হাসপাতাল উন্নয়নেও ‘আমরা-ওরা’র ছায়া
মাত্র এক বছরের মধ্যে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেল স্বাস্থ্য দফতরের নীতি! ঢাকঢোল পিটিয়ে যে হাসপাতালের উন্নয়নের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, মাঝপথে তা বন্ধ করে দেওয়া হল। নির্দিষ্ট কোনও কারণ না-দেখিয়েই সেই হাসপাতালকে ‘ব্রাত্য’ করে অন্য হাসপাতালে নতুন করে ওই প্রকল্প শুরু করল স্বাস্থ্য দফতর।
ঠিক এক বছর আগে, ২০১১-র এপ্রিলে পাইকপাড়া এলাকার ইন্দিরা মাতৃসদন হাসপাতালকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। উদ্দেশ্য ছিল, কলকাতা শহরের বুকে ধুঁকতে থাকা ওই মাতৃসদনের পুনরুজ্জীবন। সেই সময়ে হাসপাতাল সেলের দায়িত্বে থাকা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানিয়েছিলেন, পাইকপাড়ার মতো এলাকায় বিশাল জায়গা নিয়ে তৈরি একটি মাতৃসদন এই ভাবে অবহেলায় পড়ে রয়েছে। একে আর জি করের সঙ্গে যোগ করলে মাতৃসদনের হাল ফিরবে, সেই সঙ্গে কিছু রোগী ওই হাসপাতালে চলে এলে আর জি করেরও চাপ কমবে। এর পরে আর জি কর থেকে স্ত্রীরোগ ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞেরা ইন্দিরা মাতৃসদনে আউটডোর করতে শুরু করেন। পরবর্তীকালে সেখানে তাঁরা অস্ত্রোপচার করবেন বলে ঠিক হওয়ায় প্রচুর টাকা ব্যয়ে নতুন অপারেশন থিয়েটারও তৈরি করা হয়।
ইন্দিরা মাতৃসদন। ছবি: রণজিৎ নন্দী
সেই স্বাস্থ্য দফতরই গত মাসে আর জি কর হাসপাতালের সঙ্গে ইন্দিরা মাতৃসদনের যোগ ছিন্ন করে আর জি কর হাসপাতালকে উত্তর কলকাতার বি কে পাল অ্যাভিনিউ এলাকার অবিনাশ দত্ত মেটারনিটি হাসপাতালের সঙ্গে যোগ করে দেয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আর জি কর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ইন্দিরা মাতৃসদনে আউটডোর করা বন্ধ করে দিয়ে অবিনাশ দত্ত হাসপাতালে আউটডোর করতে শুরু করেন। এই হাসপাতালই আর জি করের ‘অ্যানেক্স ভবন’ হিসেবে পরিচিত হয়।
যে হাসপাতালের পুনরুজ্জীবন নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর এক বছর আগেও এত উৎসাহী ছিল, হঠাৎ সেই ইন্দিরা মাতৃসদনকে ব্রাত্য করার কারণ কী? সেখানকার উন্নয়নের তা হলে কী হবে? একটি হাসপাতালের পুনরুজ্জীবন করতে হলে অন্য একটি হাসপাতালের উন্নয়ন প্রক্রিয়া মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হবে, তা-ই বা কে ঠিক করলেন? এক বছর আগে যিনি ইন্দিরা মাতৃসদনকে আর জি করের সঙ্গে যোগ করার ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন, সেই বিশ্বরঞ্জন শতপথী এখন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার পদে। এই প্রশ্নগুলি করা হলে কিছুটা এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, “যা ভাল মনে হয়েছে, তা-ই করা হয়েছে। এর বেশি মন্তব্য করব না।”
আরও এক ধাপ এগিয়ে রাজ্যের শিক্ষা-স্বাস্থ্য অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে ‘আমরা-ওরা’ প্রসঙ্গও টেনে এনে বলেছেন, “আগের সরকার ইন্দিরা মাতৃসদনকে আর জি করের সঙ্গে জুড়েছিল, আর এই সরকার অবিনাশ দত্ত মেটারনিটি হাসপাতালকে আর জি করের সঙ্গে জুড়ল!” তা হলে কি স্বাস্থ্য দফতর প্রয়োজন অনুযায়ী প্রকল্প হাতে নেয় না? যখন যে সরকার থাকে, তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে নীতি নির্ধারিত হয়? সুশান্তবাবুর সংক্ষিপ্ত উত্তর, “ইন্দিরা মাতৃসদন নিয়ে আপনারা অত চিন্তিত হবেন না। ওই ব্যাপারে আমরা অন্য কিছু ভাবছি।”
এই রকম পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যেই একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, ইন্দিরা মাতৃসদনের জন্য যদি অন্য কিছু পরিকল্পনার কথা স্বাস্থ্যকর্তাদের মাথায় থাকে, তা হলে মাত্র বছরখানেক আগে তাকে আর জি করের সঙ্গে যোগ করে একটা প্রকল্প শুরু হল কেন? তখন কি তা হলে ভাল করে ভাবনাচিন্তা না-করেই এগোনো হয়েছিল? স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসীত বিশ্বাসের যুক্তি, “ইন্দিরায় বেশি রোগী আসছেন না। তার থেকে অবিনাশ দত্তে রোগী বেশি।”
কিন্তু ইন্দিরা মাতৃসদনে কম রোগী আসার দায় তো স্বাস্থ্য দফতর এড়াতে পারে না। যাতে বেশি রোগী আসে, সেই পরিকল্পনাই তো নেওয়া হয়েছিল। উন্নত পরিষেবার ব্যবস্থা তারা গত এক বছরে করে উঠতে পারল না কেন? কেন এখনও সেখানকার ৩০টি শয্যায় কোনও রোগী ভর্তি হয় না? কেন সেখানে মাত্র চার জন চিকিৎসক? (এর মধ্যে দু’জন আবার এপ্রিলের মধ্যে অবসর নেবেন) কেন নার্স, গ্রুপ ডি, অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা নেই? কেন নতুন অপারেশন থিয়েটার তৈরির পরেও সেখানে অস্ত্রোপচার শুরু করা যায়নি? আর জি করের চিকিৎসকেরা আউটডোরে যাওয়া বন্ধ করার যে ক’জন রোগী আসতেন, তাঁরাও আর আসছেন না। উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা থেকে মাঝপথে ইন্দিরা মাতৃসদনকে ঝেড়ে ফেলে আচমকা কেন যাবতীয় মনোযোগ অবিনাশ দত্ত হাসপাতালের দিকে ঘুরে গেল? স্বাস্থ্য দফতরের নিয়মে কি তা হলে একটি হাসপাতালকে বাঁচাতে গেলে অন্য হাসপাতালকে মৃত্যুর জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়? উত্তর দেননি স্বাস্থ্যকর্তারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.