|
|
|
|
ইনফোসিস |
এসইজেড তকমা নয়, ফের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ইনফোসিসের প্রকল্পকে বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের (এসইজেড) তকমা দেওয়া যাবে না বলে ফের স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার মহাকরণে তিনি বলেন, “ইনফোসিস ওখানে কারখানা করুক। ওরা কাজ করুক। যা যা সুযোগ দেওয়া যায়, ওদের দেব। কিন্তু আমরা এসইজেড নীতির বিরুদ্ধে।” ওই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে কেন এসইজেড দেওয়া যাবে না, তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “ওদের যদি এসইজেড দিই, অন্যদের দেব না, তা কী করে হয়? আমি বৈষম্য করতে পারব না।”
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্যে প্রশাসনিক ও শিল্প মহলে স্বাভাবিক ভাবেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এসইজেডের জন্য কর ছাড়-সহ যে সব সুযোগসুবিধা পাওয়া যায়, সেগুলি ছাড়া এ রাজ্যে তাঁদের পক্ষে যে প্রকল্প গড়া সম্ভব নয়, তা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন ইনফোসিসের ‘মেন্টর’ নারায়ণমূর্তি। রাজ্যের তরফে তখন বলা হয়েছিল, এসইজেড তকমা ছাড়াও তুলনীয় সুযোগসুবিধা কী ভাবে দেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু শিল্প মহলের বক্তব্য, এই সব সুবিধাই দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের এতে কিছু করার নেই। এই পরিস্থিতিতে এসইজেডের জন্য নতুন করে প্রস্তাব না পাঠিয়ে বাম আমলে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো প্রস্তাবের ভিত্তিতে ইনফোসিসকে ওই তকমা দেওয়া যায় কি না, সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা চলছিল। তারই মাঝে মুখ্যমন্ত্রীর এই আচমকা মন্তব্যে রাজ্যের শিল্প দফতরও খানিকটা বিস্মিত। এই মন্তব্য কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে দেবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্প করার জন্য বাম আমলে রাজারহাটের নিউটাউনে ৫০ একর জমি কেনে ইনফোসিস। ২০১০ সালের নভেম্বরে ইনফোসিসের হাতে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার যে ‘অ্যালটমেন্ট লেটার’ তুলে দেয়, তাতে এসইজেড তৈরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা না হলে যে তাঁদের পক্ষে প্রকল্প করা সম্ভব নয়, তা সম্প্রতি এ রাজ্যে এসে নিজেই বলে গিয়েছেন নারায়ণমূর্তি। কিন্তু তৃণমূল সরকারের ঘোষিত নীতিই হল এসইজেড না করা। এই বিরোধ মেটাতে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইনফোসিসের কর্তারা। বৈঠকের পর পার্থবাবু বলেন, “আমরা আমাদের বক্তব্য ওঁদের জানিয়েছি। ওঁরা ওঁদের বক্তব্য জানিয়েছেন। এখন দেখা যাক কী হয়।” তবে সমঝোতা সূত্র খোঁজার চেষ্টা চললেও মমতা যে তাঁর অবস্থানে অনড়, এ দিনের মন্তব্যই তার প্রমাণ।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাজেটের দিকেই তাকিয়ে ইনফোসিস কর্তারা। কারণ, সেখানে এসইজেড আইন সংশোধন হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। এখন দেখার সেই সংশোধন আদৌ হয় কিনা, এবং তা থেকে এ রাজ্যে ইনফোসিসের জন্য কোনও আশার আলো বেরিয়ে আসে কিনা। ইনফোসিস কর্তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাজেটের পর তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে আগ্রহী।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অন্যতম ‘আইকন’ ইনফোসিসকে এ রাজ্যে ধরে রাখার ব্যাপারে আগ্রহের কথা এ দিনও জানিয়েছেন রাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র। তিনি বলেন, এ জন্য যা যা করা সম্ভব, তা করা হবে। কারণ, ইনফোসিস পা রাখলে বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে রাজ্যের ভাবমূর্তি যে উপকৃত হবে, তা বিলক্ষণ জানে রাজ্য। এই কারণেই ইনফোসিসের হাত ধরে ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগকে কাজে লাগাতে শিল্প দফতর সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও মমতার এ দিনের মন্তব্যের পর এ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
এসইজেড নিয়ে মন্তব্যের পাশাপাশি জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন যে তিনি পুরোপুরি তুলে দেবেন না, তা-ও সোমবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “অনেকেই নানা কথা বলছে। কিন্তু আমি ল্যান্ড সিলিং পুরোপুরি তুলে দিতে পারব না। শিল্পের জন্য যাঁরা জমি চাইছেন, তাদের প্রস্তাব ‘কেস টু কেস’ বিবেচনা করা হবে। একই ভাবে আমরা জোর করে জমি নেব না। মানুষের স্বার্থবিরোধী যে কোনও কাজের আমরা বিরোধী।” |
|
|
|
|
|