|
|
|
|
ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট |
জমির সমস্যায় থমকে পথবাসীদের নৈশাবাস |
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় ও রোশনী মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
বাধা সেই জমি।
জমি জোগাড় করতে না-পারায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও ফুটপাথবাসীদের জন্য নৈশ আবাস তৈরির কাজে ধাক্কা খেতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। এ দিকে, সময় মতো যথেষ্ট সংখ্যক নৈশ আবাস গড়তে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত অবমাননার দায়ে পড়ার খাঁড়াও ঝুলছে সরকারের মাথার উপরে।
কলকাতা, হাওড়া ও আসানসোল মিলিয়ে মোট ১৪৩টি নৈশ আবাস তৈরি করার কথা। কিন্তু তৈরি হয়েছে মাত্র ৬টি। বাকিগুলি কবে হবে বা আদৌ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সরকার নিজেই সন্দিহান। এ দিকে, কাজে দেরি করার জন্য সম্প্রতি রাজ্যকে কড়া ভর্ৎসনা করেছে শীর্ষ আদালত। এ বিষয়ে রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব টুকটুক কুমার বলেন, “রাজ্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। শুধু কলকাতা আর হাওড়া মিলিয়েই আদালত ১৩২টি নৈশাবাস গড়তে বলেছে। আসানসোলে গড়তে হবে ১১টি। এটা অবাস্তব। এত জায়গা কী করে মিলবে? বাড়ি ভাড়াই পাওয়া যাচ্ছে না, তো জমি! আমরা জায়গা এবং বাড়ি চেয়ে বিজ্ঞাপনও দিয়েছি। কোনও সাড়া পাইনি।”
আদালতের নির্দেশেই দেশের পাঁচ লক্ষের বেশি জনসংখ্যাযুক্ত শহরগুলিতে গৃহহীনদের জন্য নৈশাবাস তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল বছর আড়াই আগে। এ রাজ্যে কলকাতা, হাওড়া ও আসানসোলে ‘র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট সার্ভে’ হয়। দেখা গিয়েছিল, তিন শহর মিলিয়ে রাস্তায় বাস করেন প্রায় ১৮ হাজার মানুষ। তাঁদের সকলের জায়গা করতে ১৪৩টি আশ্রয় গড়া দরকার।
রাজ্য কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, ২০১১-র নভেম্বর থেকেই এর জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ২০১২-র ৩১ মার্চের মধ্যে অন্তত ১৪টি নৈশাবাস চালু হয়ে যাবে। কিন্তু, কাজ প্রায় কিছুই এগোয়নি। গত ২৩ জানুয়ারি এর জন্য রাজ্যকে ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট। সরকার অবশ্য দাবি করছে, দেরি করার কোনও অভিপ্রায় তাদের নেই। জমি পাওয়া যাচ্ছে না বলেই কাজে গতি আসেনি।
|
|
কলকাতার চেতলা, গ্যালিফ স্ট্রিট ও বেলেঘাটায় একটি করে নৈশাবাস তৈরি হয়েছে। বেলেঘাটার আবাসটি এখনও চালু হয়নি। চেতলার নৈশাবাসে শুধু মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলারা থাকতে পারেন। গ্যালিফ স্ট্রিটেও থাকতে পারেন শুধু মহিলা ও শিশুরা। অর্থাৎ, ফুটপাথবাসী পুরুষদের জন্য এখনও কলকাতায় নৈশাবাস তৈরিই হয়নি। হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর ও সালকিয়ার বাঁধাঘাটে মাত্র দু’টি নৈশাবাস হয়েছে। আসানসোলে হয়েছে মোটে একটি।
৩১ মার্চ কয়েক দিন বাকি। রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, জমি মিলছে না। তা ছাড়া, এত কম সময়ে এত নৈশাবাস তৈরি করা অবাস্তব। কিন্তু না করলে তো আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হতে পারে রাজ্যকে। টুকটুক কুমারের বক্তব্য, “হলে হবে। আমাদের বিশ্বাস, আদালত বাস্তব পরিস্থিতি বুঝবে।”
সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গের উপদেষ্টা অনুরাধা তলোয়ার কিন্তু রাজ্যকে তুলোধোনা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, জমিটা সমস্যা নয়। রাজ্য যথেষ্ট উদ্যোগী নয়। গত মাসেই সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া রিপোর্টে তিনি লিখেছেন, তৈরি হওয়া ছ’টি নৈশ আবাসের একটিও এখনও রাজ্য সরকারের তরফে কোনও টাকা পায়নি। নৈশাবাসগুলি বসবাসের উপযোগী করার বিষয়ে সরকার উদাসীন। যেখানে পাঁচটি আবাসে ২৬৮ জনের থাকার কথা, সেখানে থাকছেন সাকুল্যে ৮০ জন। মানুষকে জানানোর তাগিদ বা উদ্যোগ সরকারের নেই।
অনুরাধাদেবী আরও জানিয়েছেন, পরিবার নিয়ে থাকতে পারার মতো কোনও জায়গা তৈরির কথা বারবার বলা হয়েছে। রাজ্য সরকার তাতে কান দিচ্ছে না। নৈশাবাসে খাবার তৈরির ব্যবস্থাও রাখতে হবে। না-হলে মানুষ সেখানে থাকতে আসবেন কেন? এর উত্তরে টুকটুক কুমারের সাফ কথা, “এত কিছু করতে গেলে তো সেটি আবাসন প্রকল্প হয়ে যেত। জমিই তো পাওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে এত রংবাহারি পরিকল্পনা মুখেই করা যায়, বাস্তবে হয় না।” |
|
|
|
|
|