ভূপালপুর রাজবাড়ি
উত্তর দিনাজপুর জেলায় ভূপালপুর গ্রামে ৩৪ নং জাতীয় সড়কের পাশে অবস্থিত ভূপালপুর রাজবাড়ি। পাশে দিয়ে বইছে লুপ্তপ্রায় বীনা নদী। এক সময় এই নদী পথেই দূর-দূরান্তের বহু মানুষ এই রাজবাড়িতে আসতেন। এই সুবিশাল ঐতিহ্যবাহী দ্বিতল বাড়িটি মনোরম কারুকার্যখচিত শিল্প নিদর্শনে ভরা। আর সুরম্য অট্টালিকার প্রথম তলাটি ব্রিটিশ সরকার উনিশ শতকের গোড়ার দিকে এবং দ্বিতীয় তলাটি জমিদার ভূপালচন্দ্র রায়চৌধুরী তৃতীয় দশকে গড়ে তোলেন। উপরতলা ও নীচতলা মিলিয়ে বাড়িটিতে মোট চল্লিশটি ঘর। বড় বড় দরজা-জানলা শাল-সেগুনের। জমিদারি আমলে সব ঘরই ব্যবহার করা হত। এ বাড়ির পূজা-পার্বণে যোগ দিতেন হিন্দু-মুসলমান নির্বিশিষে সকল প্রজা। ভূপালচন্দ্র রায়চৌধুরী প্রজাবৎসল জমিদার ছিলেন। খোঁজখবর করতেন প্রজাদের। প্রতি বৃহস্পতিবার দিনাজপুর কোর্টে জেলাশাসকের পদ অলঙ্কৃত করতেন।
নিয়মিত ‘প্রবাসি ভারতবর্ষ’ পড়তেন। এক কথায় তিনি অত্যন্ত দরদি বিদ্যোৎসাহী ও ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। তাই ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ‘রাজা’ উপাধি গ্রহণ করেননি। তবুও স্থানীয় অঞ্চলের মানুষজনের কাছে তিনি রাজা বলেই পরিচিত ছিল। আজও এই বাড়ি রাজবাড়ি বলে অভিহিত। রাজবাড়ির সামনের একটি সুসজ্জিত জলাধারের জলে এক সময় গোটা রাজবাড়ির ছবি ফুটে উঠত। সেই সঙ্গে মূল প্রবেশ পথের দু’ধারে সুশোভিত বৃক্ষরাজি রাজবাড়ির শোভাকে বাড়িয়ে তুলত।

স্বাধীনতা সংগ্রামী
নিশীথনাথ কুণ্ডুর পৈতৃক নিবাস ছিল অবিভক্ত বাংলার দিনাজপুর জেলার হরিপুর গ্রামে। জন্ম ১৮৯৩-এর ১১ অক্টোবর। বাবা বিপিনবিহারী কুণ্ডু। মা হরিমতি কুণ্ডু। ১৯১১-এ দিনাজপুর স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এর পর কলকাতায় এসে মেট্রোপলিটন কলেজ থেকে আইএসসি এবং স্কটিশ চার্চ ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। অসাধারণ প্রতিভাবান এই ছাত্র এক সঙ্গে এমএসসি ও ল’ পড়তে শুরু করলেও তাঁর এমএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। শৈশবে পিতার সঙ্গে সর্বভারতীয় ও বঙ্গীয় সম্মেলনগুলোতে যেতেন। তখন থেকেই তাঁর মনে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয়। ১৯২০-২১’এ তিনি দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস কমিটির সদস্য হন। ওকালতি না করে গাঁধীজির অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। খদ্দর পরতেন ও গাঁধীজির টুপি মাথায় দিতেন। গাঁধীজির দর্শন মনোযোগ দিয়ে পড়তেন। এ জন্য কেউ কেউ তাঁকে ‘ছোটে গাঁধী’ বলে ডাকতেন। বিদেশি দ্রব্য বর্জন ও স্বদেশি দ্রব্য গ্রহণের বার্তা তিনি গ্রামবাসীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। কোনও জায়গায় বিট্রিশ শাসকদের অত্যাচারের খবর পেলেই ছুটে যেতেন। বিপ্লবীদের মামলা পরিচালনা করতেন বিনা পারিশ্রমিকে। ১৯২৫-এ গাঁধীজি দিনাজপুর শহরে এলে তাঁর সঙ্গে নিশীথরঞ্জনের সাক্ষাৎ ঘটে। দিনাজপুর থেকে সুভাষচন্দ্র বসুর সহযোদ্ধা লীলা রায়কে পালিয়ে যাবার পরিকল্পনায় নিশীথরঞ্জন সাহায্য করেন। কিন্তু সে পরিকল্পনা সফল হয় না। তিনি ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আলিপুর ও দমদম সেন্ট্রাল জেলে বন্দি হন। অগস্ট আন্দোলনের সময় মেদিনীপুর জেল থেকে ছাড়া পান। ১৯৬৭-তে রায়গঞ্জ বিধানসভা থেকে নির্বাচিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ত্রাণ ও সমবায় মন্ত্রী নিযুক্ত হন।

দেবগ্রাম
পুরাতত্ত্বের গুপ্তধন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। জেলার কুমারগঞ্জ থানার একটি গ্রাম দেবগ্রাম। দেবগ্রাম কথাটির অর্থ দেবতার গ্রাম। গ্রামটি পুরাতত্ত্বের পীঠস্থান। এখানে রয়েছে পালযুগের একটি শিবমন্দির। মন্দিরটি ভগ্নপ্রায়। টেরাকোটার সাজে সজ্জিত মন্দিরটি বহু বৈশিষ্ট্য যুক্ত। ভেতরে রয়েছে শিবলিঙ্গ। মন্দিরের পাশে রয়েছে শীতলা ও বুড়িকালীর মন্দিরের ধ্বংসস্তূপ। প্রাচীন কালে যে এখানে একটি বড় জনপদ ছিল, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
এক সময় দিনাজপুরের জমিদার এই মন্দিরের সেবায়েত ছিলেন। পরে পতিরামের জমিদার গোবিন্দ ঘোষ মন্দিরের সেবায়েত নিযুক্ত হন। মন্দিরের পুরোহিত, ঢাকবাদক, ধোপা প্রত্যেকের নামে জমি ছিল। সে সব আজ বেদখল হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে বাণ রাজার সময়ে এই মন্দির তৈরি হয়েছিল। মন্দিরের পাশে উপেন সাধু নামের এক সাধুর বাড়িতে ১৩ টি গৌরীপট রয়েছে।
বাড়ির পেছনে গর্ত খুঁড়ে সে সব পাওয়া যায়। মন্দিরের মূল বিগ্রহ অনেক দিন আগেই চুরি হয়ে গেছে। একটি দারু নির্মিত মুখোশ ছিল। প্রতি বছর পুজোর সময় মুখোশ পরে চৈত্রমাসে নাচ হত। কিন্তু গত চার-পাঁচ বছর আগে সেই মুখোশটিও চুরি হয়ে গেছে। দেবগ্রামের মন্দিরের পাশে পুকুর পাড়ে এখনও প্রাচীন ইট বাঁধানো সিঁড়ি দেখা যায়। পাশ্ববর্তী অঞ্চলে রয়েছে একটি প্রাচীন বট গাছ। গাছটির বয়স যে কত হতে পারে, কেউ বলতে পারে না। অসংখ্য ঝুড়ি নেমে যাওয়ায় মূল বটগাছটিকে আর চিহ্নিত করা যায় না। এই গ্রামের ধাধোল পাড়াতে একটি মন্দির আছে। শোনা যায়, দেবী চৌধুরানি এই মন্দিরে পুজো দিয়ে ময়ূরপঙ্খী নৌকো নিয়ে ডাকাতির উদ্দেশ্যে রওনা দিতেন। পুরাতাত্ত্বিক খনন করলে এখান থেকে আরও অনেক অজানা তথ্যের সন্ধান মিলবে।

প্রকৃতির কোলে
অজানা সৌন্দর্য দর্শন। আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে সকাল ছ’টায় ইন্টারসিটি। কাচের জানলা দিয়ে সবুজের সমারোহ। চা-বাগান ও জঙ্গল। কোথাও পাহাড়ি নদী বিপুল উৎসাহ বইছে। ট্রেন ছুটবে ডুয়াসের্র লাবণ্য অতিক্রম করে। অপরূপ সাজে দাঁড়িয়ে স্টেশনগুলো। পশুপাখিরা আপন ছন্দে ঘুরে বেড়ায়। গান গায়। খড় মাথায় বালিকা। চা-পাতা তুলতে ব্যস্ত মহিলা। কাঠের বাড়ি। ওয়াচ টাওয়ার। কপাল ভাল থাকলে মিলতে পারে টিন বাজিয়ে হাতি তাড়ানো। ডুয়ার্সের রূপ-লাবণ্য ও জনগোষ্ঠীর বাসভূমি। সব কিছুই অল্প করে মিলে যাবে ইন্টার সিটি ট্রেনে।


উত্তরের কড়চা
এ বি পি প্রাঃ লিমিটেড
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.