গঙ্গাদূষণ, পুরসভার উদাসীনতার অভিযোগ
হুগলি নদীতে দূষণ বেড়েই চলেছে উলুবেড়িয়ায়।
কালীবাড়ির কাছ থেকে জগদীশপুর পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় হুগলি নদীর পাড়ে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। জগদীশপুরে আবার রয়েছে একটি ভাগাড়। মৃত পশু ফেলা হচ্ছে সেখানে। চর্মকার পশুগুলির ছাল ছাড়িয়ে নেওয়ার পরে দেহাবশেষ ভাসছে গঙ্গার জলে। অভিযোগ, সব দেখেশুনেও পুরসভা নির্বিকার। তা ছাড়া, উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের মর্গ থেকে থেকে বেওয়ারিশ লাশ এনে পোড়ানো হচ্ছে গঙ্গার পাড়েই। কেএমডিএ টাকার ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও জায়গার অভাবে পুরসভা এলাকায় তৈরি হয়নি বৈদ্যুতিক চুল্লি।
এক সময়ে জব চার্নক উলুবেড়িয়াতেই হুগলি নদীর ধারে জাহাজ ভিড়িয়েছিলেন। বসবাস করেছিলেন কিছু দিন। পরে তৎকালীন বাংলার নবাব আলিবর্দি খানের তাড়া খেয়ে চলে আসেন হুগলি নদীর পূর্ব পাড়ে কলকাতায়। জব চার্নক চলে এলেও উলুবেড়িয়া শহরের সঙ্গে হুগলি নদীর যোগাযোগ কমেনি। বরং এই সম্পর্ক বেশ নিবিড়।
এক সময়ে নৌকায় করে কলকাতা থেকে নিয়মিত পণ্য আসত উলুবেড়িয়ায়। এখনও তা আসে। তবে পরিমাণ খুব কম। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে উলুবেড়িয়ার বাসিন্দাদের ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। এর প্রধান মাধ্যম হল হুগলি নদী। কারণ দু’টি এলাকার মানুষ যাতায়াত করেন নদী পার হয়েই।
উলুবেড়িয়া কালীবাড়ির কাছে গঙ্গাতীরের অবস্থা।--নিজস্ব চিত্র।
উলুবেড়িয়া নদীর পাড়ে সকালে প্রাতর্ভ্রমণ করেন বহু মানুষ। নদীর ধারেই রয়েছে এসডিপিও কার্যালয়, থানা, মহকুমা খাদ্য ও সরবরাহ দফতর, মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর। নদীর পাড়েই রয়েছে শহরের সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র ইন্সটিটিউট হল, পাঠাগার, এবং রবীন্দ্রভবন।
অথচ এরই উল্টো দিকে অবাধে চলছে গঙ্গা দূষণ। কালীবাড়ি থেকে শুরু করে জগদীশপুর পর্যন্ত গঙ্গার পাড়ে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। মিষ্টি এবং চায়ের দোকানের ব্যবহার করা ভাঁড়, প্লাস্টিক ও মাটির খুরি সবই ফেলা হচ্ছে গঙ্গার পাড়ে। কালীবাড়িতে প্রতিদিন পুজো দিতে আসেন শতাধিক মানুষ। অথচ এই এলাকাতেই নদীর পাড়ে ফেলা হয়েছে সব থেকে বেশি আবর্জনা। পুজো দিতে আসা এক মহিলা বললেন, “এতই ময়লা ফেলা হয়েছে, যে নদীর পাড়ের দিকে যাওয়া যায় না।”
একই অবস্থা দেখা যায় হাটকালীগঞ্জ সংলগ্ন নদীর পাড়, খেয়াঘাট প্রভৃতি এলাকায়। অবর্ণনীয় পরিস্থিতি জগদীশপুরের কাছে। সব সময় সেখানে দেখা যায় নদীর পাড়ে ভাসছে মৃত পশুর দেহ। কাক এবং কুকুর দেহ নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। এক সময়ে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের বেওয়ারিশ লাশ নিয়ে এসে পুঁতে দেওয়া হত ভাগাড়ের পাশেই। বর্তমানে পুরসভার উদ্যোগে নদীর ধারেই সেগুলি দাহ করে দেওয়া হচ্ছে।
শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, গঙ্গা দূষণ রুখতে কেন্দ্রীয় সরকার নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে। কিন্তু সেগুলির কোনওটিই এখানে মেনে চলা হয় না। নিয়মিত গঙ্গার পাড় থেকে আবর্জনা তুলে নিয়ে যাওয়া হয় না। এর ফলে শুধু যে নদীতেই দূষণ হচ্ছে তা নয়, দূষণ ছড়াচ্ছে অন্যান্য এলাকাতেও।
এই পুরসভা এক সময়ে টানা ছিল বামফ্রন্টের দখলে। নদী দূষণের অভিযোগ ওঠে তাদের আমল থেকেই। ২০১০ সালে ক্ষমতায় আসে বামবিরোধীরা। একই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে তাদেরও বিরুদ্ধে। পুরসভার প্রাক্তন পুরপিতা কংগ্রেসের সাইদুর রহমানের দাবি, “আমি যে কয়েক মাস ক্ষমতায় ছিলাম নিয়মিত সাফাইকর্মীদের দিয়ে শহর-সহ নদীর পাড়ের আবর্জনা তুলে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলতাম। এখন তো দেখছি সেই কাজ আর হচ্ছে না। হুগলি নদীই যেন ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে।’’
অন্য দিকে, বর্তমান পুরপিতা তৃণমূলের দেবদাস ঘোষ বলেন, “রাস্তার অবস্থা খারাপ। তাই নিয়মিত হুগলি নদীর ধার থেকে বর্জ্য সাফ করা হয় না। তবে সপ্তাহে এক দিন করে আবর্জনা তুলে ফেলা হয়।” ভাগাড় সরিয়ে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত জায়গা খোঁজা হচ্ছে বলেও জানান দেবদাসবাবু। তাঁর আরও দাবি, “বৈদ্যুতিক চুল্লির জন্য দু’টি জায়গা দেখা হয়েছে। আশা করা যায় শীঘ্রই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.