একের পর এক চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটেই চলেছে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমা ও লাগোয়া এলাকায়। গত শুক্রবার রাতে বসিরহাট ও দেগঙ্গায় কয়েকটি বাড়ি ও দোকানে লুঠপাট চালিয়ে নগদ ও অলঙ্কার মিলিয়ে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীর দল, ওই ঘটনার পর ফের শনিবার রাতে দেগঙ্গায় বিডিও অফিসের সামনে টাকি রোডের পাশে একটি পেট্রোল পাম্পে হামলা চালায় একটি ডাকাত দল। ডাকাতেরা পাম্পটি ঘিরে ফেলে ক্যাশিয়ারের মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে লক্ষাধিক টাকা লুঠ করে। এ ছাড়া পাম্পে সেই সময় থাকা একটি ট্যাঙ্কারের চালকের কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়।
পর পর চুরি-ডাকাতির ঘটনায় বসিরহাট ও দেগঙ্গার মানুষ একইসঙ্গে আতঙ্কিত এবং ক্ষুব্ধও। তাঁদের ক্ষোভ পুলিশের বিরুদ্ধে। সেইসঙ্গে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আতঙ্কিত তাঁরা। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের নরম মনোভাবের জন্যই দুষ্কৃতীদের এমন বাড়বাড়ন্ত। যদিও পুলিশের বক্তব্য, সমস্ত ঘটনার তদন্ত চলছে। শীঘ্রই দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে দেগঙ্গায় বিডিও অফিসের সামনে একটি পেট্রোল পাম্পে হামলা চালায় ৮-১০ জনের একটি ডাকত দল। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ পাম্পে তেলের ট্যাঙ্কার আসে। সাধারণত, তেলের ট্যাঙ্কার আসার পরে পাম্পে কিছুক্ষণের জন্য বেচা-কেনা বন্ধ থাকে। তার সুযোগ নেয় ডাকাতদলটি। রাত পৌনে ১০টা নাগাদ তারা পাম্পটি ঘিরে ফেলে। তারপর ক্যাশিয়ারের কপালে রিভলভার ঠেকিয়ে লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নেয়। সেইসঙ্গে ট্যাঙ্কারের চালকের কাছ থেকেও কয়েক হাজার টাকা, মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে অপারেশন শেষ করে পালিয়ে যায় তারা।
আগের রাতেই অর্থাৎ শুক্রবারও দেগঙ্গার বেড়াচাঁপার গড়পাড়ায় সহদেব সাউ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে হামলা চালায় ৭-৮ জনের এক দুষ্কৃতী দল। সেই সময় বাড়ির লাগোয়া গুড়ের কারখানায় কাজ করছিলেন। দুষ্কৃতীরা সেখানে ঢুকে তার মাথায় রিভলভার ধরে বাড়ির লোকদের দরজা খোলার জন্য তাঁকে বলতে বলে। সহদেববাবু রাজি না হওয়ায় তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। তার পরে বাড়ির দরজা ভেঙে যথেচ্ছ লুঠপাট চালায় তারা। সহদেববাবুর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে আসিরুদ্দিন বিশ্বাসের বেকারির দোকান। রাত একটা নাগাদ সেখানে কাজ করছিলেন দু’জন শ্রমিক। সহদেববাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুষ্কৃতী দলটি সেখানে হানা দেয়। কিন্তু কোনও টাকাপয়সা না পেয়ে ওই দুই কর্মচারিকে বেধড়ক মারধর করে ও তাঁদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। টাকা না পেয়ে দুষ্কৃতীরা বস্তা ভরে বিষ্কুট নিয়ে নেয়। সেখান থেকে বেরিয়ে ওই দুষ্কৃতীরা কাছেই সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা চালায়। পরিবারের সকলেই আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ায় বাড়িতে কেউ ছিলেন না। দুষ্কৃতীরা অবাধে লুঠপাট চালিয়ে নগদ টাকা, গয়না নিয়ে চম্পট দেয়। শনিবার বাড়ি ফিরে সিরাজুল সব জানতে পেরে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
অন্যদিকে, শুক্রবার রাতেই ১১টা নাগাদ বসিরহাট থানার উত্তর বাগুন্ডি গ্রামে পেশায় মোটর মেকানিক গৌতম মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালায় জনা চারেকের এক দুষ্কৃতী দল। গৌতমবাবু সেই সময় বাড়িতে ছিলেন না। দুষ্কৃতীরা ‘পার্টি থেকে আসছি’ বলায় বাড়ির লোকেরা দরজা খুলে দিলে দুষ্কৃতীরা ঢুকে লুঠপাট চালায়। বাড়ির লোকজনদের মারধর করে।
রাত আড়াইটা নাগাদ ভ্যাবলা স্টেশনের কাছে বটতলায় মুদির দোকানের মালিক নিমাই সরকারের বাড়িতে হামলা চালায় চারজনের এক দুষ্কৃতী দল। গাছের গুঁড়ি দিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে টাকাপয়সা গয়নাগাটি লুঠ করে বিনা বাধায় পালিয়ে যায়। ঘটনার পরে পুলিশ তদন্তে নামে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান দু’টি বাড়িতে একই দুষ্কৃতী দল হামলা চালিয়েছে। পর পর ডাকাতি ও মারধরের ঘটনায় বসিরহাট, দেগঙ্গায় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে জোর তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। |