সহায়ক মূল্যে ধান কেনায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগের প্রশংসা করে দলেই বিতর্কের মুখে পড়লেন বালুরঘাটের আরএসপি সাংসদ প্রশান্ত মজুমদার। আরএসপি সূত্রের খবর, শনিবার রাতে বালুরঘাটে দলের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ে এক ঘরোয়া আলোচনায় প্রশান্তবাবু মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করতেই হইচই বেধে যায়। সংবাদ মাধ্যমের উপস্থিতিতেই প্রশান্তবাবুর ওই মন্তব্য শুনে সশব্দে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান বালুরঘাটের পুরপ্রধান তথা আরএসপি-র জেলা নেত্রী সুচেতা বিশ্বাস। তিনি বলতে থাকেন, “আপনি পার্টি অফিসে বসে এ সব বলতে পারেন না। কেন মমতার প্রশংসা করছেন?” তাঁকে সমর্থন করেন অন্য দুই জেলা নেতা কালী কর এবং অসিতবন্ধু ঘোষ। জেলা কার্যালয়ের সামনের বারান্দায় পায়চারি করতে করতে সুচেতাদেবীকে এ দিন বলতে শোনা যায়, “যাঁর বিরুদ্ধে আমরা লড়ছি, আপনি তাঁর প্রশংসা করছেন!
আপনার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।” প্রশান্তবাবু অবশ্য ‘অনড়’ ছিলেন নিজের ‘অবস্থানে’। তাঁর বক্তব্য, “যেটা সত্য, সেটা বলবই। তোরা যা খুশি মনে করতে পারিস।” শেষ পর্যন্ত দলীয় কার্যালয় ছেড়ে সুচেতা দেবী-সহ ওই তিন জন বেরিয়ে যান। |
পরে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সুচেতাদেবী বলেন, “শনিবার রাতে যা হয়েছে, হয়েছে। নতুন করে এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।” আর প্রশান্তবাবু বলেন, “এ বার ধান কেনার ক্ষেত্রে চেক নিয়ে বহু জায়গায় সমস্যা হয়েছে, এটা ঘটনা। কিন্তু আমার ধারণা, প্রথম
বছরের ভুলত্রুটি কাটিয়ে সামনের বছর মুখ্যমন্ত্রী সব ঠিক করে ফেলবেন।” আগামী ১০-১৩ এপ্রিল তপন ব্লকে দলের রাজ্য সম্মেলনে এই বিষয়টি তুলবেন বলেও রবিবার জানান তিনি।
ধান বিক্রি করতে গিয়ে ফি বছর রাজ্যের অন্য জেলাগুলির মতো দক্ষিণ দিনাজপুরের চাষিদেরও সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর দক্ষিণ দিনাজপুরে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান কেনা হয়েছে। জেলার ৮টি ব্লকে গত কয়েক মাসে তিনশোরও বেশি ধান কেনার শিবির হয়েছে। সেখানে প্রায় ৩০ হাজার টন ধান কেনা হয়েছে, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার টন।
তবে আরএসপি এবং জেলার বাম নেতারা অবশ্য প্রশান্তবাবুর এই ‘অবস্থানের’ পিছনে ‘অন্য রাজনীতি’ খুঁজে পাচ্ছেন। আরএসপি-র দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সম্মেলনে সদ্যই জেলা সম্পাদকের পদ খোয়াতে হয়েছে প্রশান্তবাবুকে। নতুন জেলা সম্পাদক হন বিশ্বনাথ চৌধুরী। জেলা সম্পাদকের পদ হারিয়ে প্রশান্তবাবু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে দলের মধ্যে বিরোধী গোষ্ঠীকে চাপে ফেলতে চাইছেন কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে দলেরই একাংশের মধ্যে।
তবে বালুরঘাটের সাংসদ বলেছেন, “চাষিরা যাতে ধানের কুইন্টাল প্রতি ১,০৮০ টাকা সহায়ক মূল্য পান, সে ব্যাপারে একটা চেষ্টা করেছে বর্তমান রাজ্য সরকার। চালকলগুলিকে দিয়ে চাষিদের থেকে সরাসরি ধান কিনছে। চেক নিয়ে সমস্যা হওয়ায় অনেক জায়গায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেক এলাকায় ব্যাঙ্ক না থাকাতেও সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। তবে সামনের বছর এ সব সমস্যা কাটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবেন বলে মনে করি।”
আরএসপি-র জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরী বলেন, “এ নিয়ে মন্তব্য করব না।” জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক মানবেশ চৌধুরী বলেন, “প্রশান্তবাবু যদি ধান কেনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে থাকেন, তবে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত মত। আমরা মনে করি, ধান ও পাট কেনার ক্ষেত্রে বর্তমান রাজ্য সরকার কৃষকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।” আরএসপি-র কার্যনিবার্হী রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামীর প্রতিক্রিয়া, “কোন পরিস্থিতিতে উনি মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করলেন, সেটা প্রশান্তবাবুই বলতে পারবেন। ওঁর সঙ্গে শীঘ্রই আমার দেখা হবে। তখন ওঁর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যে কাজ শুরু করেছেন, তাতে এই প্রশংসা তাঁর আরও আগে প্রাপ্য ছিল। অন্য বাম-শরিকেরা মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করলেও, প্রশান্তবাবু ব্যাপারটা বুঝেছেন। তাই উনি সত্য গোপন করেননি।” |