মা ও মেয়ে-সহ তিন জনের অগ্নিদগ্ধ দেহ পূর্বস্থলীর তামাঘাটা গ্রামের একটি ভস্মীভূত ঘর থেকে শনিবার সকালে উদ্ধার করল পুলিশ। মৃতদের নাম সাবিত্রী মণ্ডল (৪২), গীতা মণ্ডল (১০) ও জয়দেব হাজরা (৪৫)। কী ভাবে ঘরে আগুন লাগল এবং আগুন লাগার পরে তাঁরা ঘর থেকে বাইরে বেরোনোর চেষ্টাই বা করেননি কেন, তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১ বছর আগে নদিয়ার মাঝেরগ্রামের সাদাজোলা এলাকায় বিয়ে হয়েছিল সাবিত্রীদেবীর। কিন্তু তিনি এখন স্বামী-বিচ্ছিন্না। বছর সাতেক আগে তিনি মেয়েকে নিয়ে তামাঘাটা গ্রামে তাঁর দিদিমার বাড়িতে চলে আসেন। পাটকাঠির একটি ঘরে মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। সংসার চলত তাঁত বুনে। তাঁর মেয়ে গীতা স্থানীয় জিএসএফপি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। গত ছ’সাত বছর ধরে গ্রাম থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কমলাপুর গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় তাঁতশ্রমিক জয়দেববাবুর সঙ্গে তাঁর একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাঁর স্ত্রী দিল্লিতে এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন। সেখানে পরিচারিকার কাজ করেন তিনি। তাঁর দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
গ্রামবাসীরা জানান, শুক্রবার রাতে দোলযাত্রা উপলক্ষে গ্রামে একটি বাউলগানের অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানে মা-মেয়েকে দেখেছিলেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের সঙ্গে জয়দেববাবুও ছিলেন। রাত ১টা নাগাদ তাঁরা ওই আসর ছেড়ে উঠে যান। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত ৩টে নাগাদ সাবিত্রীদেবীর ঘরে আগুন দেখতে পান এলাকার বাসিন্দারা। ওই বাউলগানের আসর থেকে মাইকে সেই কথা ঘোষণাও করা হয়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা জল ঢালার আগেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় ঘরটি। গোয়ালঘরে থাকা কয়েকটি গরুকে উদ্ধার করেন গ্রামবাসীরা। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রামবাসীরা হাতের চুড়ি দেখে সাবিত্রীদেবীর দেহ শনাক্ত করেন। কমলাপুর থেকে তামাঘাটা গ্রামে এসে জয়দেববাবুর ভাই বিশ্বজিৎ হাজরা তাঁর দেহ শনাক্ত করেন। তাঁদের দু’জনের মৃতদেহ পাশাপাশি ছিল। বিশ্বজিৎবাবু জানান, “দাদাকে ওই সম্পর্ক রাখতে বারণ করা হয়েছিল। সাবিত্রীদেবীকেও বারণ করা হয়েছিল। গত ৩ বছর ধরে দাদা কোনও সম্পর্ক রাখত না। কিন্তু শুক্রবার যে কেন দাদা তামাঘাটা গ্রামে এল বা কীভাবে এই মৃত্যু হল, বুঝতে পারছি না।”
বিধায়ক (পূর্বস্থলী দক্ষিণ) তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘরের ভিতর আগুনে পুড়ে তিন জন মারা গেল। আশেপাশে কেউ তাঁদের চিৎকার শুনতে পেলেন না। তাঁরা নিজেদের বাঁচাতে ঘর থেকে বাইরেও আসার চেষ্টা করলেন না। ঘটনাটি স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না। পুলিশকে তদন্ত করতে বলা হচ্ছে।” সুমিতাদেবীও বলেন, “ঘটনাটি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। তদন্তের পর সব জানা যাবে।” মহকুমা পুলিশের এক কর্তা জানান, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল শীঘ্রই ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণে আসবেন। শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে যান কালনার মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি, এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ সরকার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী। |