চোরাশিকারি আর কাঠ কারবারিদের স্বর্গরাজ্যে বাঘ গুনতে গিয়ে প্রবল সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন পশুপ্রেমীরা। এমনকী, অরুণাচলের প্রধান মুখ্য বনপাল নিজে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে গিয়ে চোরাশিকারিদের গুলির মুখে পড়লেন। বাঘ সুমারির শিবির তছনছ
করে চোরাশিকারিরা আটটি ক্যামেরাও লুঠ করেছে।
অরুণাচল প্রদেশের অরণ্যগুলিতে এই প্রথম ক্যামেরা ট্র্যাপিং-এর কাজ শুরু হয়েছে। দায়িত্বে রয়েছে অসমের একটি পশুপ্রেমী সংস্থা। কিন্তু, অসমে দীর্ঘদিন ধরে বাঘ, গন্ডার, ডলফিন শুমারির সঙ্গে যুক্ত ওই সংস্থার বাঘ বিশেষজ্ঞ, কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে অরুণাচলের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। নামদফা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ‘কোর এরিয়া’য় হ্যাপি ভ্যালি, হলদিবাড়ি, হর্নবিল, বুলবুলিয়া, রানিঝিল ও ফার্মবেস এলাকায় ক্যামেরাগুলি বসানো হয়েছে। আরণ্যক-এর বাঘ বিশেষজ্ঞ ও সুমারি প্রকল্পের প্রধান ফিরোজ আহমেদ জানান, অসমের অরণ্যে রক্ষীরা নিয়মিত টহল দেন। সেখানে শিকারিরা মাঝেমধ্যে হানা দেয়। কিন্তু অরুণাচলের জঙ্গলগুলি চোরাশিকারি ও কাঠ-মাফিয়াদের দখলেই থাকে। কখনও-সখনও, রক্ষীরা অরণ্য টহলে আসেন। জঙ্গলে, প্রাণী ও উদ্ভিদ বিষয়ে প্রামাণ্য তথ্য নেই। নির্বিচারে বন্যপ্রাণ ও অরণ্য ধ্বংস চলছিল। কিন্তু, বাঘ সুমারি চালু হওয়ায় জঙ্গলে পশুপ্রেমী, রক্ষী, বনকর্তাদের আনাগোনা বেড়েছে। এতেই চটেছে চোরাশিকারি ও চোরাই কাঠপাচারকারী চক্র।
বনবিভাগ জানায়, প্রথমে, ফার্ম বেস এলাকায় হানা দিয়ে, সশস্ত্র চোরাশিকারিরা, ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত রক্ষণ শিবিরটি পুরো ভেঙে ফেলে। এরপর, ইয়োবিন উপজাতির চোরাশিকারিরা কোডবয় সংরক্ষিত ব্যাঘ্র অরণ্যের ভিতরে ঢুকে, বনরক্ষী ও ‘আরণ্যক’ সদস্যদের মারধর করে, গুলিও চালানো হয়। তাঁদের উদ্ধার করতে আসার পথে রেঞ্জ অফিসারের নেতৃত্বে বনরক্ষীদের দল, ১৩ জন চাকমা চোরাশিকারির মুখোমুখি হন। তাদের কাছ থেকে প্রচুর মাংস উদ্ধার হয়। সম্প্রতি, ফার্ম বেস শিবিরে, সুমারি কর্মীদের উপরে ফের আক্রমণ চলে। ভেঙে ফেলা হয় তাদের শিবির। এখন অবধি, সুমারির জন্য পাতা, আটটি মূল্যবান ক্যামেরা ও ২৪টি মেমরি কাড শিবির থেকে লুঠ হয়েছে।
ফলে, সুমারির কাজ ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রথমবার প্রধান মুখ্য বনপাল জে এল সিংহ নিজে তিন দিন ধরে গভীর জঙ্গলে পায়ে হেঁটে ঘোরেন। বুলবুলিয়া এলাকায় তাঁকে মারতে চোরাশিকারিরা গুলি চালায়। কপালজোরে সেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বনরক্ষীরাও পাল্টা গুলি চালান। পরিদর্শনকালে, ব্যাঘ্র অরণ্যের ভিতরের বেশ কিছু বর্মি ফাঁদ উদ্ধার হয়। মপেন চেক গেট ও গিবন্স ল্যান্ডের মধ্যবর্তী এলাকায় বেআইনি গাছ কাটার বিষয়টিও নজরে আসে।
নামদফার ফিল্ড অধিকর্তা এস জে জংসামের মতে, “পরিস্থিতি শোচনীয়। এখনই অরণ্য বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে না পড়লে পুরো জঙ্গল চোরাশিকারিদের দখলে চলে যাবে। অরণ্য সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় মানুষের সাহায্যএকান্ত প্রয়োজন। তাই, বনকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় যুব নেতা, উপজাতি সংগঠনগুলির সমবায়ে গড়া হয়েছে সমন্বয় কমিটি। জঙ্গলে নজরদারির জন্য বেশ কিছু সেতু ও পথ বানানোর বিষয়েও বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছি আমরা। স্থানীয় উপজাতি যুবকদের নিয়ে, বনরক্ষী বাহিনী গড়ে
তোলা হবে। এই জন্য ২০০টি পদ মঞ্জুর হয়েছে।”
অন্য দিকে, অসম সরকার, চোরাশিকারিদের মোকাবিলায় কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে ১৫২টি বনশিবির গড়েছে। প্রতি শিবিরে .৩০৩ ও .৩১৫ রাইফেলসহ ৬ জন করে রক্ষী থাকবেন। বনরক্ষীদের একে ৪৭ দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। বনরক্ষীদের পাশাপাশি, আরও ১৭০ জন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী উদ্যানে পাঠানো হয়েছে। |