পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা পুরুলিয়ার সেই পাঁচ কাউন্সিলর তৃণমূল ছেড়ে ফের কংগ্রেসেই ফিরলেন।
শনিবার পুরুলিয়া শহরের ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সির উপস্থিতিতে জনসভায় তাঁরা কংগ্রেসে ফিরে আসার কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানান। ওই পাঁচ কাউন্সিলররা হলেন, কমলা সাউ, আনন্দ চৌধুরী, প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়, সাজেদা পারভিন ও সৈয়দ সাকিল আহমেদ। গত বছরের ১৮ জুলাই কলকাতায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে কংগ্রেসের ছয় কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন কংগ্রেসে ফিরে এলেন। অন্য দিকে পুরুলিয়া জেলারই জয়পুর ব্লকের বড়গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ ছ’জন সদস্য কংগ্রেস ছেড়ে রবিবার তৃণমূলে যোগ দেন। এর ফলে ওই পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের দখলে আসা এখন সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে।
২২ আসনের পুরুলিয়া পুরসভায় ১১টি আসন জিতে একক সংখ্যা গরিষ্ঠ দল হিসেবে তৃণমূল পুরবোর্ড গঠন করেছিল। বাকি ১১টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল ৮টি এবং সিপিএম ৩টি। কংগ্রেস ছেড়ে ৬ জন তৃণমূলে আসায় তাদের আসন বেড়ে হয়েছিল ১৭টি। গত নভেম্বর মাসে ওই ছ’জনের মধ্যে পাঁচ জন কাউন্সিলর জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেন, পুরুলিয়া পুরপ্রধানের মদতে দুর্নীতি হচ্ছে। তাঁরা পুরপ্রধানের অপসারণের দাবি জানান। ওই চিঠি পাওয়ার পরেও তৃণমূল নেতৃত্ব তারকেশ চট্টোপাধ্যায়কেই পুরপ্রধানের পদে বহাল রাখেন। এতে ওই পাঁচ কাউন্সিলর তৃণমূল নেতৃত্বের উপরে ক্ষুদ্ধ হন। |
তাঁদের মধ্যে আনন্দবাবু অভিযোগ করেন, “আমরা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছিলাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এলাকায় উন্নয়নের কাজ করব বলে। গিয়ে দেখলাম, পুরুলিয়া পুরসভায় তৃণমূলের নেতৃত্বে দুর্নীতি চলছে। দলের অভ্যন্তরে প্রতিবাদ জানিয়ে লাভ হয়নি। জেলা সভাপতি শান্তিরামবাবু থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কেও অভিযোগ জানিয়েছিলাম। তাঁরাও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রতিবাদে তাই ফের কংগ্রেসে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিই।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, “ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল। আমরা খুশি।” শান্তিরামবাবুর দাবি, “ওঁরা আদতে ক্ষমতার লোভে তৃণমূলে এসেছিল। পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে তাঁদের তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
অন্য দিকে, রবিবার পুরুলিয়া জেলারই জয়পুর থানার বড়গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ ছ’জন সদস্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। পঞ্চায়েত কার্যালয়ের সামনে ছোট সভায় তৃণমূলের জেলা সভাপতির উপস্থিতিতে তাঁরা আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। পঞ্চায়েত প্রধান শ্যামলকুমার দে বলেন, “এই পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের ছ’জন সদস্যই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে উন্নয়নের কাজ করতে তৃণমূলে যোগ দিলাম।” উল্লেখ্য এই পঞ্চায়েতের মোট ১১টি আসনের মধ্যে কংগ্রেসের ছিল ছ’টি। বাকি আসনগুলিতে সিপিএম-সহ বামপন্থীরা রয়েছেন। ওই পঞ্চায়েতে এত দিন তৃণমূলের একটিও আসন ছিল না। পঞ্চায়েত সদস্যদের দল বদলের পরে এ বার এই পঞ্চায়েতের ক্ষমতা পেল তৃণমূল। ওই অনুষ্ঠানেই কংগ্রেসের জেলা পরিষদ সদস্য বুলুরানি মাহাতো তৃণমূলে যোগ দেন। শান্তিরামবাবু বলেন, “তাঁদের স্বাগত জানিয়েছি।” তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “আখেরে আমাদের লাভই হল। পুরসভায় কোনও ক্ষতিও হল না, উল্টে একটি পঞ্চায়েত পাওয়া গেল।” |