এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ঢুকে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পাত্রসায়র থানার বামিরা গ্রামের ঘটনা। সোমবার বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দা গুরুসাধন গরাই নামে ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী, বৌদি ও বাবাকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূলের সহ-সভাপতি নব পালের ‘প্ররোচনায়’ তাঁর সঙ্গীরা আক্রমণ করেছেন বলে অভিযোগ আক্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারের। পুলিশের কাছে নববাবু-সহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যদিও অভিযোগ ‘মিথ্যা’ বলে দাবি ওই তৃণমূল নেতার।
স্থানীয় রাজনীতিতে নববাবু পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত। স্নেহেশবাবু রাতে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতেও যান। যদিও তাঁর দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে দল হিসাবে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। এটি দুই পরিবারের বিবাদ। স্নেহেশবাবুর বক্তব্য, “গুরুসাধনবাবুর দাদা গয়াসাধান গরাই আমাদের দলীয় সমর্থক। একটা ঘটনা ঘটেছে। আমি খবর পেয়েই এখানে এসেছি। দু’পক্ষের সঙ্গেই কথা বলব।”
পেশায় ধান ও চাল ব্যবসার পাশাপাশি ঠিকাদারির সঙ্গে যুক্ত গুরুসাধনবাবুর দাবি, “আমার ঠাকুরদা শ্যামাপদ গরাই দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এ দিন সকালে স্থানীয় তৃণমূল নেতা নব পাল ঠাকুরদাকে ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার নাম করে ইন্দাসে নিয়ে গিয়ে আমাদের দু’টি পুকুরের সম্পত্তির অংশ নিজের নামে রেজিস্ট্রি করিয়ে নেন। সে কথা জানতে পেরে ফোনে নববাবুকে কিছু কথা বলি।” ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, এর পরে বিকেল ৪টে নাগাদ নববাবুর খুড়তুতো ভাই বাপি পাল, ভাইপো সুদীপ পাল, অনুপ সামন্ত-সহ কিছু লোক মোটরবাইকে তাঁর বাড়িতে চড়াও হন। প্রথমে গুরুসাধনবাবুর বাবাকে ও পরে তাঁর স্ত্রী বৈশাখী গরাই ও বৌদি রিতা গরাইকে বেধড়ক পেটানো হয়।
বৈশাখীদেবীর অভিযোগ, “বাপি, সুদীপ-সহ তৃণমূলের লোকজন হঠাৎই হামলা চালায়। সেই সময় আমার স্বামী ও ভাসুর বাড়িতে ছিলেন না। আমাকে আর আমার জা-কে চুলের মুঠি ধরে ওরা হামলাকারীরা যথেচ্ছ কিল, চড়, ঘুষি মারে। আমার একটা কানের দুলও ছিনিয়ে নেয়। ওরা শ্লীলতাহানির চেষ্টাও করে।” হামলাকারীরা চলে যাওয়ার আগে গালিগালাজ করে খুনের হুমকি দিয়ে যায় বলেও ওই পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে। পরিবার সূত্রের খবর, ঘটনার পরেই পাত্রসায়র থানায় খবর দেওয়া হয়। ওসি মানবেন্দ্রনাথ পাল বাহিনী নিয়ে গ্রামে যান। আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ গ্রহণ করেন। এখনও পর্যন্ত অবশ্য কেউ ধরা পড়েনি। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে।
তৃণমূল নেতা নববাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “বছর তিনেক আগে গ্রামের দু’টি পুকুরের অংশ গুরুসাধনবাবুর ঠাকুরদা শ্যামাপদ গরাই আমাকে এবং গ্রামের আর এক বাসিন্দাকে বিক্রি করে দেন। কিন্তু রেজিস্ট্রি করেননি। এ দিন শ্যামবাবু স্বেচ্ছায় আমাদের সঙ্গে গিয়ে ওই রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “আসলে সম্পত্তির হাতবদল হচ্ছে, এটা ভালভাবে মানতে পারছে না গুরুসাধনবাবুর পরিবার। তাই ফোন করে আমাকে গালিগালাজও করেছেন। এর প্রতিবাদ করার জন্যই গরাই পরিবার এখন আমাদের বিরুদ্ধে হামলা ও মারধরের মিথ্যা অভিযোগ করছে।” |