বৌভাত সেরে ফেরার পথে মাঝরাতে কনেযাত্রী বোঝাই বাস উল্টে মৃত্যু হল সাত জনের। গুরুতর আহত ১৬ জন।
বর্ধমানের গলসি থেকে বীরভূমের নানুরে যাওয়ার পথে শুক্রবার রাত সওয়া ১টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। বর্ধমানেরই আউশগ্রামে দারিয়াপুর ষষ্ঠীতলার কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তা থেকে ফুট বিশেক নীচে নয়ানজুলিতে উল্টে পড়ে বাসটি। পুলিশ জানায়, বাসের ছাদে বসে ছিলেন কয়েক জন। বুদ্ধ মেটে (৪০), অর্জুন মেটে (১২), নব মেটে (২৭), দেবব্রত ঘোষ (২২) ও ধনেশ্বর সর্দার (২৭) নামে পাঁচ জন উল্টে যাওয়া বাসের নীচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। হাকিম শেখ (৩০) ও চাঁদ কবিরাজ (৩২) নামে দুই যাত্রী ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর জখম হন। গুসকরা স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে নব মেটের বাড়ি নানুরের চারকলগ্রামে, ধনেশ্বর মড্ডা গ্রামের বাসিন্দা। বাকি সকলেই স্থানীয় গড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আহতেরা বর্ধমান মেডিক্যালেই ভর্তি আছেন। এর মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আহতেরা জানান, কনে শ্রাবণী মেটের বাড়ি গড়পাড়ায়। আশপাশের গড়পাড়া, খুজুটিপাড়া, চারকলগ্রাম থেকেও আত্মীয়-পরিজনেরা গলসির কোলকোল গ্রামে বৌভাত খেতে যান। হাসপাতালে শুয়ে গড়পাড়ার নাড়ুগোপাল মেটে বলেন, “রাত বারোটা নাগাদ গ্রামের দিকে রওনা দিই। আচমকা একটা বাঁকের মুখে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে বাঁ দিকে উল্টে পড়ে বাস। তার পরে আর কিছু মনে নেই।” বর্ধমানেরই মঙ্গলকোটের উজিরপুর থেকে গিয়েছিলেন পূর্ণিমা ওরফে অনিমা মাজি। তাঁর কথায়, “বাসে উঠে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ ঝাঁকুনি খেয়ে ঘুম ভাঙে। অনেকের নীচে আমি চাপা পড়ে গিয়েছিলাম। ঘণ্টাখানেক পরে স্থানীয় বাসিন্দারা বাসের জানলা ভেঙে আমাকে উদ্ধার করেন।”
শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে বাসটি উল্টেছে সেখানে রাস্তার তুলনায় সরু কালভার্ট আছে। তীব্র গতির কারণেই চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি বলে যাত্রীদের অভিযোগ। গড়পাড়ার আনন্দ রায় বলেন, “বাসটি প্রচণ্ড বেগে চলছিল। বারবার চালককে বারণ করছিলাম, এত জোরে না চালাতে। কিন্তু উনি কারও কথা শোনেননি।”
দুপুরে বর্ধমানের ডিএসপি (সদর) অম্লানকুসুম ঘোষ ঘটনাস্থলে এলে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর কাছে অভিযোগ করেন, এই বাঁকের মুখে সরু কালভার্টে এর আগেও তিন-চার বার এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা কালভার্ট চওড়া দাবি জানালে ডিএসপি তা বিবেচনার আশ্বাস দেন। মৃত বুদ্ধ মেটের দাদা নির্মল মেটে বলেন, “আমাদের পরিবারের সকলে খেতমজুর। ভাড়া করা বাসে বৌভাতে গিয়ে এ রকম ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটবে তা ভাবতে পারিনি।” |