বিবেকানন্দের স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ দার্জিলিং রাজবাড়িতে
পাহাড়ের কোলে নীল গম্বুজ দেওয়া প্রাসাদোপম বাড়িটি নজরে পড়ে দূর থেকেই। দার্জিলিঙে বর্ধমানের রাজবাড়ি এই উদয়মহলের প্রধান ফটকের বাঁ দিকেই রয়েছে পাথরের তৈরি একটা দোতলা বাড়ি। চন্দ্রকুঠী। তৈরি হয়েছিল ১৮৬০ সালে। তার একতলায় বিশাল হলঘরের ডান পাশের একটি ঘরে ১৮৯৭ সালের কয়েকটা দিন কাটিয়েছিলেন বিবেকানন্দ। তখন তিনি অসুস্থ। দার্জিলিং থেকে ফিরে ৫ মে আমেরিকাবাসী এক ভক্তকে চিঠিতে লিখলেন, “দার্জিলিঙে থাকতে আমি সম্পূর্ণ রোগমুক্ত হয়েছিলাম; ..দার্জিলিঙে শুধু মানসিক-চিকিৎসা-সহায়েই আমি নীরোগ হয়েছিলাম।”
সেই ঘর লাগোয়া উত্তরের ঘেরা বারান্দায় বড় বড় কাচের জানলা। মেঘমুক্ত দিনে সেই জানলা খুললেই সামনে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। সেই ঘরে এখন আসবাব নেই। কাঠের মেঝে। এক পাশে ফায়ার প্লেস। এই চন্দ্রকুঠী এখন অতিথি নিবাস করতে চান বর্ধমান রাজবাড়ির বর্তমান কর্তারা। মহারাজ বিজয়চাঁদের অতিথি হয়ে চন্দ্রকুঠীতে উঠেছিলেন বিবেকানন্দ। বিজয়চাঁদের কনিষ্ঠ পৌত্র প্রণয়চাঁদ মহতাব বলেন, “বাড়িটিই অভিজাত ট্যুরিস্ট লজ হিসেবে তৈরি করা হবে। যদি রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ বিবেকানন্দের স্মৃতিধন্য এই বাড়ির বাইরে স্মারক ফলক বসাতে চান, আমাদের আপত্তি নেই।”
এই সেই চন্দ্রকুঠী। নিজস্ব চিত্র
রামকৃষ্ণ মিশনের জলপাইগুড়ি শাখার সেক্রেটারি স্বামী অক্ষয়ানন্দজী মহারাজের কথায়, “স্মারক ফলক আমরা অবশ্যই বসাব।”
প্রণয়চাঁদ বলেন, ‘‘রাজনৈতিক যে অস্থিরতা চলছিল, তা এখন শান্ত। পাহাড়ে পর্যটক বেড়েছে। আমরাও চাইছি বাড়িটি সংস্কার করে পর্যটকদের থাকার সুব্যবস্থা গড়ে তুলতে।” রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ‘‘বিবেকানন্দের স্মৃতিধন্য বাড়িটি সংরক্ষণের ব্যাপারে আমরা উৎসাহী, কিন্তু বাড়িটি ব্যক্তিগত মালিকানায় রয়েছে। তাই সে কাজ করা যাচ্ছে না।” মিশন কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা, মালিকপক্ষ ঐতিহ্যপূর্ণ বাড়িটির স্মৃতি রক্ষা করে, মর্যাদা সহকারে ব্যবহার করুক।
বিবেকানন্দ ওই একই বছরে দার্জিলিঙের আর একটি বাড়িতেও বেশ কয়েকদিন কাটিয়েছিলেন। সপার্ষদ উঠেছিলেন দার্জিলিঙের সরকারি উকিল এবং তাঁর অনুরাগী মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ‘ব্যালেন ভিলা’-তে। সেই বাড়ির এখন কোনও চিহ্ন নেই। তা ভেঙে অন্য ভবন তৈরি হয়ে গিয়েছে। ওই একই বছরে ১৯ মার্চ এ বাড়িতে বসেই আর এক ভক্তকে বিবেকানন্দ চিঠিতে লিখেছিলেন, “আমার মনে হয়, পর্বতরাজ হিমালয়ের হিমানীমণ্ডিত শিখরগুলি মৃতপ্রায় মানবদিগকেও সজীব করিয়া তোলে।” এক দিনের জন্য কলকাতায় এসে উদ্বিগ্ন মা সারদাকে জানালেন, ‘মা সেখানে খুব যত্নে ছিলাম। আমার তো মনে হয় শরীর খুব ভাল আছে। ওখানে মহেন্দ্রবাবু এবং তাঁর স্ত্রী আমায় খুব যত্ন করেছেন। আর এই গরমে দার্জিলিং বেশ ঠান্ডা এবং বেড়াতে বেশ আনন্দ বোধ হয়। আমি বেশ বেড়াই এখন।’
দ্বিতীয় ও শেষবার দার্জিলিঙে এসেছিলেন ১৮৯৮ সালের মার্চে। সঙ্গে এসেছিলেন নির্ভয়ানন্দ, স্বামী অখণ্ডানন্দ এবং নিত্যগোপাল বসু। সেবারে বিবেকানন্দ মন্ত্রদীক্ষা দিলেন মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেজ ছেলে ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ভূপেন্দ্রনাথ কলকাতা পুলিশের প্রথম ভারতীয় ডেপুটি কমিশনার হয়েছিলেন। এখানে বসেই বিবেকানন্দ খবর পান কলকাতায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। শোনামাত্রই অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন। ২৯ এপ্রিল এক ভক্তকে জানান, ‘....আমি যে শহরে জন্মেছি, সেখানে যদি প্লেগ এসে পড়ে, তবে আমি তার প্রতিকার-কল্পে আত্মোৎসর্গ করব বলেই স্থির করেছি’। ২ মে রওনা হলেন কলকাতার পথে। আর কখনও তিনি দার্জিলিঙে ফেরেননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.