অভয়ারণ্য বাঁচাতে রাস্তার বদলে উড়ালপুলের আর্জি
বারুইপুর-বাইপাস হাইওয়ে তৈরির জন্য নরেন্দ্রপুরের চিন্তামণি কর অভয়ারণ্যে গাছ কাটার আশঙ্কা থেকে উঠে এল বিকল্প এক ভাবনা। অরণ্য বাঁচাতে উড়ালপুল তৈরির প্রস্তাব দিলেন পরিবেশপ্রেমী ও পক্ষীপ্রেমীরা। বস্তুত, পরিবেশপ্রেমীদের এই প্রস্তাব উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষা মেলবন্ধনের একটি মডেল হতে পারে।
ওই অভয়ারণ্যের মোট আয়তন ১৭ একরের একটু বেশি। পাশাপাশি, কিছুটা সেচ দফতরের জমি অভয়ারণ্যের মধ্যে ঢুকে রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে খালটিও এখন কার্যত অভয়ারণ্যের অংশ। নানা জাতের বনবিড়াল, ভাম, খটাশ, ধূসর বেজি এবং জলের গোসাপ ওই খালের উপরে নির্ভরশীল। ওই প্রাণীগুলির অধিকাংশই বিপন্ন ও অতি বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত। খালের পশ্চিম পাড়ে রাস্তা তৈরি হয়ে গিয়েছে। অরণ্য ধ্বংসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে পূর্ব পাড়ে রাস্তা তৈরি নিয়ে, যার জন্য কাটা পড়তে পারে প্রায় শতাধিক গাছ। ওই অভয়ারণ্য দুর্লভ পাখির জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি কুড়িয়েছে। বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ওই অভয়ারণ্য জীব-বৈচিত্রের ভাণ্ডারও বটে। খালের পূর্ব পাড়ে অভয়ারণ্য সংলগ্ন সেচ দফতরের জমিতে কয়েকটি পরিবার থাকত। জেলা প্রশাসনের তরফে তাঁদের উঠে যাওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা করা হয়েছে পুনর্বাসনের।
কিন্তু বন্যপ্রাণীর যেহেতু পুনর্বাসন হয় না, তাই পরিবেশকর্মীদের মতে, উন্নয়নের পাশাপাশি অরণ্যও বাঁচুক। পরিবেশকর্মী অর্জন বসু রায়ের বক্তব্য, “খালপাড়ের ওই পাঁচশো মিটার জায়গায় উড়ালপুল হলে অরণ্য বাঁচবে। উড়ালপুল তৈরিতে অনেক খরচ। তবে সরকার বিবেচনা করলে নিশ্চয়ই এটা সম্ভব।” ‘প্রকৃতি সংসদ’ নামে পরিবেশ সংগঠনের সম্পাদক কুশল মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “যে কোনও সভ্য দেশই উড়ালপুল বানিয়ে অরণ্য বাঁচানোর চেষ্টা করত। আশা করি এ রাজ্যও তাই করবে।” পাখির তথ্যভাণ্ডার ‘ক্যালকাটা বার্ডস’-এর কর্ণধার সুমিত সেন বলেন, “আমরা উন্নয়নের নামে ইতিমধ্যেই অনেক অরণ্য ধ্বংস করেছি। ওই অভয়ারণ্য বাঁচাতে সরকার নিশ্চয়ই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে।” তাঁদের মতে, শতাধিক গাছ কাটলে বা রাস্তা তৈরিতে খালের সঙ্গে অরণ্যের যোগ ছিন্ন হলে অভয়ারণ্যের সর্বনাশ হবে।
বন দফতরের এক আধিকারিকও উড়ালপুল তৈরির পক্ষে। তাঁর মতে, এ ভাবেই ওই অরণ্য বাঁচবে। বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “জেলা সদর আলিপুর থেকে বারুইপুরে নিয়ে যাওয়া হবে। তার আগে বারুইপুর-বাইপাস হাইওয়ে তৈরি করা দরকার। সে জন্য অভয়ারণ্যের পাশে কিছু জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। জমিটি সেচ দফতরের। রাস্তা নিশ্চয়ই তৈরি হবে, তবে অরণ্যের ক্ষতি করে নয়।” বিমানবাবু সম্প্রতি ওই অভয়ারণ্যে গিয়েছিলেন পুরো বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে।
কিছু দিন আগে জেলাশাসক, ডিএফও, সেচ দফতর এবং কেএমডিএ-র সম্মিলিত সমীক্ষার পরে সিমেন্টের থাম পুঁতে ওই জায়গায় জমি চিহ্নিত হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) লিপিকা রায় বলেন, “রাস্তা করতে কেএমডিএ-র কত জায়গা লাগবে, তার জন্য অভয়ারণ্যের কতটুকু জমি নেওয়া হবে, তা ঠিক হয়নি। তার পরে যদি গাছ কাটতে হয়, বন দফতরের সহায়তা নিয়ে কেএমডিএ গাছগুলি চিহ্নিত করবে। সেই গাছগুলি মার্কা করা হবে। তার পরে মুখ্য বন্যপ্রাণী অধিকর্তার অনুমতি নিতে হবে।” কিন্তু গাছ কাটার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। সেটাই পরিবেশকর্মীদের শঙ্কিত করছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.