সম্পাদকীয় ১...
মমতা পারিলেন না
দীনেশ ত্রিবেদী পারিয়াছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পারিলেন না। রেল বাজেট প্রসঙ্গে তাঁহার বিবৃতি সেই ব্যর্থতার কথাই বলিতেছে। দীনেশ ত্রিবেদী তাঁহার সম্মুখে ইতিহাস রচনার গৌরবময় সুযোগ আনিয়া দিয়াছিলেন। দলনেত্রী সস্তা জনপ্রিয়তার পায়ে সেই সুযোগ বিসর্জন দিতে উদ্যত। বিরোধীরা যখন বাজেটের সমালোচনার সুর উদারায় সম্পূর্ণ বাঁধিয়া উঠিতে পারেন নাই, তাহার পূর্বেই রেলমন্ত্রীর নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেস তারসপ্তকে সমালোচনা আরম্ভ করিল। সেই সমালোচনার প্রাণকেন্দ্রে প্রত্যাশিত ভাবেই দলের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সর্বান্তঃকরণে জনমনোরঞ্জনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী, ফলে দীনেশ ত্রিবেদীর সংস্কার তাঁহার অপছন্দ হইবে, ইহা অনিবার্য ছিল। ভারতীয় অর্থনীতির দুর্ভাগ্য এক দশক পরে কোনও রেলমন্ত্রী যদিও বা সস্তার জনপ্রিয়তার মোহ ত্যাগ করিয়া একটি বাস্তবমুখী বাজেট পেশ করিবার সাহস করিলেন, তাঁহার দল সেই সাহসের বোধনের লগ্নেই বিসর্জনের বাদ্য বাজাইয়া দিয়াছে। দলনেত্রী রেলমন্ত্রীকে তাঁহার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আদেশ করিয়াছেন। শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায় বরং তাঁহার বিবৃতিটি প্রত্যাহার করুন। হাততালি কুড়াইবার রাজনীতি তাঁহার মৌখিক তর্জনেই সীমাবদ্ধ থাকুক। বহু দিন পরে ভারতীয় রেল শ্বাস লইবার অবকাশ পাইয়াছে। দোহাই আলি, তাহা রোধ করিবেন না।
গত এক দশকে এই প্রথম রেলের ভাড়া বাড়িল। নিছক অর্থনীতির যুক্তিতে দেখিলে, ভাড়া বাড়াইবার সিদ্ধান্তে অস্বাভাবিকতার বিন্দুমাত্র নাই। রেলকর্মীদের বেতন বাড়িয়াছে, জ্বালানির দাম বাড়িয়াছে ফলে, ভাড়া বাড়াই স্বাভাবিক। বরং, কেন ভাড়া বৃদ্ধির পদ্ধতিটি সংস্কার করা হইল না, সেই প্রশ্নটি তোলা উচিত। দীনেশ ত্রিবেদী ভাড়া বাড়াইলেন বটে, কিন্তু তাহাতে ভাড়া বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটির বদল হইল না। যাত্রী-ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি পূর্বেও মন্ত্রীর উপর নির্ভরশীল ছিল, এখনও তাহাই রহিল। শ্রীত্রিবেদী ভাড়া বাড়াইলেন, কিন্তু তাঁহার পরবর্তী রেলমন্ত্রীও যে ব্যয়বৃদ্ধির সহিত সঙ্গতি রাখিয়া ভাড়া বাড়াইবেন, তেমন কোনও নিশ্চয়তা থাকিল না। ভাড়ার একটি অংশ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যের সহিত বাঁধিয়া দিবার যে সম্ভাবনাটিকে বিচার করিয়া দেখিবার জন্য রেলমন্ত্রী কমিটি গঠনের কথা বলিয়াছেন, সেই প্রক্রিয়াটিই আদর্শ হইত। এই বাজেটেই তাহা চালু করা উচিত ছিল। কিন্তু, এই সকল যুক্তি, সমালোচনাই অর্থনীতির। রাজনীতি ভিন্ন সুরে কথা বলে। সেই সুরটি ভারতীয়দের অতিপরিচিত নীতীশ কুমার হইতে লালুপ্রসাদ যাদব হইয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত সব রেলমন্ত্রীই সেই সুরে রেল বাজেট পেশ করিতে অভ্যস্ত ছিলেন। তাহাতে রেলের ‘অপারেটিং রেশিয়ো’ (আয়ের অনুপাতে ব্যয়ের মাত্রা) ৯৫ শতাংশ হইয়াছে, ভারতের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠানটির নাভিশ্বাস উঠিতেছে। যদি ভূতপূর্ব রেলমন্ত্রীরা ব্যয়ের সহিত সঙ্গতি রাখিয়া প্রতি বৎসর সামান্য পরিমাণ ভাড়া বাড়াইতেন, আজ ভারতীয় রেল সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হইতে পারিত। কিন্তু রাজনীতি আর কবে অর্থনীতির পরোয়া করিয়াছে!
শ্রীত্রিবেদী অনেকগুলি কমিটি গঠন করিয়াছেন। দুর্জনে বলিবে, যে কোনও সিদ্ধান্তকে ভবিষ্যতের গর্ভে ঠেলিয়া দিতে এই পন্থাটি মোক্ষম। দুর্জনের কথাটি সম্পূর্ণ উড়াইয়া না দিলেও বলিতে হয়, শুধু যাত্রী-ভাড়া বৃদ্ধির অতি-জরুরি সিদ্ধান্তটির কারণেই নহে, এই বাজেট তাহার দৃষ্টিভঙ্গির কারণেও স্বতন্ত্র। শ্রীত্রিবেদী তাঁহার বাজেট-ভাষণের গোড়াতেই বলিয়াছিলেন, তাঁহার প্রধান লক্ষ্য রেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মন্ত্রী বলিলেই রেলযাত্রা নিরাপদ হইবে না। কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্নটি যদি সত্যই সর্বাধিক গুরুত্ব পায়, এই প্রশ্নে যদি কোনও গাফিলতি সহ্য না করা হয়, রেলে নিরাপত্তা প্রকৃতই বাড়িবে। মন্ত্রী জানাইয়াছেন, দেশের মোট এক লক্ষ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে যে ১৯,০০০ কিলোমিটার সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়, তিনি রেলের আধুনিকীকরণের কাজটি সেই রেলপথগুলিতেই আরম্ভ করিবেন। অতি বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত। হাতে যখন টাকা অল্প, তখন তাহা সেরা খাতে ব্যবহার করাই বিধেয়। রেলমন্ত্রী তাঁহার ভাষণে বলিলেন, যোজনা কমিশন যে রেল প্রকল্পগুলিকে ছাড়পত্র দিয়াছে, তিনি তাহার সমস্তই মঞ্জুর করিয়াছেন। অর্থাৎ, তিনি একটি পদ্ধতির কথা বলিয়াছেন। কর্তার ইচ্ছায় কর্মই যে দেশের দস্তুর, সেখানে একটি পদ্ধতি বাঁধিয়া দেওয়ার চেষ্টা তাৎপর্যপূর্ণ বটে। রেলমন্ত্রী যাহা বলিয়াছেন, তাহার কতখানি বাস্তব হইবে, তাহা দেখার। কিন্তু, এই বাজেটকে কেন্দ্র করিয়া যে কুনাট্য জমিয়া উঠিতেছে, বাজেটটি তাহার ধকল সহিতে পারিবে কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.