রাজ্যসভায় মান্নানকে প্রার্থী করে আসরে কংগ্রেস
বশেষে রাজ্যসভা ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। দলের প্রবীণ নেতা এবং একাধিক বারের বিধায়ক আব্দুল মান্নানকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। রবিবার রাতে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ এই কথা জানিয়েছেন। মান্নান এ ব্যাপারে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “আমাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এআইসিসি থেকে কিছু জানানো হয়নি। জানালে বলতে পারব।” তবে কংগ্রেস সূত্রের খবর, আজ, সোমবার মান্নান তাঁর মনোনয়ন জমা দেবেন।
কংগ্রেসের প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গেই এটা স্পষ্ট হয়ে গেল, পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার পাঁচটি আসনের জন্য ভোট হচ্ছেই। যদি না কেউ শেষ মুহূর্তে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করেন। একই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট হয়ে গেল যে, রাজ্যের দুই জোট শরিক কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যেই ভোটের লড়াই সীমাবদ্ধ থাকবে। কারণ বামফ্রন্টের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত।
বস্তুত, রাজ্যসভায় প্রার্থী দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে গত ক’দিন ধরেই দোলাচলে ছিলেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজ্য নেতৃত্ব চাইছিলেন প্রার্থী দেওয়া হোক। কিন্তু হাইকম্যান্ড মনস্থির করতে পারছিল না।
ঘটনাচক্রে, এ দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিতে পিঠোপিঠি তিনটি বিষয় সামনে এসেছে।
আব্দুল মান্নান
এ দিন বিকেলে আচমকা দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরই তৃণমূল শিবির থেকে এই প্রচার ছড়াতে থাকে যে, রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীকে নিয়ে যে জট তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে কেন্দ্র কোনও সিদ্ধান্ত (অর্থাৎ দীনেশকে ইস্তফা দিতে বাধ্য না করলে) না নিলে মমতা ‘চরম সিদ্ধান্ত’ নেবেন। অর্থাৎ তিনি সরকার থেকে বেরিয়ে আসবেন। তৃণমূলের প্রতিমন্ত্রীরাও ইস্তফা দেবেন। তবে ইউপিএ-২ থেকে সমর্থন তুলবেন না। সেই ‘চরম সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার আগেই তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। তৃণমূলের অন্য একটি অংশ অবশ্য বলে, রেলমন্ত্রী হিসেবে মুকুল রায়ের শপথ নেওয়া নিশ্চিত। সেই কারণেই মমতা দিল্লি যাচ্ছেন। বস্তুত, এর খানিক পরেই দীনেশ নিজে ফোন করে মমতাকে জানান, তিনি রেলমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিচ্ছেন। তার অব্যবহিত পরেই আবার রাজ্যসভার প্রার্থিপদে মান্নানের নাম জানান শাকিল। এই ঘটনা-পরম্পরার মধ্যে কেউ কেউ ‘যোগাযোগ’ দেখতে পেলেও অন্য একাংশ মনে করছে, এর কোনওটির সঙ্গে কোনওটির ‘সম্পর্ক’ নেই। তিনটি ঘটনাই ঘটেছে নিজস্ব নিয়মে।
রাজ্যসভার জন্য প্রার্থী দিলে মান্নানের নামই যে প্রথমে বিবেচিত হবে, তা গত কয়েক দিন ধরেই ঠিক ছিল। সে খবর জেনে তৃণমূলের এক দূত মারফত তাঁকে নিরস্ত করার চেষ্টাও করা হয়। প্রস্তাব দেওয়া হয়, রাজ্যসভায় একান্তই যেতে চাইলে তিনি তৃণমূলে যোগ দিন। মমতাই তাঁকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেবেন। মান্নান সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এ বার রাজ্যসভার একটি আসন তাদের ছাড়ার জন্য মমতার কাছে আর্জি জানিয়েছিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। কিন্তু মমতা তা খারিজ করে রাজ্যসভার চারটি আসনেই প্রার্থী দিয়েছেন। এ বার কংগ্রেসও রাজ্যসভায় প্রার্থী দেওয়ায় এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা রাজ্যসভা ভোট বয়কট করায় লড়াইটা অনেক ‘উন্মুক্ত’ হয়ে গেল বলেই মনে করছে কংগ্রেস শিবির। তাদের আশা, সিপিএম তথা বামফ্রন্ট তাদের বাড়তি ভোট কংগ্রেসের প্রার্থীকে দেওয়ার ব্যাপারে ‘ইতিবাচক’ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। প্রসঙ্গত, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু আগেই জানিয়েছিলেন, তেমন কোনও সম্ভাবনা দেখা দিলে তাঁরা বিষয়টি ফ্রন্টে আলোচনা করবেন। কংগ্রেসকে ভোট দিলে বামেদের দু’টি সুবিধা হবে। প্রথমত, মমতার এক জন প্রার্থীর পরাজয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে ‘বিভাজন’ তৈরি করা যাবে। এখন দেখার, কংগ্রেস সিপিএমের কাছে সেই সাহায্য চায় কি না। এবং চাইলে সিপিএম কী করে। তেমন কিছু শেষ পর্যন্ত সত্যিই হলে কংগ্রেসের প্রার্থীর জেতার সম্ভাবনা হয়তো উজ্জ্বল হবে। কিন্তু একই সঙ্গে কংগ্রেস-সিপিএম ‘আঁতাঁত’ নিয়ে আবার অভিযোগ তোলার সুযোগ পেয়ে যাবেন মমতা। যে কথা এ দিনই দলের কর্মসমিতির বৈঠকে তোলেন প্রাক্তন বিধায়ক তথা নদিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর সিংহ। দলের কাছে তাঁর প্রস্তাব ছিল, সিপিএমের সাহায্য নিয়ে ভোটে লড়াই করার থেকে প্রার্থী না দেওয়াই শ্রেয়। যার পাল্টা জবাব দিয়ে দলেরই এক শীর্ষ নেতা রাতে দিল্লিতে বলেন, “কংগ্রেস জিতবেই। তবে প্রার্থীকে পছন্দ করে সিপিএম তাদের অতিরিক্ত ভোট কংগ্রেসকে দিলে আমাদের কিছুই বলার থাকবে না। প্রার্থী নিজগুণে ভোট পেতেই পারেন।”
দিল্লির ঘোষণার আগে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে দিনভর নানা জল্পনা-বিভ্রান্তির মধ্যে কাটিয়েছেন রাজ্য কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। কর্মসমিতির বৈঠকে সাংসদ-বিধায়ক থেকে শুরু করে কংগ্রেসের বিভিন্ন জেলা সভাপতিরাও রাজ্যসভায় লড়ার পক্ষেই মত দেন। দিল্লির একাধিক নেতার সঙ্গে ফোনে ঘনঘন কথা বলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য-সহ অন্য নেতারাও। আজ, সোমবার বিকেল তিনটেয় মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে। তার আগে যে কোনও মুহূর্তে হাইকম্যান্ডের নির্দেশ পেলেই যাতে কালক্ষেপ না করে মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়, তার প্রস্তুতিও এ দিন নিয়ে রেখেছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। আজ, সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সদস্যদের বিধানসভায় হাজির থাকতেও বলা হয়েছিল। মনোনয়ন জমা দেওয়ার যাবতীয় নথিপত্রও তৈরি রাখা হয়েছিল। শুধু প্রতীক্ষা ছিল হাইকম্যান্ডের সবুজ সঙ্কেতের। এ দিন রাতে সেই সঙ্কেত প্রদেশ নেতৃত্বকে পাঠাল হাইকম্যান্ড। তার পরে প্রদীপবাবু বলেন, “ফোনে শাকিলজি জানান মান্নানকে প্রার্থী করা হচ্ছে। ওঁকে প্রস্তুত থাকতে বলুন।” রাজ্যসভা ভোটের পর্যবেক্ষক হিসেবে এআইসিসি-র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রামচন্দ্র কুন্তিয়াকে পর্যবেক্ষক হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে পাঠানোর সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছে হাইকম্যান্ড। আগামী ৩০ মার্চ ভোট হলে জেতার ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদীপবাবুর কথায়, “জিতব এই বিশ্বাস রয়েছে বলেই এত দিন ধরে হাইকম্যান্ডকে বুঝিয়েছি প্রার্থী দেওয়ার জন্য।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.