যত দিন ভারত-পাক ক্রিকেট থাকবে, কোহলি থাকবেন
মানুষ বিরাটের বদলেই
বদলাল ক্রিকেটার বিরাট

সালটা এখন ঠিক মনে পড়ছে না। দু’হাজার চার বা পাঁচ হবে। দলীপে খেলতে গিয়েছি। বিপক্ষ টিমে দেখলাম বিরাট কোহলি নামের একটা ছেলে খেলছে। প্রথম বার দেখে মনে হয়েছিল, ছেলেটার অ্যাটিটিউড নিয়ে একটু সমস্যা আছে। উদ্ধত। সব সময় ‘যা হবে দেখে নেব’ মার্কা একটা ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তার পর মাঝে-মাঝে ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি যে তা নয়। বিরাট যে অল্প-অল্প করে পাল্টাচ্ছিল বুঝতে পারছিলাম, কিন্তু সে ভাবে খেয়াল করিনি। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে গেলাম গত বছর। ইডেনে টি-টোয়েন্টি খেলতে এসেছে ইংল্যান্ড। তাজে গিয়েছি। রবিন উত্থাপ্পা-বিরাটদের সঙ্গে দেখা হল। টুকটাক কথা হচ্ছিল বিরাটের সঙ্গে। কিন্তু বেশ বুঝলাম, ও বদলে গিয়েছে। উদ্ধত ভাবটা উধাও। নম্র, বিনয়ী একটা হাবভাব কথাবার্তায় লেগে। যা বলছে, ভেবেচিন্তে বলছে। কোনও আলটপকা মন্তব্য নেই। সে দিন আরও দেখেছিলাম, মিডিয়ার সমালোচনাও সামলাতে শিখে গিয়েছে বিরাট। চেষ্টা করছে, মানুষ হিসেবে নিজেকে আরও উন্নত করতে।
কোনও ক্রিকেটার যদি নিজের চারিত্রিক গঠনে বদল আনে, মাঠেও তার ক্রিকেট বদলায়। বদলাতে বাধ্য। ক্রিকেট তো শেষ পর্যন্ত একটা লাইফস্টাইল স্পোর্ট। মাঠে আপনাকে আট-ন’ঘণ্টা থাকতে হবে। মানুষ বিরাট বদলে যাওয়ায়, ক্রিকেটার বিরাটও পাল্টেছে। আগে বিরাট মানে ছিল দুর্দান্ত একটা চল্লিশ রানের ইনিংস। আর এখন? চল্লিশ পেরোনো মানে একটা বড় রান বাঁধা। রবিবারের ইনিংসটাই ধরুন। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের অনন্ত চাপ সামলে এ রকম ইনিংস ক’জন তরুণ খেলতে পারে? সামনে এত বিশাল টার্গেট, কিন্তু একবারের জন্যেও ধৈর্যচ্যুতি দেখলাম না। শান্ত মেজাজে ম্যাচটাকে বের করে আনল। ভারতের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক ওকে ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারছি না।
লক্ষ্য ছুঁয়ে। রবিবার মীরপুরে ভারতীয় ক্রিকেটের তিন মূর্তি। ছবি: এএফপি
আমাদের দেশে ক্রিকেটে প্রতিভা কম নেই। কিন্তু খুব অল্প সংখ্যক তরুণ নিজেদের প্রতিভার সুবিচার করতে পারে। বিরাট কোহলি অবশ্যই প্রতিভা এবং এমন এক প্রতিভা, যে যথেষ্ট পরিণতির সঙ্গে নিজের প্রতিভার প্রতি উপযুক্ত বিচার করে চলেছে।
সেই বিশ্বকাপ থেকেই ভারতের ওয়ান ডে দলে তিন নম্বর জায়গাটা ওর বাঁধা। কী টেস্ট, কী ওয়ান ডে, তিন নম্বর জায়গাটা ক্রিকেটে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিরাট এই জায়গায় এই মুহূর্তে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সব সময়ই চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসে। বিশেষ করে চাপ থাকলেই ওর খেলাটা খোলে। চাপের মুখে অবিচলিত থেকে বিপক্ষ বোলিংকে ফালাফালা করাটা যেন ওর সহজাত। চাইলেই যেন সেটা করতে পারে! রবিবার ১৪৮ বলে ১৮৩ রানের ইনিংসটা এক কথায় ওয়ান ডে-তে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা সেরা ইনিংসগুলোর মধ্যে একটা। পিচ যতই ব্যাটিং ট্র্যাক হোক, ৩৩০ তাড়া করা আদৌ সহজ ছিল না। মনে রাখতে হবে, নতুন নিয়ম চালু হওয়ার পর কিছুটা হলেও বোলারদের সুবিধে হয়েছে। আগে ৩৪ ওভারে বল বদল হত। তার পর নতুন করে মারার সুযোগ পেত ব্যাটসম্যানরা। এখন দু’দিক থেকে দু’টো নতুন বল। সেই জন্য এই নিয়মে স্কোর একটু হলেও কমেছে। এটা মাথায় রাখলে বিরাটের ইনিংস লেটার মার্কস পাবে।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় জয়
ভারত ১২৫, পাকিস্তান ৮৭ (শারজা’৮৫)
পাকিস্তান ৩১৪-৫, ভারত ৩১৬-৭ (ঢাকা’৯৮)
পাকিস্তান ২৮৬-৮, ভারত ২৮৭-২ (করাচি’০৬)
ভারত ৩৩০-৮, পাকিস্তান ১৯০ (মীরপুর’০৮)
পাকিস্তান ৩২৯-৬, ভারত ৩৩০-৪ (মীরপুর’১২)

দায়বদ্ধতা ওর বরাবরই ছিল। সেই দলীপ ট্রফি থেকেই তো দেখছি। বাবা মারা গিয়েছে, তবু সব ভুলে ম্যাচ খেলেছে। বদলাতে হত শুধু অ্যাটিটিউড। একটা সময় বলা হচ্ছিল, ও বখে গিয়েছে। বিরাট সে সবও পাল্টাল। ওয়াংখেড়েতে বিশ্বকাপ জেতার পর ও-ই বলেছিল, “সচিন পাজি কুড়ি বছর ধরে দেশকে নিজের কাঁধে বহন করেছে। এখন আমাদের উচিত ওকে কাঁধে বহন করা।” বিশ্বকাপ ফাইনালের রাতে সচিনকে কাঁধে ও-ই তুলেছিল। পরে বাকিরা হাত লাগায়। ক্রিকেট থেকে কোনও দিন বিচ্যুত হতে দেখিনি ওকে। পুরস্কার, অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট সেঞ্চুরি। ওয়ান ডে-তে একের পর এক ম্যাচ জেতানো ইনিংস। ওকে সহ অধিনায়ক বাছা মোটেই ভুল হয়নি।
বরং বলব, ওর মধ্যে ‘গ্রেট’ হওয়ার যাবতীয় মশলা দেখতে পাচ্ছি। শুধু ওয়ান ডে নয়, টেস্টেও তিন নম্বর জায়গাটা আগামী বেশ কিছু দিন বিরাটকে ছেড়ে দিতে হবে। দু’-তিন বছরে কাউকে গ্রেট বলা যায় না ঠিকই। কিন্তু বিরাট যদি এ ভাবে নিজেকে ধরে রাখতে পারে, তা হলে ওর গ্রেট হয়ে ওঠা আশা করাই যায়। রবিবারের মীরপুরই তার উদাহরণ। এই ধারাবাহিকতা আরও অন্তত পাঁচ-ছয় বছর ধরে দেখাতে হবে বিরাটকে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.