মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভানেত্রী সিদ্দিকা বেগম কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন। তিনি মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের প্রথম মুসলিম সভাধিপতিও বটে। দলত্যাগে ইচ্ছুক মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের আট কংগ্রেস সদস্যের যে তালিকা সোমবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রথমেই সিদ্দিকার নাম। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সূত্রে তেমনই জানা গিয়েছে।
সিদ্দিকার তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ঘটনা মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর কাছে একটা ‘ধাক্কা’ বলেই মনে করছে জেলা কংগ্রেস। আপাতত দু’জনের রাজনৈতিক সম্পর্ক ততটা ঘনিষ্ঠ না-হলেও একদা সিদ্দিকাকে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এনে অধীরই জেলা সভা পরিষদের সভানেত্রীর পদে বসিয়েছিলেন। সেই সিদ্দিকার নামই যে তৃণমূলে যোগ দিতে ‘ইচ্ছুক’-দের তালিকাভুক্ত হয়ে মুকুলবাবুর হাতে পৌঁছবে, তা সম্ভবত অধীরও ভাবেননি। এদিন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা সরাসরিই ঘোষণা করেছেন মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের বর্তমান বিরোধী দলনেতা বাণী ইসরাইল।
ঘটনার কথা শুনে অধীর বলেছেন, “সিদ্দিকাকে আমি নিজের বোন বলে মনে করতাম। গ্রাম থেকে তুলে এনে নিজের দায়িত্বে জেলা পরিষদের সভাধিপতি করেছিলাম। আর বাণী ইসরাইলকে আমি নিজের উদ্যোগে সরকারি খরচে হজে পাঠিয়েছি। তাঁর ছেলের চাকরির ব্যবস্থা করেছি। বিরোধী দলনেতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছি। এর পরে তাঁদের বিধায়ক বা সাংসদ করা ছাড়া দলের আর কিছু দেওয়ার ছিল না।” অর্থাৎ, অধীরের কথায় এমন ইঙ্গিত রয়েছে যে, সিদ্দিকারা আরও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কিছু পাওয়ার আশায় কংগ্রেস ছেড়ে যাচ্ছেন। বস্তুত, দলত্যাগীদের প্রতি অধীরের কটাক্ষ, “তৃণমূল ওঁদের এমএলএ বা এমপি করার আশ্বাস দিয়েছে বলেই হয়তো দল ছাড়ছেন তাঁরা।” তবে জেলা পরিষদের ওই সদস্যরা এক যোগে কংগ্রেস ছাড়লেও দলের কোনও ক্ষতি হবে না বলেই দাবি জেলা কংগ্রেস সভাপতির। |
২০০৩ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সিদ্দিকা মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি ছিলেন। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের ৬৩টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৩১টি আসনে ও বামফ্রন্ট ৩২টি আসনে জয়ী হয়। ২০০৯ সালে সিপিএমের নুরুল ইসলাম দলত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দেন। এরপরেই তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার দলত্যাগ-বিরোধী আইন প্রয়োগ করে নুরুল ইসলামকে বরখাস্ত করে। ফলে দু’দলেরই আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১টি করে। কিন্তু কংগ্রেসের তিন জেলা পরিষদ সদস্য শাওনী সিংহ রায়, হুমায়ুন কবির ও প্রতিমা রজক গত বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় তাঁরা আর জেলা পরিষদের স্থায়ী সদস্য থাকতে পারেননি। ফলে আপাতত কংগ্রেসের আসন সংখ্যা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ২৮-এ। এই অবস্থায় দলের আরও আট সদস্য তৃণমূলে যোগ দিলে কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা আরও কমে দাঁড়াবে ২০।
মুকুলবাবু এ দিন তালিকাভূক্ত সকলের নাম ঘোষণা করেননি। বাণী ইসরাইল, ধনঞ্জয় ঘোষ, কমলেশ সেনগুপ্ত ও ষষ্ঠীচরণ মাল কংগ্রেসের এই চার জেলা পরিষদ সদস্যের দলত্যাগের কথা ঘোষণা করেন মুকুলবাবু। কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, সিদ্দিকা ছাড়াও দলত্যাগে ইচ্ছুকদের তালিকাভুক্ত অন্য সদস্যরা হলেন ইসরাইল শেখ, মোজাম্মেল হোসেন এবং রফিকুল ইসলাম।
এ দিন সিদ্দিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে বাণী ইসরাইলের অভিযোগ, “গত সাড়ে তিন বছর ধরে কংগ্রেসের জেলাপরিষদ সদস্যদের ন্যূনতম সম্মান দেয়নি বামফ্রন্ট পরিচালিত জেলাপরিষদ। তাই কংগ্রেসের সদস্যরা এক জোট হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম বাজেট বিরোধিতার। জেলা পরিষদের বাজেট তাই পাশ করাতে পারেনি বামফ্রন্ট। এই অবস্থায় আমাদের অন্ধকারে রেখে কংগ্রেস এ বার সিপিএমের সঙ্গে আঁতাত করে একতরফা বাজেট পাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আমরা মানতে পারিনি।”অধীর অবশ্য পাল্টা বলেন, “জেলা পরিষদের বাজেট পাশ করানো নিয়ে দল কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। মঙ্গলবার জেলা পরিষদে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্যদের নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল এবং তা পরিচালনার কথা ছিল বাণী ইসরাইলের। ওই বৈঠকে তাঁরা যা সিদ্ধান্ত নিতেন, দল তাই মেনে নিত।” তবে ‘রাজনীতি’ করতে গিয়ে বাজেট পাশ না-করানোর ফলে মুর্শিদাবাদ জেলার ‘উন্নয়ন ব্যাহত’ হচ্ছে বলে মনে করেন অধীর। |