গ্রীষ্মের মুখে পানীয় জলের কষ্ট শুরু হয়ে গিয়েছিল আগেই। এ বার মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম ব্লকে ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে যাওয়ায় ভূর্গভস্থ জল থেকে সামান্য সেচের যে উপায়টুকু খুঁজে পেয়েছিলেন চাষিরা, দিন কয়েক ধরে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে তা-ও। ফলে, সেচের অভাবে ওই এলাকায় প্রায় ৩০০ বিঘা ধান নষ্ট হওয়ার মুখে।
ওই এলাকায় সেচ বলতে ভূগর্ভস্থ জল। পাম্পের সাহায্যে তা ছড়িয়ে পরে মাঠে। সেচ না মেলায় প্রথম গরমে মাঠ শুকিয়ে কাঠ। ফলে চাষ শিকেয়। তপসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের সুকির তাই প্রাক-গ্রীষ্মেই কপাল পুড়েছে। ওই গ্রামে পানীয় জল সরবরাহের জন্য খাতায় কলমে ১৭টি সরকারি নলকূপ থাকলেও আপাতত চালু রয়েছে সাকুল্যে চারটি। বাকিগুলি বিকল। সেচ ও পানীয় জল সংকটের কথা মেনে নিয়েছেন ওই ব্লকের বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি। কিন্তু বিদ্যুত বিভাগের স্টেশন সুপার ছাড়া অন্য দুই প্রশাসনিক কর্তা সংকট মোচনের কোনও দাওয়াই বাতালাতে পারেননি।
স্থানীয় বিডিও সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, “কেবল সুকিই নয়, গোটা ব্লক জুড়েই গরম পড়ার আগেই পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। গোটা ব্লকে আপাতত ৩০০টি নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।” কিন্তু সেই নলকূপ মেরামত করা, বা নতুন নলকূপ বসানো হচ্ছে না কেন? নবগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি মির বাদাম আলি বলেন, “যতগুলি পারা গিয়েছে বসানো হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন অনেক বেশি। টাকা কোথায়?”
এলাকায় ৯টি নলকূপ বসানো হয়েছে বিগত বিআরডিএফ (ব্যাকওয়ার্ড রিজিওন ডেভালপমেন্ট ফান্ড) থেকে। তার পর বর্তমান আর্থিক বছরে নবগ্রামের জন্য ওই তহবিল থেকে কোনও টাকা পাওয়া যায়নি। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে অকোজে হয়ে পড়ে থাকা নলকূপ সংস্কার করা সম্ভব হয়নি বলে পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে। তার ফলে সুকির মতো নবগ্রামের অনেক গ্রামের মানুষকেই পুকুরের জলের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সুকি গ্রামের নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েত সমিতির ও গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য। নিখিলবাবু বলেন, “ওই গ্রামের মাত্র কয়েকটি সম্পন্ন পরিবারে নিজেদের বসানো পানীয় জলের নলকূপ রয়েছে। ২১০০ জনসংখ্যার মধ্যে ১৭৪ জন আদিবাসী, ৯২০ জন তপসিলি জাতির। অর্থাৎ ওই গ্রামের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই তপসিলি জাতি ও উপজাতির। দীর্ঘ দিন ধরে গ্রামের সরকারি ১৭টি নলকূপের মধ্যে ১৩টিই অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় পানীয় জলের উৎস বলতে কেবল এঁদো পুকুর।” ওই গ্রামের নরেন হাঁসদা বলেন, “পুকুরের ওই ঘোলা জলও গরম পড়ার আগেই কমতে শুরু করেছে। জল শেষ হয়ে গেলে কী হবে কে জানে?” ওই গ্রামে ও লাগোয়া মাঠে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য রয়েছে দু’টি ট্রান্সফর্মার। একটি ৬৩ কেভির ও অন্যটি বিপিএল পরিবারের জন্য ১০ কেভির। দু’টি ট্রান্সফর্মারই দিন দশেক আগে পুড়ে গিয়েছে। ৬৩ কেভির ট্রান্সফর্মার থেকে গ্রামের পাশাপাশি লাগোয়া ৩০০ বিঘা বোরোধানের চাষে জলসেচ দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ফলে অন্ধকারে গোটা সুকি গ্রাম ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি দিন দশেক থেকে ওই বোরো ধানের চাষেও জলসেচ দেওয়া যায়নি। প্রাথমিক শিক্ষক রবি মুর্মু বলেন, “বৈধ ও অবৈধ ভাবে ক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুত সরবরাহ করায় ট্রান্সফরমার দু’টি পুড়ে গিয়েছে। তার ফলে জলসেচ দিতে না পারায় বোরোধান নষ্ট হতে বসেছে।” বিদ্যুৎ বিভাগের নবগ্রাম ব্লকের স্টেশন ম্যানেজার প্রেমানন্দ সেনগুপ্ত বলেন, “পুড়ে যাওয়া ৬৩ কেভির ট্রান্সফর্মার বদলে করতে হবে ১০০ কেভির এবং বিপিএলের পুড়ে যাওয়া ১০ কেভির ট্রান্সফর্মার পাল্টে দেওয়া হবে ২৫ কেভির। দু’-এক দিনের মধ্যেওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।” |