মানতে নারাজ মমতা-ঘনিষ্ঠরা
ভাড়া কমলে বাংলার প্রকল্পে আঁচ পড়ার আশঙ্কা
যে যাত্রিভাড়া বাড়ানো নিয়ে সর্বভারতীয় রাজনীতি উত্তাল, যে কারণে শেষমেশ গদি হারালেন দীনেশ ত্রিবেদী, সেই টিকিটের দাম একই রাখলে লাভ হবে কি বাংলার ‘মা মাটি মানুষ’-এর?
রেল মন্ত্রকের উত্তর হল, না। বরং আখেরে ক্ষতি হবে বাংলারই!
জনমোহিনী রাজনীতির পথে হেঁটে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব থেকে পিছু হঠার যে দাবি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করছেন, তাতে আম-রেলযাত্রীর বাড়তি গাঁটের কড়ি হয়-তো খসবে না, কিন্তু আরও পিছিয়ে পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গ! এবং তার রেল পরিকাঠামো! এমনটাই মত, রেলভবনের পদস্থ সব কর্তাদের। তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন, রাজ্যের রেল পরিকাঠামো দুর্বল হলে, কতটা সুবিধা হবে আম-আদমির?
বিষয়টি আজ সবিস্তার ব্যাখ্যা করেছেন রেল বোর্ডের কর্তারা। বাজেটে সব শ্রেণিতে ভাড়া বাড়ানোর যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাতে রেলের ঘরে অতিরিক্ত সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজার কোটি আসবে বলে ধরেছিল রেল মন্ত্রক। পাশাপাশি, চলতি বাজেটে পরিকল্পনা খাতে রেলের বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৬০ হাজার ১০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ যাত্রিভাড়া থেকে প্রায় ১০ শতাংশ অর্থ ওই খাতে আসার কথা। দীনেশের ইস্তফার পরে এখন বাজেটে প্রস্তাবিত বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে নেওয়া সময়ের অপেক্ষা। ফলে ভাড়া থেকে বাড়তি ওই টাকা রেলের ঘরে যে আসছে না তা ধরেই নিয়েছে রেল মন্ত্রক। রেল কর্তাদের মতে, এমনিতেই ভাঁড়ারে টান। বর্ধিত ভাড়া কমিয়ে দিলে আয় কমবে আরও।
দীনেশ তাঁর বাজেটে মেট্রো-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ করেছিলেন ৬ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। রেল মন্ত্রকের
দীনেশের বাজেটে

রাজ্যের জন্য বরাদ্দ
কাজ টাকা*
মেট্রো প্রকল্প ৪১০৫
ডবল লাইন ১০৯১
নতুন লাইন ৬০২
গেজ পরিবর্তন ১৭৫
বিদ্যুদয়ন ৯৫
মোট ৬০৬৮
* (কোটিতে)
এক কর্তার বক্তব্য, “ভাড়া বাড়িয়ে যে টাকা আসত, সেই টাকার একটি বড় অংশ বাংলার প্রকল্পগুলির কাজে খরচ করা হবে এমন অঙ্ক মাথায় রেখেই বাজেট বানানো হয়েছিল। প্রস্তাবিত আয় কমে গেলে স্বভাবতই রেশনিং করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রেলের সমস্ত প্রকল্পেই বরাদ্দ কমবে। পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পগুলিরও যে সেই অনুপাতে আর্থিক সাহায্য কমবে তা বলাই বাহুল্য। বরাদ্দ কমলে ব্যাহত হবে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ।”প্রসঙ্গত, রাজ্যের ভোটের মুখে মমতা যতটা করেছিলেন, ততটা না হলেও রাজ্যের জন্য যতটা সম্ভব দরাজহস্ত হওয়ারই চেষ্টা করেছিলেন দীনেশ। বাজেট নথি বলছে, রাজ্যের জন্য বরাদ্দের সব চেয়ে বড় অংশটাই পাবে রাজ্যের চালু মেট্রো প্রকল্পগুলি। ওই খাতে ৪ হাজার ১০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন তিনি। এর মধ্যে দমদম থেকে নোয়াপাড়া হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণে রাখা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। জোকা থেকে মাঝেরহাট হয়ে বিবাদী বাগ পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণে বরাদ্দের পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকা। নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দর, বারাসত এবং বিমানবন্দর থেকে রাজারহাট হয়ে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত মেট্রো রেল সম্প্রসারণে ১ হাজার কোটি ও বরাহনগর থেকে দক্ষিণেশ্বর ও ব্যারাকপুরের মেট্রো সম্প্রসারণে বরাদ্দ করা হয়েছে ৬০২ কোটি টাকা। মেট্রো ছাড়াও রেলের পরিকাঠামো উন্নয়নে যেমন, ডাবলিং, গেজ পরিবর্তন, নতুন লাইন, বিদ্যুদয়নের কাজে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি অর্থই পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
কিন্তু দীনেশ ইস্তফা দেওয়ায় রেলমন্ত্রীর পদে আসতে চলেছেন মুকুল রায়। গত কালই পরবর্তী রেলমন্ত্রী হিসাবে তাঁর নাম জানিয়েছেন খোদ মমতা। ফলে দেওয়াল-লিখন খুবই স্পষ্ট। তৃণমূল থেকে যে-ই রেলমন্ত্রী হোন না কেন, সংসদে বাজেট পাশ করানোর আগে তিনি যে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব ফিরিয়ে নেবেন, সেটা এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। ফলে যাত্রিভাড়া থেকে আগামী এক বছরে যে টাকা রেলের ঘরে আসার কথা ছিল, তা আসবে না। কিন্তু বাজেটের ঘাটতি মেটানোর টাকা কোথা থেকে আসবে, সেই অঙ্ক মেলাতে আগামিকাল থেকেই ঝাঁপাতে হবে রেল মন্ত্রককে।
যদিও মমতা-ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, রাজ্যের জন্য অর্থ কমবে, এই যুক্তি ঠিক নয়। বিশেষ করে মেট্রো প্রকল্পগুলির জন্য তো নয়ই। কেন-না মমতা রাজ্যের মেট্রো প্রকল্পগুলি সময়ে শেষ করার বিষয়ে আন্তরিক। তাই তৃণমূলের যে সাংসদই আগামী দিনে রেলমন্ত্রী হোক না কেন, তাঁর পক্ষে মেট্রোর জন্য বরাদ্দ করা অর্থ কমানো প্রায় অসম্ভব। মন্ত্রকের আর্থিক স্বাস্থ্য যতই খারাপ হোক না কেন, মেট্রো প্রকল্পের অর্থ কমিয়ে দলনেত্রীর রোষের মুখে পড়তে চাইবেন না নতুন রেলমন্ত্রী।
মন্ত্রকের বক্তব্য, কোষাগার বাড়ন্ত বলে মেট্রো তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পগুলির স্বার্থে অন্য কোনও খাত থেকে অর্থ কমাতে হবে। সে ক্ষেত্রে কোন ক্ষেত্রের উপর কোপ পড়বে তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রেল মন্ত্রক। এ বারের বাজেটে যাত্রী সুরক্ষা ও যাত্রী পরিষেবার উন্নতিতে বিশেষ জোর দিয়েছিলেন দীনেশ। সার্বিক ভাবে রেলের সুরক্ষার উন্নতিতে প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। যাত্রী পরিষেবা বাড়ানোর লক্ষ্যেও ছিল একাধিক পদক্ষেপের প্রস্তাব।
রেল মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, টানাটানির সংসারে তাই রাজ্যের প্রকল্পগুলির স্বার্থ দেখতে হলে স্বাভাবিক ভাবেই বরাদ্দ কমবে অন্য খাতে। আশঙ্কা, বিশেষ করে সার্বিক পরিকাঠামোগত উন্নয়ন মার খাবে এই সিদ্ধান্তে। কিংবা কোপ পড়তে পারে রাজ্যের বরাদ্দে। শেষ পর্যন্ত কোন খাতে টাকা কমানো যাবে, তা খুঁজে বার করার দায়িত্ব এ বার নতুন রেলমন্ত্রীর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.