তাব রাখেননি শ্রীভট্টাচার্য। এ রাজ্যেও সরকারের উদ্যোগে মাধ্যমিক স্তরের হাসপাতালগুলিকে তাদের গুণমান অনুযায়ী ক্রমবিন্যাস করা হয়েছে (www.wbhealth.gov.in/notice/summary.pdf)। তৃতীয় পর্যায়ের হাসপাতালগুলিরও একই সমীক্ষা করা হবে।
প্রসঙ্গত বলি, শ্রীভট্টাচার্য মালদা মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালটিকে জেলা হাসপাতাল হিসাবে উল্লেখ করে আমাদের ‘হকচকিয়ে’ দিয়েছেন। গত এক বছরের উপর এটি মেডিক্যাল কলেজ হিসাবে কাজ করছে এবং এটি বর্তমানে একটি উচ্চতম পর্যায়ের হাসপাতাল। এখানে সাম্প্রতিক কালে প্রতিবেশী ঝাড়খন্ড এবং বিহারের শিশুরাও ভর্তি হচ্ছে। সেই অর্থে এটি রেফারেল হাসপাতালও বটে।
শ্রীভট্টাচার্য এটাও বলার চেষ্টা করেছেন যে, শিশুমৃত্যুর জন্য রোগীর চাপ নয়, অপরিচ্ছন্নতাই দায়ী। রোগীর চাপ বাড়লে অপরিচ্ছন্নতাও বাড়তে বাধ্য এবং সদ্যোজাতদের মতো অতি সংবেদনশীল রোগীদের উপর সেই প্রভাবও পড়ছে।
রাজ্য স্তরে প্রাথমিক হাসপাতালগুলিতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের পরিকাঠামোয় আরও উন্নয়নের চেষ্টা করা হচ্ছিল। তার সুফল খুব সম্প্রতি ফলতে শুরু করেছে। এই বছরে যে প্রাথমিক স্তরের হাসপাতালগুলিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে তাদের বেশ কয়েকটি বছরে ৩,০০০-এর বেশি প্রসব করান। কয়েকটি ৫,০০০-ও ছুঁতে চলেছে। প্রাথমিক স্তরের হাসপাতালগুলি সামগ্রিক ভাবে কার্যকর হলে কেবল মাত্র তখনই মাধ্যমিক এবং তৃতীয় স্তরের হাসপাতালগুলির চাপ কমবে। সরকারি হাসপাতালগুলির উপর মানুষের আস্থা কমছে তেমন তথ্যও দেখতে পাচ্ছি না। ২০০৯-’১০-এ যেখানে জেলা হাসপাতালগুলিতে ১,৭৬,৬৯৬টি প্রসব হয়েছিল, ২০১০-’১১-য় সেটি দাঁড়িয়েছিল ১,৮৩, ৮৬৬ এবং বর্তমান আর্থিক বছরে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সংখ্যাটি হল ১,৭১,০৭৮। উপরে উল্লিখিত মাধ্যমিক হাতপাতালে সমীক্ষা একই তথ্যের সমর্থন করে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে। অপেক্ষাকৃত বড় হাসপাতালে মায়েদের ভিড় বাড়ছে। সুস্বাস্থ্য-সন্ধানী অভ্যাসও বেড়ে উঠছে মানুষের।
স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত, এমন দাবি আমরা করি না। কিন্তু গত কয়েক মাসের চেষ্টায় অসুস্থ সদ্যোজাত চিকিৎসা ইউনিট (SNCU)-এর সংখ্যা ৬ থেকে বাড়িয়ে ১৬ করা হয়েছে। সদ্যোজাতদের আলাদা রাখার উদ্যোগ হয়েছে, লেবার রুমগুলিতে তৈরি করা হচ্ছে নিউ বর্ন কেয়ার কর্নার। S N C U সমন্বিত হাসপাতালগুলিকে ঘিরে প্রাথমিক স্তরে তৈরি করা হচ্ছে সিক নিউ বর্ন স্টেবিলাইজেশন ইউনিট। অতি অপুষ্ট শিশুদের জন্য ইতিমধ্যে প্রাথমিক স্তরের ১১টি হাসপাতালে চালু হয়েছে নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার। আরও বেশ কয়েকটি চালু হওয়ার পথে। স্বাস্থ্য বিভাগের সব স্তরের কর্মী, কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, এমনকী বেসরকারি চিকিৎকরাও শামিল হয়েছেন এই উদ্যোগে। মায়েদের মৃত্যুর অডিট প্রসঙ্গে বোধহয় বলে রাখা ভাল যে, ভারত সরকারের নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী এই অডিটে কাউকে দোষীসাব্যস্ত করা যায় না। অডিটের উদ্দেশ্যই হল পদ্ধতিগত সংশোধন করা।
লেবার রুম পদ্ধতিগত ভাবে হয়তো সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নয়। পরিষেবার মান আরও উন্নত করা প্রয়োজন। লেবার রুমের ব্যবস্থাপনা তদারকিও উন্নততর করে তোলার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। কিন্তু কেবল ঝাঁ-চকচকে হাসপাতাল গড়ে, অতি সক্রিয় ডাক্তার-নার্সরা কি ব্যাপক ভাবে কমাতে পারবে শিশুমৃত্যুর হার? অনেক শিশুমৃত্যুই অনিবার্য বা অপ্রতিরোধ্য নয়। কিন্তু এই লড়াইতে সংবাদমাধ্যম সহ সবাইকে শামিল হতে হবে।
লেখাটিতে কোথাও মা হওয়ার প্রক্রিয়ায় রক্তাল্পতা-আক্রান্ত বিশাল সংখ্যক মায়েদের এবং সামগ্রিক ভাবে তাঁদের পুষ্টির অবস্থার উপর আলোচনা পেলাম না। কম বয়সে বিয়ের যে-সামাজিক ব্যাধিতে আমরা আক্রান্ত, তারও উল্লেখ নেই। স্বাস্থ্যের পরিকল্পিত প্রচেষ্টার মধ্যে কী কী ফাঁক থেকে গেছে এখনও পর্যন্ত, তার আলোচনা নেই। সাম্প্রতিক কালের উদ্যোগগুলির সমালোচনা বা আলোচনা থাকলে শিশুমৃত্যু নিয়ে সরকারের মধ্যে ও বাইরে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরাও উপকৃত হতেন।
পোষ্য কুকুর? তাদের মালিক?
‘শহরের রাস্তা তো কুকুরের শৌচাগার’ (১৪-২) পত্রে কেবল মাত্র শহরের পথচারী কুকুরদের রাস্তায় বিষ্ঠা ছড়ানোর কথা উল্লেখ হয়েছে। শুধু রাস্তার কুকুর নয়, গৃহপালিত কুকুরদের গলায় চেন বেঁধে তাদের মালিকবৃন্দও রাস্তায় অপরের বাড়ির সামনে নিয়মিত বিষ্ঠা ত্যাগ করিয়ে থাকেন, এ সর্বজনবিদিত। রাস্তার কুকুরদের এ জন্যই পেটানো ইত্যাদি করা চলে। কিন্তু পোষ্য কুকুরদের? তাদের মালিকদের? এ বিষয়ে সুধীজনের মতামত জানতে আগ্রহী।
দার্জিলিঙে স্বামীজি
সম্প্রতি ‘বিবেকানন্দের স্মৃতিরক্ষার উদ্যোগ দার্জিলিং রাজবাড়িতে’ (১১-৩) শীর্ষক লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, স্বামী বিবেকানন্দ মোট দু’বার দার্জিলিং ভ্রমণ করেছেন। এটা ঠিক নয়। আসলে স্বামীজি মোট তিন বার দার্জিলিঙে এসেছিলেন। ১৮৯৭ সালে দু’বার এবং শেষ বার ১৮৯৮ সালে। প্রথম বার ৯ মার্চ, ১৮৯৭ দার্জিলিং পৌঁছে আতিথ্য গ্রহণ করেন দার্জিলিঙের সরকারি উকিল মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যালেন ভিলা রোডের বাড়িতে। ছিলেন ২১ মার্চ ১৮৯৭ পর্যন্ত। ২২ তারিখ কলকাতা পৌঁছান এবং শিয়ালদহ স্টেশনে স্বামীজিকে অভ্যর্থনা জানান খেতড়ির রাজা অজিত সিংহ। পুনরায় কলকাতা থেকে দার্জিলিং পৌঁছান ২৪ মার্চ, ১৮৯৭। অবস্থান করেন বর্ধমান মহারাজার রাজবাড়ি চন্দ্রকুঠিতে। ২৮ এপ্রিল, ১৮৯৭ দার্জিলিং থেকে রওনা দেন কলকাতার উদ্দেশে। শেষ বার দার্জিলিং পৌঁছান ৩১ মার্চ, ১৮৯৮। আতিথ্য গ্রহণ করেন মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে। বেশ কিছু দিন বসবাস করার পর দার্জিলিং থেকে রওনা দেন ২ মে, ১৮৯৮।
সবুজ আলো?
কলকাতা ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের সায়েন্স সিটির মোড়ে পুলিশের ট্রাফিক আলো একটি দিকের জন্য সব সময় সবুজ রাখা রয়েছে কয়েক বছর ধরে। এই মোড়ে একটি বাস স্টপ আছে, যেখানে সায়েন্স সিটি ও মিলনমেলায় যাওয়ার জন্য অনেক মানুষ শিশু-সহ নামেন। নিত্যযাত্রীরা তো আছেনই। এঁদের এই প্রশস্ত ও সদাব্যস্ত গাড়ি-জর্জরিত রাস্তা পার হওয়ার কোনও উপায় নেই। বছরের পর বছর এই অত্যাচার চলেছে!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.