|
|
|
|
তথ্য গোপন, জালিয়াতির মামলা রুজু করে তদন্তে পুলিশ |
ভুয়ো পরচা-কাণ্ডে অভিযুক্ত ১২ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বালুরঘাট |
ভুয়ো পরচা কাণ্ডে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের ১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলো কৃষি দফতর। ব্লক ভূমি রাজস্ব অধিকারিকের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরে বুধবার রাতে সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ মুখোপাধ্যায় কুমারগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্তে নেমেছে। বৃহস্পতিবার বালুরঘাটে পার্থবাবু বলেন, “প্রথম দফায় ২৪ জনের বিরুদ্ধে কিসান ক্রেডিট কার্ড পেতে জমির জাল খতিয়ান দাখিলের অভিযোগ করে তা পরীক্ষার জন্য ভূমি রাজস্ব আধিকারিকের কাছে পাঠানো হয়। বুধবার পর্যন্ত ওই ২৪ জনের মধ্যে ১৩ জনের নথি পরীক্ষা করতে পেরেছেন তিনি। তার মধ্যে ১২ জনেরই জমির পরচা নকল বলে ধরা পড়েছে।” বাকিদের দলিল দফতরের রেকর্ডের সঙ্গে খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছেন ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিক ভাস্কর চক্রবর্তী। গোটা ঘটনাকে ঘিরে উদ্বিগ্ন জেলা কৃষি দফতর থেকে প্রশাসনের কর্তারা। জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি এই ঘটনায় কিসান কার্ডে ঋণদান প্রক্রিয়া ব্যাহত না হয়, তা নিয়েও ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা হবে।” রাজ্যের কৃষি সচিবের নির্দেশে ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তার দফতরে গিয়ে চাষিরা জমির পরচা ও নথি দেখিয়ে সরাসরি ব্যাঙ্ক থেকে কিসান ক্রেডিট কার্ড পাবেন। সরকারি নিয়মে, সহ কৃষি অধিকর্তা আবেদনকারির নথি দেখে প্রত্যায়িত কাগজে অ্যাটেস্টেট করে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে পাঠাবেন। এর পরে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কিসান কার্ড ইস্যু করে চাহিদা মত ঋণ দেবেন। এক্ষেত্রে জমির দলিল বা পরচা ভুয়ো ও নকল হলে তার কোনও ‘দায়’ সহ কৃষি আধিকারিকের থাকবে না বলে জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা প্রণবেশ বেরা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আবেদনপত্রে লেখা রয়েছে জমি সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের সমস্ত দায় আবেদনকারীর।” ভুয়ো দলিলের বিষয়টি সামনে আসায় একাংশ ব্যাঙ্কের তরফে কিসান ক্রেডিট কার্ড বিলি করা নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিন বালুরঘাটে জেলার আটটি ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন কৃষি কর্তারা। সেখানে জেলা জুড়ে চাষিদের কিসান ক্রেডিট কার্ডে কৃষিঋণ বিতরণ কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি ভুয়ো দলিল কাণ্ডকে সামনে রেখে ব্যাঙ্ক, কিসান ক্রেডিট কার্ড বিলি নিয়ে অবস্থান কী নেবে তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। কুশমন্ডি ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা অনুপ সামন্ত অভিযোগ করেন, কাগজপত্র ব্যাঙ্কে সময়মতো পাঠালেও কিসান কার্ড পেতে চাষিদের ঘুরতে হচ্ছে। তপনের সহ অধিকর্তা ধীমান সেনের অভিযোগ, দফতর থেকে নথিপত্র পৌঁছনোর কথা চাষিদের কাছে অস্বীকার করছে ব্যাঙ্ক। এরপর আবেদনের নম্বর দিয়ে পাঠালেও চাষিদের ঘোরানো হচ্ছে। ফের দফতর থেকে রিসিভ কপির কাগজ দিয়ে চাষিদের পাঠালে শেষে আবেদনপত্র প্রাপ্তির কথা স্বীকার করা হচ্ছে। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে জেলায় ১ লক্ষ ৬৪ হাজার চাষিকে কিসান ক্রেডিট কার্ডের আওতায় এনে কৃষিঋণ দেওয়ার সরকারি লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত সবগুলি ব্লক কৃষি দফতর থেকে প্রায় ৩০ হাজার চাষির আবেদন জেলার ১৪ টি ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়েছে। ব্যাঙ্কের তরফে কোনও তথ্য কৃষি দফতরে জানানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা অগ্রণী ব্যাঙ্ক সমূহের প্রাবন্ধিক তন্ময় দাস কলকাতা থেকে আগামী ২৪ মার্চ বালুরঘাটে গিয়ে বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আগামী ২৯ মার্চ বালুরঘাটে সংশ্লিষ্ট ডিস্ট্রিক্ট কনসালটেটিভ কমিটির বৈঠক ডেকেছেন জেলাশাসক। কমিটিতে কৃষি আধিকারিকদের পাশাপাশি প্রকল্প রূপায়ণকারী ব্যাঙ্কগুলির প্রতিনিধিদেরও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। |
|
|
|
|
|