মজুরি বৃদ্ধি-সহ কয়েক দফা দাবিতে আইএনটিইউসি শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনের জেরে বন্ধ হয়ে গেল একটি সিমেন্ট কারখানার উৎপাদন। ঘটনাটি পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নন্দুকা গ্রামের। বৃহস্পতিবার থেকে কারখানার দরজা আটকে শ্রমিকরা বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করেছেন। সমস্যা সমাধানে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনায় বসার আশ্বাস দিয়েছে শ্রম দফতর। কারখানা মালিক সত্যরঞ্জন চৌধুরীর দাবি, “ব্যবসায়িক ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে শ্রমিকদের আন্দোলনে নামিয়ে আমার কারখানার উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে।”
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের বড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের নন্দুকা গ্রামের অদূরে ওই সিমেন্ট কারখানা। কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে প্রায় ১০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই স্থানীয় ও জমিহারা।.এ দিন সকাল থেকে প্রায় ৭৫ জন শ্রমিক কারখানার সামনে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। কারখানায় শ্রমিকদের শুধুমাত্র কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি রয়েছে। ওই সংগঠনের নেতৃত্বেই আন্দোলন শুরু হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেয়নি। সরকারি হারে নূন্যতম মজুরিও দেওয়া হয় না। নেই প্রভিডেন্ড ফান্ডের ব্যবস্থাও। চিকিৎসা ভাতাও দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। |
কারখানার আইএনটিইউসি সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “শ্রমিকদের এখানে ৮০ টাকা থেকে বড়জোর ১৫০ টাকা দৈনিক মজুরিতে খাটানো হচ্ছে। শ্রম আইন লঙ্ঘন করে কাজ করানো হচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে জানিয়েও কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি।”
আইএনটিইউসির ব্যানার, পতাকা নিয়ে কারখানার সামনে অবস্থান শুরু করেছেন শ্রমিকরা। উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নেতারাও। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ চারের অভিযোগ, “ওই সিমেন্ট কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের বহু অভিযোগ রয়েছে। শ্রমিকদের কাছে পুরো বিষয় জেনে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”.তাঁর ব্যাখ্যা, কারখানা বন্ধ করে আন্দোলনের ক্ষেত্রে দলের নীতিগত আপত্তি থাকলেও পরিস্থিতির বিচারে এখানে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কারখানা মালিকের দাবি, “শ্রমিকদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। সরকারি নির্ধারিত হারের থেকে বেশি মজুরি ও অন্য সুবিধা দেওয়া হয়।” তাঁর অভিযোগ, “আমাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আন্দোলন করে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত করার চেষ্টা হচ্ছে।” রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক আবিদ হোসেন বলেন, “ওই সিমেন্ট কারখানার সমস্যা মেটানোর জন্য শ্রম দফতরকে বলব।” রঘুনাথপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি শ্রম মহাধ্যক্ষ প্রসেনজিৎ কুণ্ডু বলেন, “কারখানাটির ঘটনা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট লেবার ইন্সপেক্টারের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। পরে দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে শীঘ্রই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।” |