অকালমাতৃত্বে লাগাম দিতে...’ (৩-২) শীর্ষক খবর প্রসঙ্গে এই চিঠি। আসলে অকালমাতৃত্ব ঠেকাতে গেলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন মেয়েদের বাল্যবিবাহ রদ করা। এ রাজ্যের প্রায় ৫৪ শতাংশ মেয়ের আঠারো পেরোনোর আগেই বিয়ে হয়। অর্থাৎ গড়ে এ রাজ্যের প্রতি দুটি বিয়ের মধ্যে একটি হল বাল্যবিবাহ। আর এর অনিবার্য পরিণতি মেয়েদের অকালমাতৃত্ব। ফলে, স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ছে মা ও তার সদ্যোজাত শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা।
মেয়েদের বাল্যবিবাহ আমাদের দেশের এক শতাব্দী-প্রাচীন সমস্যা। মেয়েদের বাল্যবিবাহের জন্য দায়ী দারিদ্র, অশিক্ষা ও লিঙ্গবৈষম্য। বস্তুত, গ্রামেগঞ্জে অনেক বাবা-মা মনে করেন যে, মেয়েদের শিক্ষার জন্য টাকাপয়সা খরচ করা মানে অপচয়। তার চেয়ে বরং মেয়েদের অল্প বয়সে পাত্রস্থ করতে পারলে সংসারে এক জনের গ্রাসাচ্ছাদনের ভার কমে। আবার বিয়ে দিতে দেরি করা মানেই পাত্রীর চাহিদা কমে যাওয়া ও পাশাপাশি, পণের চাপ বেশি হওয়া। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে, মেয়েদের বাল্যবিবাহ ঠেকাতে তাদের আরও বেশি করে স্কুলে ভর্তি করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন মেয়েদের স্কুলে পড়াশোনা চালানোর জন্য সরকারি স্তরে বাড়তি কিছু সুযোগসুবিধা।
স্কুল ড্রপ-আউট মেয়েদের জন্য বৃত্তিমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন ঘটনা প্রমাণ করে যে, শিক্ষিত মেয়েরা তাদের বাবা-মা, পরিবার-পরিজন, সমাজ এই ধরনের প্রত্যেকটি স্তরের গোঁড়ামি দূর করে ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটায়। এ-কথা মানুষজনকে বোঝাতে হবে যে, মেয়েদের বাল্যবিবাহ দেওয়া মানে আসলে তাদের শৈশব চুরি করা। নিজের পরিবার থেকে মেয়েটিকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। |
আর এই বিষময় পরিণতি মেয়েদের অকালমাতৃত্ব, যা প্রসূতি ও সদ্যোজাত শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়।
বাল্যবিবাহ রদ করতে প্রয়োজন সমষ্টিগত বহুমাত্রিক লড়াই। সমাজের অনেককেই এতে শামিল হতে হবে। বাবা-মা, ছেলেমেয়ে, গ্রাম পঞ্চায়েত, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, স্থানীয় স্কুল শিক্ষক, স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষিত সমাজ-সচেতন নাগরিক সকলকে নিয়ে মেয়েদের বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার-অভিযান চালাতে হবে। বাস্তব উদাহরণ দিয়ে সকলের সামনে মেয়েদের বাল্যবিবাহের কুফল তুলে ধরতে হবে। সচেতনতা গড়ে তোলাই বেশি জরুরি। আর বাল্যবিবাহ রুখতে আইনি ব্যবস্থা সর্বশেষ পদক্ষেপ হওয়া উচিত।
এ ভাবেই রাজ্যে অকাল মাতৃত্বে লাগাম দেওয়া সম্ভব।
সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিউটাউন, কলকাতা-১৫৬ |