খুশিতে বাঁচুন
ছক-ভাঙা ব্যায়াম
জেট যুগে সময়ের বড় অভাব। তা ছাড়া নিয়ম করে, রুটিন ধরে জিমে যেতেও অনেক সময় মন চায় না। জিমে গেলেও বার বার একই ব্যায়াম করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। জিমেও যাবেন, অথচ একঘেয়ে লাগবে না এমন উপায় আছে কি? অবশ্যই আছে ক্রসফিট। সোজা কথায়, অল্প সময়ে একগুচ্ছ ব্যায়াম। তা ছাড়া এর কোনও ধরাবাঁধা রুটিন নেই। ইউরোপ ও আমেরিকার পরে ক্রসফিট এ দেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আগেই বলেছি, ব্যায়ামের প্রধানত দু’টি ভাগ। কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম ও শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম| ক্রসফিটে এর পাশাপাশি মাংসপেশির সহ্যক্ষমতা, নমনীয়তা, ক্ষমতা, বেগ, সমন্বয়, তৎপরতা, ভারসাম্য এবং সূক্ষতার দিকেও নজর দেওয়া হয় অনেকটা ক্রীড়াবিদদের মতো।
ভাবছেন কেন? দেখা গিয়েছে, ভাল ফিটনেসের জন্য ক্রীড়াবিদের হাড়ের ঘনত্ব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়। কমে হার্ট অ্যাটাক, ক্যানসার, করোনারি হার্ট ডিজিজ এবং অবসাদের আশঙ্কায়ও। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ২৫ কিংবা ৮০ বয়স যা-ই হোক না কেন, নানা মাত্রায় ক্রসফিট পদ্ধতিতে শরীরচর্চা সবার পক্ষে উপকারী। এতে সামগ্রিক ভাবে ফিটনেসের উন্নতি হবে।
এ বার বলি, কী করবেন। এ পদ্ধতিতে প্রত্যেকটি ব্যায়ামে খুবই কম সময় দেওয়া হয়। একটি ব্যায়াম করে দ্রুত অন্য ব্যায়াম শুরু করতে হবে। মাঝে বিশ্রাম নেওয়ারও বিশেষ সময় পাবেন না। নানা ধরনের ব্যায়ামে শরীরের বিভিন্ন মাংসপেশির সঞ্চালন হয়। ফলে ফিটনেসেরও সামগ্রিক উন্নতি হয়। যেমন ধরুন, কার্ডিও ব্যায়াম। আগেও বলেছি যে, কোনও কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম ধীরে ধীরে দীর্ঘ ক্ষণ করলে কোনও লাভ হয় না। ক্রসফিটে তাই কার্ডিও ব্যায়াম অল্প সময়ে তীব্র ভাবে করতে হবে| যেমন, অল্প সময়ে জোরে জগিং করা বা দৌড়ান।
এ বার ব্যায়ামের একটি তালিকা দিলে সুবিধা হবে। সপ্তাহে পাঁচ-ছ’ দিন ডেড লিফ্ট, ক্লিন, স্কোয়াট, প্রেস, সি অ্যান্ড জি এবং স্ন্যাচের মতো লিফ্ট করতে হবে। সঙ্গে পুল আপস, ডিপস, রোপ ক্লাইম্ব, পুশ আপস, সিট আপস, প্রেসেস টু হ্যান্ড, ফ্লিপ্স অ্যান্ড হোল্ডস-এর মতো জিমন্যাস্টিকস করতে পারেন। ভাবছেন, কোন ব্যায়াম আগে আর কোন ব্যায়াম পরে? ক্রসফিটে সে রকম কিছু নেই| মানে কোনও রুটিন নেই। যে কোনও একটি দিয়ে শুরু করুন। কিছু ক্ষণ পরে চলে যান অন্য ব্যায়ামে। একে বারে মর্জিমাফিক চলুন। এর ফলে শরীর সব রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি হয়ে যায়| মজার কথা হল, এই পদ্ধতি একঘেয়ে লাগবে না। নিজেদের মধ্যে নানা মজার প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। যেমন, কম সময়ের মধ্যে ব্যায়াম শেষ করা।
এ বার দু’টি সোজা ব্যায়াম নিয়ে বলব। সোজা হলেও খুব কাজ দেবে।
স্কোয়াট:
সোজা কথায় বৈঠক। অল্প পা ছড়িয়ে দাঁড়ান। যত ক্ষণ না থাই পায়ের গুলি স্পর্শ করছে তত ক্ষণ আস্তে আস্তে হাঁটু গেড়ে বসুন। মনে রাখবেন, হাঁটু ও গোড়ালি যেন সরলরেখায় থাকে। নিঃশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। এ ভাবে দ্রুত বার বার করুন। তবে অল্প সময়ের জন্য।
পুল-আপস: জিমে হরাইজন্টাল বার ধরে ঝুলে পড়ুন। হাঁটু অল্প বেঁকিয়ে চিবুক বারের উপরে অল্প তুলুন। আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসুন। অল্প সময়ে, দ্রুত করুন।
তবে জিমের পাশাপাশি দৌড়, সাঁতার, রোয়িংয়ের মতো খেলায়ও অংশ নিতে হবে। নজর রাখতে হবে খাদ্য তালিকার দিকেও। শাকসব্জি, চর্বি ছাড়া মাংস, বাদাম, অল্প শর্করা জাতীয় খাদ্য খাবেন। তেল-মশলা বেশি খাবেন না। ভাত, রুটি, আলু, মিষ্টি, বেকারিতে তৈরি জিনিস এড়িয়ে চলাই ভাল।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.