যত দিন ভারত-পাক ক্রিকেট থাকবে, কোহলি থাকবেন
সচিনের স্বীকৃতি পেয়ে আবেগে ডুবলেন নায়ক
কোহলি ইজ গড!
কোহলি নে পাকিস্তান কো ধো ডালা!
একের পর এক বিবিএম (ব্ল্যাকবেরি মেসেঞ্জার) স্ট্যাটাস পাল্টে যাচ্ছে বন্ধুদের। সে সব দেখছেন আর তত মুখচোখ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে বিরাট কোহলির। রবিবার মীরপুরের মাঠে ১৮৩ করে ওঠা নায়ক। কিন্তু দেখেশুনে মনে হচ্ছে যেন মাঠ ছেড়ে এখনও বেরোননি। শিশুর মতো ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার বুকে আগলে ঘুরছেন। একের পর এক বন্ধুদের ফোন আসছে। বিবিএম আসছে। কাউকে তিনি চিৎকার করে বলছেন, রাতভর আনন্দ কর তোরা। কাউকে বলছেন, এত আনন্দ জীবনে কখনও পাইনি।
হোবার্টে তাঁর ১৩৩ টিমের মধ্যেকার সমস্ত ব্যবধান, বিতর্ক ধুয়েমুছে দিয়েছিল। আনন্দে মাতিয়েছিল সচিন থেকে ধোনি সবাইকে। এখানেও তাই ঘটল। ম্যাচ জেতার পর বিশ্বকাপ-জয়ের সেই টিম ইন্ডিয়া ড্রেসিংরুম ফিরে আসে। সচিন লাফ দিয়ে দৌড়ে যান। কোহলিকে জড়িয়ে ধরে বলেন, দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলেছিস। আমার দেখা সেরা ইনিংসগুলোর একটা। সচিনের মুখে এই কথা শুনে আপ্লুত কোহলি। পরে বলছিলেন, “সচিন তেন্ডুলকর বলছে! যে কি না নিজেই এত সব দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছে। আমি তো ভাবতেই পারছি না!” সাংবাদিক সম্মেলনে একজন তাঁকে জিজ্ঞেস করে বসেছেন, সচিনের শততম সেঞ্চুরি ছোঁয়ার লক্ষ্য তিনিও নিতে পারেন কি না? কোহলি হেসে ফেললেন, “কী আর বলব! আমার এগারোটা সেঞ্চুরি। সচিনের মাত্র একশোটা!” বললেন, “সচিনের সঙ্গে ব্যাট করতে পারাটাই একটা সম্মান। ওর শততম সেঞ্চুরির ম্যাচটায় যে আমিও টিমে ছিলাম সেটা আমার কাছে ভীষণ স্পেশ্যাল।”
কোহলির ১৮৩ যখন ঘটছে, তখন সচিন কী করছিলেন? বরাবরের কুসংস্কার তাঁর। ড্রেসিংরুমের যে জায়গায় বসে থাকবেন, সেখানে বসে থেকে যদি টিমের রান হতে থাকে তা হলে তিনি সেখান থেকে নড়বেন না। বিশেষ করে পাকিস্তান ম্যাচে। এক বার পাকিস্তান ম্যাচে তিনি নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়েছিলেন। জেতার জন্য তখনও বেশ কিছু রান বাকি। টেনশনে বাথরুমে ঢুকে পড়েন। বাইরে থেকে চিৎকার শুনে জানতে চান, কী হল? শোনেন ওভার বাউন্ডারি হয়েছে। তার পর আর বাথরুম থেকে বেরোননি। শাওয়ার চালিয়ে তার নীচে যেমন দাঁড়িয়ে ছিলেন তেমন দাঁড়িয়ে থাকেন। বাইরে থেকে হরভজন ধারাবিবরণী করতে থাকেন প্রতিটা বলে কী হচ্ছে। পাকিস্তানকে হারানোর পরেই তিনি বেরোন। এ দিন ভাগ্য ভাল তিনি বাথরুমে ঢোকেননি। তবে ড্রেসিংরুমের বারান্দায় যে জায়গায় বসেছিলেন সেখান থেকে নড়েননি উইনিং স্ট্রোকের আগে পর্যন্ত।
কী ভাবে সম্ভব করলেন ৩২৯ তাড়া করা? দুর্ধর্ষ ১৮৩-র রহস্য কী? কোহলি বললেন, “নির্দিষ্ট কোনও প্ল্যানিং ছিল না। আমরা শুরুতেই উইকেট হারালাম। তার পর লক্ষ্য ছিল বড় পার্টনারশিপ করা। ওদের স্ট্রাইক বোলারদের দেখে খেলতে হচ্ছিল। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওরা আক্রমণে ফিরছিল। মিথ্যে বলা হবে যদি বলি কোনও চাপ ছিল না। পাকিস্তান ম্যাচ এমনিতেই বাড়তি চাপের ম্যাচ। তার উপর টুর্নামেন্টের এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।” বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পাকিস্তান ম্যাচের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর। “ওটা জিতেও খুব আনন্দ করেছিলাম। তবে আমি সেই ম্যাচে রান পাইনি। তাই এ বার কোথাও একটা নিজেকে বলেছিলাম, পাকিস্তান ম্যাচে রান করতে হবে। এত শুনেছি এই ম্যাচটার কথা ছোটবেলা থেকে!”

কোহলি-ঝড়ে ভাঙল যে সব রেকর্ড
• কনিষ্ঠতম (২৩ বছর ১৩৪ দিন) ভারতীয় হিসাবে ওয়ান ডে ইনিংসে দেড়শোর বেশি রান।
• এশিয়া কাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান।
• সবচেয়ে কম ইনিংসে ১১ সেঞ্চুরি (৮২ ইনিংস)।
• ফ্লাডলাইটে এই মুহূর্তে বিশ্বে সেরা ব্যাটিং গড় (৬১.৪৮)

মাঠের বাইরে থেকে যেমন অনেকের মনে হচ্ছিল কোহলির অবিশ্বাস্য ইনিংস কি সত্যিই ঘটছে নাকি স্বপ্নে দেখার মতো চলছে, আশ্চর্য ব্যাপার, কোহলিরও নাকি তাই মনে হয়েছিল দু’এক বার। “হঠাৎ আমার মধ্যে ভাবনা এসে গিয়েছিল যে, এটা কি সত্যিই ঘটছে নাকি স্বপ্ন দেখছি? আমার মনে হয় পাকিস্তান ম্যাচের জন্যই এটা মনে হয়েছিল। তার পরেই বুঝতে পারি মনঃসংযোগ সরে যাচ্ছে। দ্রুত ম্যাচের ওপর ফোকাস ফিরিয়ে আনি।” অবিশ্বাস্য ইনিংসের রেসিপি তাঁর কাছে খুব সরল “চেষ্টা করে গিয়েছি নিজের খেলা খেলে যাওয়ার। একটা কথা বলেছিলাম নিজেকে। ৪৩-৪৪ ওভারে অনেক বার আউট হয়ে যাচ্ছ। আজ শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে। শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলাম না। কিন্তু আমি খুশি যে, মোটামুটি জেতার জায়গাটা তৈরি করে দিয়ে আসতে পেরেছিলাম।
বারবার করে বললেন রোহিত শর্মার কথা। যাঁর সঙ্গে পার্টনারশিপ করে ম্যাচ জেতা নিশ্চিত করলেন। “আমি রোহিতের ব্যাটিংয়ের খুব বড় ফ্যান। ও যখন বড় ইনিংস খেলবে, দেখার মতো!” হোবার্টের ১৩৩-এর সঙ্গে তুলনা চলে আসছে অবধারিত ভাবে। কোহলি বলছেন, “হোবার্টের ইনিংস আর এটাকে পাশাপাশি রাখব। কিন্তু এটা বোধহয় সামান্য এগিয়ে। পাকিস্তান ম্যাচ। চাপের ম্যাচ। যে পরিস্থিতিতে আমি ব্যাট করতে গিয়েছিলাম সব মিলিয়ে।” আপনিই কি তা হলে রাহুল দ্রাবিড়ের জায়গায় ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যৎ তিন নম্বর? সারা দিনে এই এক বারই বোধহয় কোহলি ডিফেন্স করলেন। “খুব বড় প্রশ্ন এটা। আমি রাহুল দ্রাবিড়ের জায়গায় নিজেকে বসানোর কথা ভাবছি না। আমার এখন একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে, ভাল খেলে যাওয়া।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.