খুনের অভিযোগ পূর্বস্থলীতে
পোড়া বাড়িতে তিন দেহ উদ্ধারে গ্রেফতার যুবক
পোড়া বাড়ি থেকে তিনটি মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। পূর্বস্থলীর তামাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবারই আটক করা হয়েছিল। রবিবার তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিনই মৃত জয়দেব হাজরার বাড়ির লোক পূর্বস্থলী থানায় একটি খুনের অভিযোগ করে পুলিশের কাছে ঘটনার তদন্তের দাবি জানান।
শনিবার সকালে তামাঘাটা গ্রামে পাটকাঠি দিয়ে গড়া একটি ভস্মীভূত ঘর থেকে সাবিত্রী মণ্ডল (৪২), তাঁর মেয়ে গীতা মণ্ডল (১০) ও জয়দেব হাজরা (৪৫) নামে এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্বামী-বিচ্ছিন্না সাবিত্রীদেবীর সংসার চলত তাঁত বুনে। গত ছ’সাত বছর ধরে কমলাপুর গ্রামের জয়দেববাবুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গীতা স্থানীয় স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
এই ঘটনা নিয়ে নানা ধন্দ তৈরি হয়। প্রশ্ন ওঠে, পাটকাঠির ঘরে আগুন লাগলেও ভিতর থেকে কেউ আঁচ পেলেন না কেন? যদি তা পেয়ে থাকেন, তবে কেন দরজা খুলে বা বেড়া ভেঙে তাঁরা বেরিয়ে এলেন না? তিন জন মানুষ দগ্ধ হচ্ছেন, তবু কেন পড়শিরা কোনও সাড়াশব্দ পেলেন না? পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, সাবিত্রীদেবী ও জয়দেববাবুর দেহ পাশাপাশি রয়েছে। কিছু দূরে পড়ে রয়েছে গীতার দেহ। বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলে তিন জনের দেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকত বলে অনুমান পুলিশের। কিন্তু দু’টি দেহ মিলেছে পাশাপাশি শায়িত অবস্থায়। ঘটনার পরে এই সব প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি। তাই নিছক অগ্নিকাণ্ডের জেরেই দুর্ঘটনা, প্রাথমিক ভাবে তা মনে করছে না পুলিশ।
পুড়ে যাওয়া বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
যে বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, তার পাশেই বাস শচীন বিশ্বাসের। শনিবার ঘটনাস্থলের কাছে ভাগীরথীর পাড় থেকে একটি ব্যাটারি-হীন মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ। সেটির মালিক শচীন। পুলিশ জানায়, শচীন দাবি করেন, তাঁর ছেলে ভুল করে ফোনটি ওই জায়গায় ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু তাঁর ছেলেকে জিজ্ঞাসা করা হলে জানায়, ফোন ওই জায়গায় ফেলে গিয়েছে তার বাবা। পুলিশ জানায়, কথায় অসঙ্গতি ধরা পড়ায় শচীনকে শনিবারই আটক করা হয়। তাঁকে জেরা করে বেশ কিছু তথ্য মেলে। রবিবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আজ, সোমবার তাঁকে কালনা আদালতে তোলা হবে। তবে শচীনের থেকে কী তথ্য মিলেছে, তা তদন্তের স্বার্থে পুলিশ জানাতে চায়নি।
শনিবার রাত ৮টা নাগাদ তামাঘাটা গ্রামে যায় দুই সদস্যের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দল। তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক তদন্তের পরে দুই বিশেষজ্ঞ নিছক অগ্নিকাণ্ডের জেরে তিন জনের মৃত্যু হয়নি বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এ দিকে, মৃত জয়দেববাবুর ভাই বিশ্বজিৎ হাজরাও ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা বলে মানতে চাননি। রবিবার পূর্বস্থলী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, “যে ভাবে দাদা ও ওই মহিলার দেহ পাশাপাশি পড়েছিল, তা থেকে মনে হচ্ছে এটি একটি খুনের ঘটনা। পুলিশ তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করুক।”
মহকুমার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “তদন্ত চলছে। ফরেন্সিক ও ময়না-তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।” শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি ও স্থানীয় বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। মহকুমাশাসক বলেন, “মৃতদেহের অবস্থান দেখে ও এলাকাবাসীর কথাবার্তা শুনে পুরো ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশি তদন্তেই বোঝা যাবে, কী ঘটেছিল।” বিধায়ক তপনবাবু বলেন, “বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। আশা করি, পুলিশ দ্রুত ঘটনার কিনারা করবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.