রেল বাজেটকে স্বাগতই জানাল উত্তরবঙ্গের নিত্যযাত্রী এবং ব্যবসায়ী মহল। বামেরা নানা আপত্তি জানালেও বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেসও। বিশেষত, উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নিউ জলপাইগুড়ি-হাওড়া শতাব্দী এক্সপ্রেস এবং একাধিক ইন্টারসিটি ট্রেন পরিষেবা চালুর প্রস্তাব রয়েছে রেল বাজেটে। নিত্যযাত্রী এবং ব্যবসায়ী মহলের বক্তব্য, গত দু’বছর ভারতীয় রেল উত্তরবঙ্গের জন্য নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ বারও শতাব্দীর মতো ট্রেন দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বাড়লে যে হারে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাতে আপত্তির কিছু নেই। এ বারের রেল বাজেটে নয়া যে ট্রেনের প্রস্তাবে আলোড়িত উত্তরবঙ্গের বাসিন্দারা, সেটি হল শতাব্দী এক্সপ্রেস। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হাওড়া পর্যন্ত এই ট্রেনটি সপ্তাহে ৬ দিন চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, নিউ জলপাইগুড়ি থেকে নিউ কোচবিহার পর্যন্ত ইন্টারসিটি, ডিব্রুগড়-কলকাতা সাপ্তাহিক, মালদহ সুরাট সাপ্তাহিক ট্রেনের প্রস্তাব রয়েছে। শিলিগুড়ি থেকে মালবাজার হয়ে চ্যাংরাবান্ধা পর্যন্ত ডিএমইউ, নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বানারহাট ডিএমইউ ট্রেনের প্রস্তাবও রয়েছে। এ ছাড়া নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বঙ্গাইগাঁও পর্যন্ত ট্রেনটি তেজপুর পর্যন্ত চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। নিউ জলপাইগুড়ি-আলুয়াবাড়ি, নিউ জলপাইগুড়ি-রাধিকাপুর এবং নিউ জলপাইগুড়ি-বালুরঘাট ইন্টারসিটিও রোজ চলবে বলে রেলমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এদিন বাজেটকে ঘিরে রেলমন্ত্রী বনাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধকে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, “রেল বাজেটের চেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে রেলমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধ। এটাই বছরের সেরা রসিকতা। তবে রেলকে চেয়ে আইসিইউতে পাঠানোর অবস্থা হয়েছে সে কথা রেলমন্ত্রী স্বীকার করে নেওয়ায় ধন্যবাদ জানাব।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক ভাবে রেলকে চালালে এ বার ভাড়া বাড়ানোর প্রয়োজন হত না। তবে বাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহারের জেলা উদয়ন গুহ। তিনি বলেন, “তৃণমূল নেত্রী আগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেভাবে বাজেট করেছেন। তাই বর্তমান রেলমন্ত্রী ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।” ফেডারেশন অব চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গলের (ফোসিন) সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “গত দু’বছরের কথা মাথায় রাখলে এ বার রেল বাজেটও বেশ ভালই বলতে হবে। বিশেষ করে শতাব্দী এক্সপ্রেসের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানাচ্ছিলাম। তার সঙ্গে বেশ কয়েকটি ডিএমইউ দেওয়া হয়েছে। সেই তুলনায় বাজেটে তাই ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি বড় কিছু নয়। এই বাজেটে আমরা অন্তত খুশি।” কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের (সিআইআই) উত্তরবঙ্গ শাখার প্রাক্তন চেয়ারম্যান রামগোপাল জাজোদিয়া বলেন, “রেলের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি বিচার করলে ভাড়া বাড়িয়ে সঠিক পদক্ষেপই নিয়েছেন রেলমন্ত্রী। ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব সামঞ্জস্যপূর্ণই হয়েছে। তবে রেলের যাত্রী নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, খাবারের মান ভাল করতে বাজেটে নজর দেওয়া দরকার।” সিআইআইয়ের বর্তমান চেয়ারম্যান রাজেন্দ্রকুমার অগ্রবাল বলেন, “শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেন আগেই এনজেপি থেকে চালু করার দরকার ছিল। এ বার তা মেলায় ভাল হয়েছে।” উত্তরবঙ্গে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালানোর পরিকাঠামো গড়ে তোলাও জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। রেল বাজেটে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের প্রস্তাবে খুশি তৃণমূলের জোয়াকিম বাক্সলা। রেলের যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য কমিটির ওই চেয়ারম্যান বলেন, “স্যাম পিত্রোদা রেলে সংস্কারের যে দিশা নির্দেশ করেছেন তা মেনেই রেলমন্ত্রী যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে নজর দিয়েছেন।” আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় মনে করেন, রেলের পরিকাঠামো আধুনিকীকরণ, যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য, নিরাপত্তার যে সব প্রস্তাব রেল বাজেটে রয়েছে, সেগুলি রূপায়ণ করতে রেলের ভাড়া বাড়ানো ছাড়া বিকল্প কিছু ছিল না। কোচবিহারের জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী মনে করেন, দীর্ঘদিন পরে এ বার সর্বভারতীয় মানের রেল বাজেট হয়েছে। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের রেল কর্মী সংগঠন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের বিভাগীয় সম্পাদক বিজন দেবরায় বলেন, “রেলের আর্থিক অবস্থা তলানিতে এসে ঠেকেছিল। গত দু’তিন মাস ধরে কর্মীদের টিএ, ওটি দেওয়া হচ্ছিল না। যাত্রী সুরক্ষার জন্য ব্যয় করাও সম্ভব হচ্ছিল না। এ বারের রেল বাজেটে ভাড়া বাড়ানোয় সেই সমস্যা মিটবে।” জলপাইগুড়ি জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সাধন বসুও মনে করেন, রেলের পরিকাঠামোর স্বার্থেই ভাড়া বেড়েছে। কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিমল সাহা বলেন, “জেলার জন্য কয়েকটি নতুন ট্রেন দেওয়া হয়েছে। ভাড়া বাড়ানো ছাড়া উপায় ছিল না। এ বারের বাজেট আমাদের কাছে খুব খারাপ মনে হচ্ছে না।” দিনহাটা রেল সম্প্রসারণ দাবি কমিটির কর্মকর্তা মনোজিত সাহাচৌধুরী অবশ্য গতবারের বাজেটে ঘোষিত দিনহাটা-শিলিগুড়ি প্যাসেঞ্জার এখনও কেন চালু হয়নি সেই প্রশ্ন তুলেছেন। বামেরা অবশ্য এই বাজেটে হতাশ। ফরওয়ার্ড ব্লকের জলপাইগুড়ির জেলা সম্পাদক গোবিন্দ রায় বলেন, “৬৪ বছর ধরে উত্তরবঙ্গের যে বঞ্চনার ইতিহাস রয়েছে, তার সঙ্গে এবারের রেল বাজেটও সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করা যাবতীয় রেল পরিকল্পনা অর্ধসমাপ্ত। এবারের রেল বাজেট দেখে করুণাই হচ্ছে।” সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ জিতেন দাস অভিযোগ করেন, আগে থেকে বড় বড় কথা বলে রেল বাজেটে ভাড়া ও মাশুল বাড়িয়ে দেওয়া হল। এর ফলে দরিদ্র মানুষেরাই সমস্যায় পড়বেন। দলের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় বলেন, “নিউ ময়নাগুড়ি-যোগীঘোপা রেল প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে তা নিয়ে এ বারের বাজেটেও দিশা মেলেনি। এ বারের বাজেট তাই সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়াবে।” রেল বাজেট নিয়ে ক্ষুব্ধ উত্তর দিনাজপুর জেলা বামফ্রন্ট। সচিব অপুর্ব পাল বলেন, “নির্বাচনের দিকে খেয়াল রেখে প্রতি বছর রেল বাজেট হয়! এ বছর উত্তর দিনাজপুর জেলায় কোনও নির্বাচন নেই। তাই রেল বাজেটে এই জেলাকে বঞ্চিত করা হল। এই রেল বাজেটের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে নিয়ে রাস্তায় নেমে জন |