সাকিবদের স্বপ্নভঙ্গ করে রুদ্ধশ্বাস জয় পাকিস্তানের
তিরাশির পঁচিশে জুন নয়। দু’হাজার এগারোর দোসরা এপ্রিল নয়। বাংলাদেশের কাপ-অভিযান শেষ হল শোকস্তব্ধ রাত দিয়ে। সৌরভের টিমের দু’হাজার তিন বিশ্বকাপের ওয়ান্ডারার্স ফাইনালের মতো। অথবা আজহারের টিমের ইডেনে ছিয়ানব্বই বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল হারার মতো। যেটা হতে পারত স্বপ্নের রাত, তা-ই পাল্টে গেল স্বপ্নভঙ্গের রাতে। একেবারে শেষ বলে গিয়ে উৎসবের রং মুছে গিয়ে পড়ে থাকল বিষণ্ণতার সুর।
বিশ্বকাপ আর এশিয়া কাপ কোনও ভাবেই এক হতে পারে না। কিন্তু গত কাল রাত থেকে ঢাকা বা মীরপুরের রাস্তায় যে রকম উৎসবের ঢল নেমেছিল তাতে ঐতিহ্য আর সম্মানে দু’টো কাপের যা-ই তফাত থাকুক, আবহে কোনও পার্থক্য ছিল না। আর সেই আবহ অটূট ছিল বৃহস্পতিবার মীরপুরের মাঠে রুদ্ধশ্বাস শেষ বল পর্যন্ত। আইজাজ চিমার শেষ বলে বাংলাদেশের ইতিহাস তৈরির জন্য দরকার ছিল ৪ রান। শাহদাত হোসেন পায়ে লাগিয়ে কোনও রকমে নিতে পারলেন ১। হতাশায় কেউ হাতের গ্লাস ছুড়ে ফেললেন। কেউ কেঁদে ফেললেন। কেউ বিহ্বল হয়ে বাইশ গজের দিকে তাকিয়ে। এত কাছে এসে স্বপ্নভঙ্গ হতে পারে, কারও যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। এর আগে শেষ বল করার জন্য চিমা যখন দৌড় শুরু করবেন, টিভি-র পর্দায় শেখ হাসিনাকে দেখা গেল। গোটা গ্যালারির মতো তিনিও তখন উদ্বেগে গালে হাত দিয়ে বসা।
মীরপুরে এশিয়া কাপ নিয়ে মিসবারা। বৃহস্পতিবার।-রয়টার্স
একটু আগে প্রেসবক্সে এমন আলোচনাও হচ্ছিল যে, নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার পর প্রধানমন্ত্রী সবাইকে দামি গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। এ বার হয়তো আরও বিলাসবহুল কোনও উপহার। দুপুরে ম্যাচ শুরুর আগে দেখা গেল আকাশে চক্কর দিচ্ছে মিগ। শাঁ শাঁ শব্দে কানে তালা লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা। স্থানীয় এক জন বললেন, মাঝেমধ্যেই যুদ্ধবিমানের মহড়া চলে। এশিয়া কাপ চলাকালীন অবশ্য দু’দিন দেখা গিয়েছে মীরপুরের আকাশে যুদ্ধবিমানের মহড়া। যে দিন ভারত বনাম পাকিস্তান হচ্ছিল। আর এ দিন। একটা যুদ্ধের বাতাবরণ তখন থেকেই যেন তৈরি হয়ে যায়।
ফটো-ফিনিশের মতো সেই লড়াইয়ের নিষ্পত্তি হল শেষ বলে গিয়ে। মীরপুরের গ্যালারিকে নিস্তব্ধ করে দিয়ে প্রায় হার্ট অ্যাটাক করিয়ে দেওয়া শেষ ওভারে ২ রানে জিতে এশিয়া কাপ নিয়ে গেল পাকিস্তান। পেন্ডুলামের মতো দুলে চলল ম্যাচের ভাগ্য। উমর গুলকে পর-পর তিনটে চার মেরে মাশরাফি মর্তূজা আরও জমিয়ে দিলেন ম্যাচ। কিন্তু তামিম ইকবাল, সাকিব-আল-হাসানদের দাপটের পরেও শেষরক্ষা করতে পারল না বাংলাদেশ।
একটা দল ইতিহাস সৃষ্টি করার জন্য ফাইনাল খেলছিল। আর একটা দল খেলছিল তাদের ক্রিকেট ইতিহাস ঠেকিয়ে রাখার জন্য। লাহৌরের জঙ্গি হানার পর থেকে শাহিদ আফ্রিদি-রা কার্যত ক্রিকেট পৃথিবী থেকে ব্রাত্য। নিজেদের দেশে আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলার অধিকার নেই। দুবাই এখন তাঁদের ‘হোম’। ভারত-পাক ম্যাচ হওয়া দূরে থাক, কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ পর্যন্ত বলে দিয়েছে তারা পাকিস্তান সফর করবে না। আইপিএল নামক সোনার রাজহাঁস থেকেও তাঁরা বঞ্চিত। এশিয়া কাপ-জাতীয় টুর্নামেন্ট খেলতে আসা মানে তাই আফ্রিদিদের কাছে নিছকই ক্রিকেটীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার জায়গা নয়। আরও বড় মঞ্চ। বহির্বিশ্বে বার্তা পাঠানো যে, পাকিস্তান ক্রিকেট মানে শুধু ম্যাচ গড়াপেটার কাহিনি, অন্তর্কলহ আর প্রশাসনিক অপদার্থতা নয়। সলমন বাট বা মহম্মদ আসিফের কুকীর্তি নয়। পাক ক্রিকেট মানে ট্রফি জেতার রাতও। আইজাজ চিমা নামক তারুণ্যের স্ফূরণও। এ দিন অদ্ভুত রকমের এককাট্টা দেখাল তাঁদের। মিসবা-উল-হক টিমের ঘোষিত অধিনায়ক। কিন্তু মাঠে দেখে কে বলবে তিনি একা অধিনায়ক? আফ্রিদি এসে বোলারদের তাতাচ্ছেন। ফিল্ডিং ঠিক করে দিচ্ছেন। ইউনিস খান দৌড়ে এসে পরামর্শ দিচ্ছেন। পাক ক্রিকেটাররাও তো বুঝতে পারছিলেন, এশিয়া কাপ ফাইনাল বাংলাদেশ জিতলে শুধু বাংলাদেশের জয় হিসেবে দেখা হবে না। বরং ফের উত্তাল ঢেউ উঠতে পারে যে, পাকিস্তান এশিয়া কাপ ফাইনাল হারল কী করে? ফের সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়ে যেতে পারে তাঁদের ঘিরে।
বাংলাদেশের শেষ উইকেট নিয়ে আফ্রিদিদের উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি
অথচ ম্যাচের চল্লিশ ওভার নাগাদও কিন্তু মনে হচ্ছিল দুই বন্ধুর কাহিনিই এশিয়া কাপ ফাইনালের রাতের সেরা কাহিনি হয়ে থাকবে। সাকিব-আল-হাসান আর তামিম ইকবাল। মীরপুরে একই অ্যাপার্টমেন্টে দু’জনে থাকেন। অথচ আবেগের বহিঃপ্রকাশে দু’জনে কত আলাদা। সাকিব সচরাচর প্রতিক্রিয়া দেখান না। তামিম বরাবর আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। এ দিন হাফসেঞ্চুরি করে প্যাভিলিয়নের দিকে তাকিয়ে আঙুল গুনে গুনে চার বার দেখালেন। মানে চারটে ম্যাচে চারটে পঞ্চাশ। ওখানেই তো ভিআইপি বক্সে কোথাও বসে আছেন বাংলাদেশের বোর্ড প্রেসিডেন্ট। নির্বাচকেরা এশিয়া কাপের টিমে রাখার পরেও যিনি তামিমের নাম কেটে দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বাঁ হাতি ওপেনার আবার টিমে ঢোকেন। উপেক্ষার জবাব তিনি ব্যাট হাতে উগরে দিয়ে গেলেন এশিয়া কাপে।
কে জানত ব্যক্তিগত লক্ষ্য জিতেও তাঁর দল থেমে যাবে ইতিহাস সৃষ্টির অনতিদূরে! কে জানত রাতে লেজার শো হবে। আতসবাজি পুড়বে। পুরস্কার-বিতরণী হবে। কিন্তু স্বপ্নপূরণের ঝলমলে রাত থাকবে না। উৎসবের রোশনাই থাকবে না। বাজবে স্বপ্নভঙ্গের করুণ সুর!

সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান
৫০ ওভারে ২৩৬-৯
সরফরাজ ন:আ:৪৬, হাফিজ ৪০, আফ্রিদি ৩২, সাকিব ২-৩৯, রজ্জাক ২-২৬

বাংলাদেশ
৫০ ওভারে ২৩৪-৮
তামিম ৬০, সাকিব ৬৮, চিমা ৩-৪৬, আজমল ২-৪০




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.