অনাদায়ী ঋণে জর্জরিত রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের বোঝা কমাতে কড়া দাওয়াইয়ের পথে হাঁটতে চলেছে শিল্প দফতর। অর্থনীতির অধ্যাপক এবং শিল্প বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ জন্য কমিটি গড়ছে নিগম। মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও যে-সব সংস্থা টাকা মেটাবে না, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বুধবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নিগমের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে। সেখানে গড়া তিন সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন নিগমের ভাইস চেয়ারম্যান তথা অর্থনীতির অধ্যাপক অভিরূপ সরকার, আর্থিক বিশেষজ্ঞ ও সিআইআই সদস্য দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন এক্সাইড কর্তা সত্যব্রত গঙ্গোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “নিগমের কাছে ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়নি, এ রকম সংস্থার নামের তালিকা-সহ বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট তৈরি হবে। সে জন্য নিয়োগ করা হবে পেশাদার সংস্থাকে। তার পর বেঁধে দেওয়া হবে টাকা ফেরতের সময়সীমা। যার মধ্যে টাকা না-মেটালে কড়া ব্যবস্থা নেবে রাজ্য।”
নিগমের বকেয়া টাকা উদ্ধারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে কমিটি গড়েছিল বাম সরকারও। তবে ওই অভ্যন্তরীণ কমিটির তিন সদস্যই ছিলেন নিগমের কর্মী। কোথায় কোন সংস্থার কাছে কত টাকা নিগমের পাওনা রয়েছে, একেবারে প্রকল্প ধরে ধরে তা খুঁজে বার করাই ছিল ওই কমিটি তৈরির মূল উদ্দেশ্য। কারণ, তখন অনেক প্রকল্পের কাগজপত্রই পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে অস্পষ্ট ছিল সার্বিক চিত্র।
নিগমের কোথায় কত টাকা আটকে রয়েছে, তা খুঁজতে গিয়ে ওই কমিটি দেখে যে, ১৯টি সংস্থার ২৫টি ঋণে গ্যারান্টর হিসেবে নাম রয়েছে নিগমের। নথিভুক্ত ও অ-নথিভুক্ত মিলিয়ে বিনিয়োগ রয়েছে মোট ১১৮টি সংস্থায়। যার মধ্যে ৩০টিতে লগ্নির টাকা ফেরত পাওয়া অসম্ভব। তা ছাড়া, নিগমের মাধ্যমেই বিভিন্ন সংস্থাকে সহজ শর্তে বিক্রয়কর ঋণ দেয় রাজ্য। ১৪৪টি সংস্থার কাছ থেকে উদ্ধার করা যায়নি সেই অঙ্কও। উদ্ধার হয়েছে ঋণ শোধ না-করা ৬৭টি সংস্থার সম্পত্তি।
২০১১ সালের মধ্যে ১৬-১৭টি ক্ষেত্রে ঋণের গ্যারান্টর হিসেবে নাম প্রত্যাহার করে নিতে পেরেছে নিগম। কিন্তু এখনও শিল্প দফতরের মাথাব্যথার বড় কারণ অনাদায়ী ঋণের অঙ্ক। নিগমের ২০০৯-’১০ অর্থবর্ষের আর্থিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই বছর পাওয়ার সম্ভাবনা কম, এমন ঋণের পরিমাণ ৩.৫ কোটির উপর। যার মধ্যে উদ্ধার হয়েছে মাত্র ১.৮ কোটি। আর প্রায় ৬ কোটি টাকার ঋণ খরচের খাতাতেই। বছরের পর বছর বকেয়া টাকার অঙ্ক বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। প্রসঙ্গত, নির্ধারিত সময়ের পর ১৮০ দিনের মধ্যে ঋণ শোধ না-দিলে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুযায়ী তা গণ্য হয় অনাদায়ী ঋণ হিসেবে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ঘাড়ে চেপে থাকা বিপুল ঋণের বোঝার জেরে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর দশা সরকারের। তাই শুধু বাজেট বরাদ্দের উপর নির্ভর না-করে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য চাপ রয়েছে প্রায় প্রতিটি দফতরের উপর। স্বাভাবিক ভাবেই নিগমের অনাদায়ী ঋণ উদ্ধারেও শিল্পমন্ত্রী জোর দিচ্ছেন বলে মনে করছে তারা।
অন্য দিকে, এ দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস নিয়েও। সেখানে ২০০ কোটি টাকার নয়া প্রকল্পে নিগমের ভূমিকা কী হবে, তা ঠিক করতে তৈরি হয়েছে আর একটি কমিটি। তারা প্রকল্পের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখলে তার ভিত্তিতে সেখানে নিগমের লগ্নির বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
বৈঠক শেষে ৭টি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয় লিজ চুক্তিও। সব মিলিয়ে ৬৬টি সংস্থাকে যা দেওয়া হবে। পার্থবাবুর দাবি, ১৫ এপ্রিলের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ হবে। |