ঘাটতি নিয়ে চিন্তিত অর্থ দফতর
খরচ বেড়েছে, আয়ের লক্ষ্যেও পিছিয়ে রাজ্য
রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেছিলেন, চলতি অর্থবর্ষে রাজস্ব আদায় ৩০ শতাংশ বাড়াবেন। বাজেটে টাকার অঙ্কে সেই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে অর্থ দফতর বলছে, এখনও পর্যন্ত ২৬ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা রাজ্যের কোষাগারে ঢুকেছে।
অর্থাৎ, ওই লক্ষ্যপূরণে চলতি আর্থিক বছরের শেষ মাস, মার্চে রাজস্ব আদায় করতে হবে ১৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা। এক কথায় যা কার্যত অসম্ভব বলে মনে করছেন অর্থ দফতরের একাধিক কর্তা। ওই দফতরের অফিসারদের একাংশ অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। তাঁদের দাবি, আর্থিক বছর যত শেষের দিকে এগোয়, ততই রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়ে।
এটা ঠিক যে, গত আর্থিক বছরের তুলনায় এ বছর রাজ্যের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু পাশাপাশি অর্থ দফতরের হিসেব এ-ও বলছে, খরচে সে ভাবে লাগাম পরানো যায়নি। উল্টে অনেক বেশি খরচ করেছে নতুন সরকার। ওই দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত আর্থিক বছরে এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যের কোষাগারে যেখানে রাজস্ব বাবদ ২৪ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ঢুকেছে, সেখানে চলতি বছরের ওই সময়কালে সরকারের আয় হয়েছে ২৬ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের চেয়ে বর্তমান অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এ পর্যন্ত ২ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা বেশি আদায় করেছেন।
কিন্তু রাজ্য সরকারের খরচ কমানের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছেন অমিতবাবু। অর্থ দফতরের হিসেব বলছে, গত আর্থিক বছরে এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ৫০ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। এই বছরে ওই একই সময়ে খরচের পরিমাণ ৫৫ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা।
আয়-ব্যয়ের ব্যবধান যে ভাবে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে শঙ্কিত অর্থ দফতরের অফিসারেরা। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, প্রতি মাসে বেতন, স্বাস্থ্যবিমা ও পেনশন বাবদ কিছু আবশ্যিক খরচ থাকে। তার উপরে ঋ
ণের সুদ বাবদ ১৫০০ কোটি টাকা মেটাতে হয়। সব মিলিয়ে এই খাতে খরচের পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেন, “ডিসেম্বরে ১০ শতাংশ বর্ধিত হারে মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা হওয়ায় প্রতি মাসে আরও ২৫০ কোটি টাকার বোঝা চেপেছে সরকারের ঘাড়ে। এখনই বাড়তি খরচ কমিয়ে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে না-পারলে আয়-ব্যয়ের ঘাটতি বেড়েই চলবে।”
চলতি বছরে সরকারের খরচে যে রাশ টানা যায়নি, তা মেনে নিয়েছেন অর্থ দফতরের একাধিক অফিসার। তাঁদের বক্তব্য, গত আর্থিক বছরের শেষ ছ’মাস কখনও মৌখিক ভাবে, কখনও বা লিখিত নির্দেশ জারি করে বহু ক্ষেত্রে বকেয়া মেটানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল অর্থ দফতর। তাতে খরচ বেশ কিছুটা কমানো গিয়েছিল। এ বার তেমন কিছু হয়নি। তার উপরে বিগত সরকারের বেশ কিছু বকেয়া চলতি আর্থিক বছরে শোধ করা হয়েছে এবং তাতেই ব্যয় বেড়ে গিয়েছে বলে অর্থ দফতরের একটি সূত্রের দাবি। যদিও অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেন, “আগের সরকারের দেনা মেটাতে প্রতি বছরে ২২ হাজার কোটি টাকা দিতে হচ্ছে বলে মন্ত্রীরা জোর গলায় ঘোষণা করছেন। কিন্তু নানা অনুষ্ঠানে আড়ম্বর, অফিস-বাড়ি সাজানো, গাড়ি কেনা বা তেল পোড়ানো দেখে বোঝার উপায় নেই, অর্থকষ্টে ভুগছে রাজ্য সরকার।”
এই অবস্থায় কী ভাবে খরচ কমিয়ে আয় বাড়ানো যায় তা নিয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস সার্ভিস অফিসার্স অ্যাসেসিয়েশন লিখিত ভাবে বেশ কিছু প্রস্তাব পেশ করেছে মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কাছে। সংগঠনের একাধিক সদস্যের বক্তব্য, ভাল করদাতাদের অর্থমন্ত্রী পুরস্কার দিতে চেয়েছেন। অসাধুদের শাস্তি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু ওই যাঁরা কর আদায় করেন তাঁদের দায়বদ্ধতার প্রশ্নে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া কথা বলা হয়নি। অডিট অফিসারদের মতে, এলাকাভিত্তিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করতে হবে। সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে অষ্টম শ্রেণির পর থেকে দারিদ্রসীমার উপরে বসবসকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যূনতম ফি নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে স্মারকলিপিতে। তাঁদের যুক্তি, মাসে এক-দেড় হাজার টাকা খরচ করে যদি প্রাইভেট টিউটর রাখা যায়, তা হলে স্কুলে ফি নিতে আপত্তি কোথায়।
আয় বাড়ানোর পাশাপাশি নানা খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন অডিট অফিসারেরা। তাঁদের বক্তব্য, কলকাতা ও হাওড়া পুরসভাতে শুধু বিদ্যুতের বিল মেটাতেই বছরে ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। পুরসভাগুলিকে বেতন ও পেনশন বাবদ দিতে হয় প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। বিভিন্ন সময়ে নানা ভাবে তাদের আয় ও সম্পদ বাড়ানোর কথা বলা হলেও খুব কম পুরসভাই সে কথা মেনেছে। পরিবহণ সংস্থাগুলিকে যদি ‘নিজের পায়ে দাঁড়ানোর’ পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে তা হলে পুরসভাগুলিকেই বা বলা যাবে না কেন, এই প্রশ্ন তুলেছেন অডিট অফিসারদের একাংশ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.