উত্তেজনায় ঠাসা সপ্তাহ শুরু আজ
মার্চের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি। বাজেটের সময় এল কাছে। লগ্নিকারী চাকুরের তাই দু’চোখে ঘুম নাই। কী জানি কী লেখা আছে।
শুধু কি বাজেট? কেন্দ্রীয় বাজেটের দু’দিন আগে রেল বাজেট এবং ঠিক আগের দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি পর্যালোচনা ও আর্থিক সমীক্ষা পেশ। যেন উত্তেজনায় ঠাসা পরপর এক দিনের ক্রিকেট ম্যাচ। অর্থাৎ উত্তপ্ত সপ্তাহ শুরু সোমবার থেকেই। এই দিন থেকেই বসছে বাজেট অধিবেশন। নিঃসন্দেহে এ সপ্তাহের ব্যস্ততম মানুষ প্রণব মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার নগদ জমার অনুপাত এক ধাক্কায় ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্ণধার ডি সুব্বারাও ঋণনীতির আগেই নিজের কাজ অনেকটা এগিয়ে রেখেছেন। সুতরাং নজর এখন মূলত কেন্দ্রীয় বাজেটের দিকে।
আশা আছে, আশঙ্কাও আছে। সাধারণ মানুষ অবশ্যই ভাবছেন, সংসদের অর্থনীতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সুপারিশ মেনে করহীন আয়ের মাত্রা বাড়িয়ে করা হবে বার্ষিক ৩ লক্ষ টাকা। অন্য দিকে বাড়ানো হতে পারে কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পে লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা। কোম্পানি করের বিশেষ পরিবর্তন হবে না বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বিপুল রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে বিভিন্ন পণ্যে বাড়ানো হতে পারে উৎপাদন শুল্ক। পরিষেবা করের আওতায় আনা হতে পারে নতুন কিছু ক্ষেত্র। এক দিকে নতুন করের বোঝা যেমন চাপতে পারে, অন্য দিকে বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনে কংগ্রেসের বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাজেটে থাকতে পারে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু চমক। প্রস্তাবিত প্রত্যক্ষ কর বিধির (ডিটিসি) কতটা আগামী আর্থিক বছরে চালু করা যায়, তা-ই এখন দেখার। বাজেটের আগে অথবা পরে পেট্রোলের দাম যে বাড়তে চলেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
পাশাপাশি, রেল বাজেটে যদি পণ্য-মাসুল বাড়ানো হয়, তবে যে তা আবার মূল্যবৃদ্ধির হারকে উস্কে দেবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এর পর থাকবে কেন্দ্রীয় বাজেটের শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব। করহীন আয়ের মাত্রা যদি বাড়ানো হয়, তবে মানুষের হাতে থাকবে অতিরিক্ত টাকা। সিআরআর হ্রাস করায় বাজারে নগদে ৪৮,০০০ কোটি টাকার জোগান বাড়বে। অর্থাৎ আবার নতুন করে শক্তি ফিরে পেতে পারে খানিকটা ঝিমিয়ে-পড়া মূল্যবৃদ্ধির হার। এ সব কথা মাথায় রেখে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখনই সুদ কমানোর পথে নাও হাঁটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। চরম আশাবাদীদের অবশ্য ধারণা, ১৫ মার্চ সুদের হার ১৫ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তা যদি হয়, তবে বুল-রা আবার বাজার দাপিয়ে বেড়াবে, সন্দেহ নেই।
গত বছর বাজেট পেশের আগের মুহূর্তে অর্থমন্ত্রী। ফাইল চিত্র
পরিস্থিতি এখন এমন, যেখানে বুল বা বেয়ার, কাদের পাল্লা ভারী, তা আদৌ স্পষ্ট নয়। অর্থাৎ বাজেট পর্যন্ত বাজারে অস্থির অবস্থা চলবে বলে মনে করা হচ্ছে। গ্রিসের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় এবং সিআরআর নির্ধারিত দিনের আগেই আশার তুলনায় বেশি হ্রাস পাওয়ায় শুক্রবার বাজার ঝলকে ওঠে। পরপর কয়েক দিন পতনের পর এক ঝটকায় সেনসেক্স ওঠে প্রায় ৩৫৮ পয়েন্ট। সাময়িক স্বস্তি ফেরে মানুষের মনে। তবে বাজার পাকাপাকি দিশা পাবে সংসদে বাজেট পেশ হওয়ার পরে।
এর এক মাসের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে চতুর্থ ত্রৈমাসিক তথা ২০১১-’১২ সালের বার্ষিক ফলাফল প্রকাশের পালা। এর পর থাকবে বর্ষা নিয়ে আশা-আশঙ্কার পর্ব।
অর্থাৎ বাজারে এখন উত্তেজনা থাকবে। এই সময়ে সজাগ থাকতে হবে লগ্নি- কারীদের। কেনা ও বিক্রির সুযোগ সদ্ব্যবহার করতে হবে প্রতিটি ধাপে।
আর্থিক বছরের শেষ দিকে নতুন বিমা তথা বিনিয়োগ প্রকল্প বাজারে আনার রেওয়াজ আছে জীবন বিমা নিগমের (এলআইসি)। এ বার এলআইসি যে-প্রকল্পটি বাজারে এনেছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘জীবন বৃদ্ধি’। অর্থাৎ একই প্রকল্পে জীবনবিমা আছে, আছে বৃদ্ধিও। এটি ১০ বছর মেয়াদের একটি একক প্রিমিয়াম প্রকল্প। ন্যূনতম প্রিমিয়াম ৩০ হাজার টাকা। বিমার সুবিধা পাওয়া যাবে প্রিমিয়ামের ৫ গুণ, অর্থাৎ অন্ততপক্ষে ১.৫ লক্ষ টাকা। যাঁদের অন্য কোনও বিমা নেই, তাঁদের জন্য বেশ উপযুক্ত। বিমার পাশাপাশি আছে বৃদ্ধিও।
বিপণনকারীদের হিসাব অনুযায়ী ৪৫ বছর বয়স্ক কোনও ব্যক্তি ১ লক্ষ টাকা লগ্নি করলে তিনি বিমার সুবিধা পাবেন ৫ লক্ষ টাকা। মেয়াদ শেষে তাঁর হাতে আসবে কমপক্ষে ১,৮৩,৪৪৮ টাকা। এ ছাড়া তিনি পেতে পারেন লয়্যালটি বোনাস। বয়স কম হলে বাড়বে প্রাপ্তিযোগ। যেমন ২৫ বছর বয়সে কেউ ১ লক্ষ টাকা প্রিমিয়াম জমা করলে মেয়াদ শেষে পাবেন ২,০০,৯৪৮ টাকা। এ ছাড়া লয়্যালটি বোনাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। লগ্নির উপর এবং মেয়াদ শেষে প্রাপ্তির উপর করছাড়ের সুবিধা আছে বলে দাবি করা হয়েছে। ৮ থেকে ৫০ বছর বয়স্ক যে-কেউ এই বিমা কিনতে পারেন। ঝুঁকির দিক থেকে তো বটেই, বিনিয়োগের দিক থেকেও প্রকল্পটির আকর্ষণ কম নয়। করছাড়ের সুবিধা ধরলে ২০ শতাংশ এবং ৩০ শতাংশ করের আওতায় যাঁরা পড়েন, তাঁদের কাছে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাঙ্ক জমার তুলনায় আদৌ খারাপ নয়। প্রকল্পটিতে লগ্নির কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। যাঁদের জীবনবিমা এখনও করা হয়নি, অথবা কম মূল্যের করা আছে, তাঁদের জন্য প্রকল্পটি উপযুক্ত হতে পারে। কম বয়স্করা করতে পারেন ফেরত লাভের কথা মাথায় রেখে এবং ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়স্করা ঝুঁকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.