উত্তর কলকাতা
বিধি শিকেয়
জোর যার...
দেরি হয়ে গিয়েছে বলে মৌলালি থেকে দৌড়তে দৌড়তে ট্রেন ধরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লেন বছর চল্লিশের ভদ্রমহিলা। বিদ্যাপতি সেতুর নীচের অ্যাপ্রোচ রোড দিয়ে তাড়াতাড়ি যেতে গেলেন। কিন্তু একটু এগিয়েই ভদ্রমহিলার পা মচকে গেল। অ্যাপ্রোচ রোডের উপর সারি সারি দোকান আর খাবারের হোটেল। রাস্তায় হোটেলের বাসনপত্র ধোয়ার জলে পা পড়ায় ওই মহিলার পা পিছলে যায়।
বিকালে ওই রাস্তার উপরেই একটি খাবারের দোকানের সামনে ঝাঁট দিচ্ছিল দোকানেরই এক কর্মী। তখনই সেখান দিয়ে শিয়ালদহ স্টেশন যাচ্ছিলেন এক তরুণী। বাড়ি নৈহাটিতে। প্রতি দিন ধর্মতলায় অফিসে আসেন। লোকজনের যাতায়াতের রাস্তায় ঝাঁট দিতে গিয়ে তরুণীর মুখের উপর নোংরা জল এসে পড়ল। তিনি রীতিমতো খেপে গেলেন। কারণ, বার বার ছেলেটিকে থামতে বললেও ছেলেটি শুনতে পায়নি। পরে আশপাশের লোকজন চেঁচামেচি করতে দেখা গেল, সে ইয়ার ফোন কানে গুঁজে ঝাঁট দিচ্ছিল।
দু’টি দৃশ্যই আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের উপর বিদ্যাপতি সেতুর নীচের অ্যাপ্রোচ রোডের। নীলরতন সরকার হাসপাতালের সামনে দিয়ে শিয়ালদহ অভিমুখী রাস্তার একধার রেলিং দিয়ে ঘেরা থাকে। পথচারীদের নিরাপদে হাঁটার জন্যই রাস্তাটি এ ভাবে ঘিরে দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। এমনকী, গ্রিন পুলিশও পথচারীদের রাস্তা দিয়ে না গিয়ে রেলিংয়ের ভিতর দিয়ে যেতে অনুরোধ করেন।
কিন্তু সেখান দিয়ে যেতে গেলে বিপত্তি বাধে। অ্যাপ্রোচ রোডের দু’পাশটাই দখল হয়ে গিয়েছে। কী নেই এই অ্যাপ্রোচ রোডে? ফল, বিস্কুট, চা-পান-বিড়ি থেকে শুরু করে ভাতের হোটেল সবই রয়েছে। ভোর থেকেই শুরু হয়ে যায় বড় বড় উনুন জ্বালিয়ে রান্নার কাজ।
সেখানেই রান্না করা, বাসন ধোয়া, বেঞ্চ পেতে খাওয়া। হঠাৎ করে দেখলে বোঝা দায় এটি অ্যাপ্রোচ রোড।
যদিও শিয়ালদহ স্টেশন, অর্থাৎ বেলেঘাটা থেকে বিদ্যাপতি সেতুর উপর ওঠার মুখেই রয়েছে সতর্কবার্তা ‘উড়ালপুলের উপর দিয়ে পায়ে হাঁটা নিষিদ্ধ।’ সতর্কবার্তা না মেনেই বহু মানুষ সেতুর উপর দিয়েই যান।
নিত্যযাত্রী এবং পথচারীদের বক্তব্য, উড়ালপুলের বদলে তাঁরা যে নীচের অ্যাপ্রোচ রোড দিয়ে হাঁটবেন, সেটাও হকারদের দখলে। অবশ্য বিদ্যাপতি সেতুর এই অংশের অ্যাপ্রোচ রোডে বসা হকারদের কার্যত কোনও দায়িত্ব নিতে নারাজ হকার সংগঠনগুলিই। তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত ‘উত্তর কলকাতা ট্রেড ইউনিয়ন’-এর এক কর্তা বলেন, “অ্যাপ্রোচ রোডের ওইটুকু অংশে আমাদের কোনও সদস্য নেই।” পাশাপাশি, ফরওয়ার্ড ব্লক নিয়ন্ত্রিত ‘বেঙ্গল হকার্স ইউনিয়ন’-এর পক্ষ থেকেও জানানো হয়, ওই অংশে তাদের সদস্য কোনও হকার নেই।
কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “হকার হলে তাঁদের পুনর্বাসন ছাড়া তোলা যায় না। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে, কোনও ইউনিয়নই আমাকে জানায়নি যে ওখানে যাঁরা বসে ব্যবসা করছেন, তাঁরা বাইরের লোক, হকার নন। কিন্তু তাঁরা ফুটপাথে বসে ব্যবসা করছেন বলে তাঁদের হকার বলেই ধরে নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে এঁদেরও নিয়ন্ত্রণ করা হবে।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.