আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে বিদেশে উড়ান-পরিষেবা গুটিয়ে আনছে কিংফিশার।
ভাঁড়ারের যা হাল, তাতে মুম্বই থেকে লন্ডন বা হংকংয়ের উড়ান আর চালানো হবে না বলে বিমানসংস্থাটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেশি দূরত্বের এই উড়ানগুলি মার্চের শেষে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই বিদেশ থেকে ভাড়া নেওয়া বেশ কয়েকটি বিমান ফিরিয়েও দিচ্ছে কিংফিশার। সংস্থার এক কর্তার কথায়, “আপাতত ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ের মতো ছোট রুটে আমাদের এয়ারবাস ৩২০ বিমান চলবে।”
তবে তাঁদের আর্থিক অনটনের হাত থেকে বাঁচাতে বেশ কয়েকটি বিদেশি সংস্থা যে ‘ইচ্ছে প্রকাশ’ করেছে, তা-ও বুধবার জানিয়ে দিয়েছেন কিংফিশার-কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, “দেশীয় বিমানসংস্থায় বিদেশি বিনিয়োগের চূড়ান্ত ছাড়পত্র কেন্দ্র এখনও দেয়নি। আমরা অপেক্ষায় রয়েছি।” আরবের একটি ও ইউরোপের তিনটি বিমানসংস্থার পরিচালকেরা সরাসরি কিংফিশারে টাকা ঢালতে রাজি বলে সংস্থার দাবি।
বিমান-বাণিজ্যের সূচনা থেকে কিংফিশারের কর্ণধার বিজয় মাল্যের আপ্তবাক্য ছিল, ‘এখানে যাত্রীদের সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য, উৎকৃষ্ট খাদ্য-পানীয় এবং বাছা বাছা সুন্দরীকে বিমানসেবিকার চাকরি দেওয়া হবে।’ সেইমতো মুম্বই-লন্ডনের মতো গুরুত্বপূর্ণ রুটে চালাতে তিনি বিদেশ থেকে ভাড়ায় নিয়ে এসেছিলেন বিলাসবহুল এয়ারবাস ৩৩০-২০০। দাবি করেছিলেন, আগে ভারতের কোনও বিমানসংস্থা এত বিলাসবহুল বিমান ব্যবহার করেনি।
কিন্তু সেই বিমান চালাতে গিয়েই ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছে। তাই মাসে প্রায় কুড়ি কোটি টাকায় ভাড়া নেওয়া পাঁচটি ৩৩০-২০০ বিমানকে বাধ্য হয়ে ফেরত পাঠাচ্ছে কিংফিশার। ব্যবসায় ‘ধাক্কার’ প্রভাব পড়েছে সংস্থার দৈনন্দিন কাজকর্মেও।
কিংফিশারের কর্মীরা শেষ বেতন পেয়েছিলেন ডিসেম্বরে। গত সোমবার থেকে কার্যত অসহযোগিতায় নেমেছেন পাইলটেরা। বহু উড়ান বাতিল করতে হয়েছে। মঙ্গলবারের পরে কলকাতা থেকে অধিকাংশ উড়ান বাতিল করেছে কিংফিশার। ছোট যে এটিআর বিমানটি কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বর, ঢাকা, বাগডোগরা, আইজলে যাতায়াত করত, তারও পাইলট মিলছে না। সকলে ‘অসুস্থতা’র কারণে ছুটি নিয়েছেন। সংস্থার তরফে এ দিন জানানো হয়েছে, ক্ষোভ প্রশমিত করতে বিজয় মাল্য আজ, বৃহস্পতিবার দিল্লিতে পাইলটদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন।
মঙ্গল ও বুধ এই দু’দিনে কলকাতা থেকে কিংফিশার শুধু মুম্বই ও ব্যাঙ্ককের বিমান চালিয়েছে। সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকাশ মিরপুরী এ দিন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গত দু’দিনকে হিসেবে ধরে দিনে ১০১টি উড়ান চালানো সম্ভব হয়েছে। উড়ান বাতিল সংক্রান্ত বার্তা যাত্রীদের পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছে। সংস্থার আশা, ব্যাঙ্ক থেকে অতিরিক্ত কার্যকরী মূলধন পাওয়া যাবে।
তবে টাকা বাকি থাকার কারণে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্র্যাভেল অ্যাসোসিয়েশন (আয়েটা)-এর মাধ্যমে এজেন্টদের দিয়ে টিকিট বিক্রি বন্ধ হওয়ায় যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, কিংফিশার-কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করে নিয়েছেন। কলকাতায় এক ট্র্যাভেল এজেন্সির ম্যানেজার দিব্যেন্দু ঘোষ এ দিন বলেন, “এখন তো অনেকেই টিকিট বাতিল করতে চাইছেন। অথচ আমরা করতে পারছি না। কারণ, কিংফিশারের সঙ্গে আয়েটা-র সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায় বিমানসংস্থার সাইটে ঢুকতেই পারছি না।”
ফলে দেশ জুড়ে ট্র্যাভেল এজেন্টরা বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। |