রেল বাজেটে মন মন ভরল না বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার। প্রত্যাশা অনুযায়ী বাজেটে প্রাপ্তি না মেলায় তাই হতাশ রাঢ় বাংলার এই দুই জেলার বাসিন্দারা।
রেল বাজেটে প্রাপ্তি: দু’টি নতুন ট্রেন। আসানসোল-বিষ্ণুপুর ভায়া আদ্রা মেমু এবং আদ্রা-আসানসোল মেমু।
কিন্তু প্রত্যাশা ছিল অনেক।
আদ্রা এবং পুরুলিয়া-জামসেদপুর জাতীয় সড়কে টামনার কাছে রেল লাইনের উপর উড়ালপুল নির্মাণের জন্য বাজেটের আগে জেলা থেকে দলগত ভাবে তৃণমূল কংগ্রেস রেল মন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল। পুরুলিয়া থেকে আসানসোল হয়ে কলকাতা যাওয়ার জন্য এক্সপ্রেস ট্রেনেরও দাবি ছিল। আদ্রা-ঝাড়গ্রাম বা পুরুলিয়া ঝাড়গ্রাম নতুন রেলপথের দাবি এ বার পূরণ হওয়ার আশা করেছিল কংগ্রেস, তৃণমূল, ফরওয়ার্ড ব্লকের মত রাজনৈতিক দলগুলি-সহ জেলাবাসী। প্রসঙ্গত ওই রেলপথের দাবিতে দীঘ দিন ধরেই আন্দোলন করছেন রেল যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল এলাকার বাসিন্দারা। আশা ছিল আদ্রায় থমকে থাকা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়ে বাজেটে ইতিবাচক ঘোষনা করবেন রেলমন্ত্রী। বাসিন্দাদের আক্ষেপ, তা আর হল কই? |
বাঁকুড়ার বাসিন্দাদের প্রত্যাশা ছিল, আদ্রা থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় মেমু ট্রেন চালু করা হবে। বিষ্ণুপুর -তারকেশ্বর ও ছাতনা-মুকুটমণিপুর রেলপথে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে দ্রুতগতিতে কাজ শেষ করার কথাও রেলমন্ত্রীর মুখে শোনা যায়নি। শোনা যায়নি, বাঁকুড়া স্টেশনে ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম নির্মাণের প্রস্তাব। রেল যাত্রীদের দাবি ছিল, রাঁচি-গড়বেতা ট্রেনটি খড়্গপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হোক। বাঁকুড়া-রানিগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের দাবি এ বারেও উপেক্ষিত থেকে গেল। বিষ্ণুপুর-মুকুটমণিপুর রেলপথ নিয়েও নতুন কথা শোনা গেল না।
দু’বছর আগের রেলবাজেটে পুরুলিয়ার আদ্রায় নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র, আনাড়ায় রেলের কামরার মধ্যবর্তী পুনর্বাসন কারখানা-সহ একাধিক নতুন ট্রেনের ঘোষনা করা হয়। কিন্তু এ বার ওই প্রকল্পগুলি নিয়েও পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যায়নি। আদ্রার বাসিন্দা তথা বাঁকুড়ার সাংসদ সিপিএমের বাসুদেব আচারিয়া বলেন, “রেল বাজেটে নতুন দু’টি ট্রেনের ঘোষণা ছাড়া দুই জেলার আর কিছু প্রাপ্তি নেই নতুন কোনও প্রকল্পের কথা। নতুন রেলপথ সমীক্ষা করার জন্য রেলমন্ত্রী প্ল্যানিং কমিশনের কাছে প্রস্তাব পাঠাবেন বলে ঘোষণা করেছেন মাত্র। পুরনো প্রকল্প গুলির ভবিষ্যতও পরিষ্কার নয়।”
পুরুলিয়ার জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতোর প্রতিক্রিয়া, “আমরা চরম হতাশ হয়েছি। জঙ্গলমহলকে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী বাজেটে যে সব প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন, সেগুলি নিয়েও এ বার কোনও উচ্চবাচ্য নেই।” রাজ্যের শিশুকল্যাণ মন্ত্রী তথা বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যাম মুখোপাধ্যায় বলেন, “গতবার রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে যা পেয়েছিলাম, এ বার তার কিছুই পেলাম না।” আবার সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের কটাক্ষ, “গত বার বাজেটে ঘোষিত প্রকল্পগুলির কাজ এগোয়নি। আর এ বারের বাজেট থেকে বাঁকুড়ার প্রাপ্তি শূন্য।” তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি তথা রাজ্যর স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, বাজেটে দেশের অনুন্নত, পিছিয়ে পড়া এলাকায় নতুন রেলপথ স্থাপনের ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী। তাই পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম রেলপথ তৈরির সম্ভবনা রয়েছে।.‘সাপ্লিমেন্টারি বাজেটে’ আরও কিছু প্রস্তাব রেলমন্ত্রীকে দেওয়া হবে।” তাঁর দাবি, “সমালোচকদের মনে রাখা দরকার গত বাজেট গুলিতে দুই জেলার জন্য বহু প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে। কাজও চলছে।” দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে ইউজার্স অর্গানাইজেশনের যুগ্ম সম্পাদক দেবু চক্রবর্তী বলেন, “১৫০ কিমির পরিবর্তে ২৫০ কিমি পর্যন্ত মান্থলি সিজিন টিকিট চালুর দাবি ছিল। কোনও দাবিই পূরণ হয়নি। বাঁকুড়া জেলা পুরোপুরি বঞ্চিত।” |