গরিমায় ঘুণ/২
টানাপোড়েনেই কেটেছে দু’টি বছর, হয়নি উন্নয়ন
ক্ষয় শুধু ভিতরে নয়। বাইরেও। দু’শো বছরপূর্তির মুখে কলকাতা জাদুঘরের বেহাল দশা সত্যিই চোখে পড়ার মতো!
দু’শো বছরের পুরনো বাড়ির গায়ে আনাচে-কানাচে গজিয়ে উঠেছে বটগাছ। সংস্কারের অভাবে বেআব্রু কলেবর। ভিতরে অনেক গ্যালারিতে হাওয়া-বাতাস খেলে না, দমচাপা পরিবেশে সেখানে বেশিক্ষণ টেকা দায়। দু’-একটা বাদ দিলে অধিকাংশ গ্যালারিতে মলিনতার ছাপ। যত্নের এত অভাব কেন?
জাদুঘর-সূত্রের খবর: গত প্রায় দশ বছরে হরেক দুর্নীতির নালিশ নিয়ে সিবিআই-তদন্ত এবং বুদ্ধমূর্তি চুরি ঘিরে পুলিশি তৎপরতার জেরে এখানকার ডিরেক্টরেরা এতই ব্যস্ত-তটস্থ থেকেছেন যে, উন্নয়ন বা সংস্কারে নজর দেওয়ার সুযোগ হয়নি। জাদুঘরের ব্যবস্থাপনা বা নিয়োগ-পদ্ধতি নিয়েও কর্মীমহলে যথেষ্ট অসন্তোষ। ‘ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি অনন্ত দাসের অভিযোগ, “কাজ হবে কী করে? উঁচু পদে যাঁদের বসানো হচ্ছে, তাঁদের কেউ জাদুঘরের কাজে অভিজ্ঞ নন!”
দ্বিশত বর্ষপূর্তির মুখে জাদুঘরের হাল ফেরাতে নেমেছেন বর্তমান অধিকর্তা অনুপ মতিলাল। কিন্তু কর্তব্য ও সমস্যার পাহাড় পেরিয়ে অভিষ্টে পৌঁছানোর পক্ষে দু’বছর নেহাতই কম। উপরন্তু এখানে তিনি ‘আংশিক সময়ের’ ডিরেক্টর। পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতিকেন্দ্রের পূর্ণ সময়ের অধিকর্তা অনুপবাবু এই ভার নিয়েছেন জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের অনুরোধে। দু’শো বর্ষপূর্তি উদ্যাপনের তোড়জোড় অবশ্য শুরু হয়েছে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার অনেক আগে, ২০০৮-এ। যদিও কাজ বিশেষ এগোয়নি। কেন?
বহিরঙ্গে কলি ফেরানোর কাজ চলছে। কলকাতা জাদুঘরের হাল ফেরাতে উদ্যোগ। —নিজস্ব চিত্র
কারণ, বিভিন্ন পরিকল্পনা ঘিরে বিভিন্ন মহলে টানাপোড়েন। সমারোহের প্রস্তুতির তদারকিতে একটি ‘বাইসেন্টিনারি ভিশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কমিটি’ গড়া হয়েছিল। জাদুঘর ও তার পরিপার্শ্বকে ঢেলে সাজতে কমিটি এক বেসরকারি স্থপতি সংস্থাকে পরিকল্পনা তৈরির বরাত দেয়। জাদুঘর, আর্ট কলেজ, জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’র সব ক’টা বাড়ি এবং ওই চত্বরে অবস্থিত ‘জিঞ্জিরা তালাও’ নামক প্রাচীন পুকুরটি নিয়ে তারা একটি সুসংহত উন্নয়ন পরিকল্পনাও বানায়। কিন্তু জাদুঘরের ভিতরে-বাইরে ভয়ানক বিরোধিতার মুখে সেটি বাতিল করে দেন রাজ্যপাল। পরিকল্পনার পক্ষে-বিপক্ষের লড়াইয়েই গড়িয়ে যায় ২০০৯-১০। থমকে থাকে প্রস্তুতি।
এ বার কি তাতে অগ্রগতি হচ্ছে?
অনুপবাবু বলেন, “এখন জাদুঘর ভবনের সার্বিক সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারি একটি সংস্থাকে। কাজ শিগগিরই শুরু হবে। গ্যালারি সংস্কার ও দর্শকদের তথ্য জোগাতে টাচ স্ক্রিন কিয়স্ক বসানোরও কথা আছে।”
তবে ২০১৪-র ফেব্রুয়ারির মধ্যে এত সব কাজ সেরে ফেলা যে সম্ভব নয়, কর্তৃপক্ষ তা-ও বিলক্ষণ জানেন। প্রধান সমস্যা যোগ্য ও উৎসাহী কর্মীর। কলকাতা জাদুঘরে এই মুহূর্তে ৫৫টি পদ খালি। রাজ্যপালের বিশেষ আদেশবলে কিছু কিছু শূন্য পদে অস্থায়ী ও ঠিকা-কর্মী নেওয়া হচ্ছে, যা নিয়ে আবার স্থায়ী কর্মীদের বিস্তর অভিযোগ। অভিযোগ অধিকর্তার কাজের ‘ধরন’ নিয়েও। আমজনতা, বিশেষত ছাত্রছাত্রীদের ‘জাদুঘরমুখী’ করতে ‘ঘুড়ি উৎসব’ বা ‘পুতুলনাচ উৎসব’-এর মতো নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনকে পুরনো কর্মীদের একাংশ ভাল চোখে দেখছেন না। যদিও অনুপবাবুর দাবি, “তরুণ প্রজন্মকে আকর্ষণ করতে অনুষ্ঠানগুলো বেশ সহায়ক হয়েছে।”
কিন্তু বন্ধ হয়ে যাওয়া গ্যালারি? সেগুলো কি আর খুলবে না? বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ মিউজিয়ামের তালিকায় কলকাতা জাদুঘরের নাম একেবারে গোড়ার দিকে। অন্য সব সংগ্রহশালা আধুনিকতার পথে এগোলেও সেই কলকাতা কেন ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে পুরনো গ্যালারি নিয়ে?
অধিকর্তা আশ্বাস দিচ্ছেন, “দু’বছরের মধ্যে সব ক’টা বন্ধ গ্যালারি নতুন ভাবে সাজিয়ে খুলে দেওয়া হবে। তার পরিকল্পনা চলছে।”
আশ্বাসে ভরসা রাখা ছাড়া উপায় কী?

(শেষ)
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.