মানবাধিকার কর্মীর ভুয়ো পরিচয় দিয়ে লোক ঠকানোর ব্যবসা ফেঁদেছিল একটি চক্র। লোক আদালতে যাঁরা মামলার নিষ্পত্তির জন্য আসতেন, তাঁদের মামলা জিতিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বহু টাকা আত্মসাৎ করত এই চক্রটি। বারাসতের ডাকবাংলো মোড়ে রীতিমতো ‘অফিস’ও খুলে বসেছিল তারা। মঙ্গলবার রাতে এক মহিলা-সহ চক্রের দুই পাণ্ডাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
|
বারাসতে ধৃত শীলা মিশ্র।
নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ জানায়, বারাসতে লোক আদালতে আসা লোকজনের উপরে ‘নজরদারি’ চালাত ভুয়ো মানবাধিকার সংস্থাটির এজেন্টরা। সেখান থেকেই ‘শিকার’ ধরত তারা। কী ভাবে পুলিশের নজরে এল বিষয়টি?
২০১০ সালে বারাসত লোক আদালতের জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রে জমি-জায়গা সংক্রান্ত একটি মামলা করেন দত্তপুকুরের কাশেমপুরের বাসিন্দা পবন পাল। অভিযোগ, সেই মামলার ব্যাপারেই তাঁর শ্যালক শুকদেব কোনাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শীলা মিশ্র ও উত্তম সাহা। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, মধ্যবয়সী ওই মহিলা নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন সরকারি মানবাধিকার কমিশনের অধীনস্থ ‘সি প্রোটেকশন অব ডেমোকেট্রিক হিউম্যান রাইটস্’-এর ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে। উত্তম নিজেকে ওই সংগঠনেরই ‘বারাসত ব্লক কমিটির সভাপতি’ বলে দাবি করতেন।
শুকদেববাবু বলেন, “ওঁরা জানান, মামলা জিতিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু সে জন্য খরচ করতে হবে। দু’দফায় বেশ কিছু টাকাও দিয়েছি।” ‘মানবাধিকার কমিশনের’ নামে ছাপানো একটি প্যাডে বারাসত লোক আদালতের বিচারককে লেখা একটি চিঠি শুকদেববাবুদের দেখিয়েছিলেন শীলাদেবী। ‘মানবাধিকার কমিশনের কর্তা’ পরিচয় দিয়ে ওই চিঠিতে শীলাদেবী বিচারককে জানান, তিনি ‘তদন্ত’ করে দেখেছেন, পবনবাবুর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। এ জন্য যেন ওই ব্যক্তি ক্ষতিপুরণ পান। শুকদেববাবুর কথায়, “শীলাদেবী ওই চিঠি দেখিয়ে আমাদের কাছে ২০ লক্ষ টাকা ও জমির আসল দলিল চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, জমি তিনি উদ্ধার করে দেবেন। না হলে মামলা এখানেই শেষ।” ওই চিঠির একটি প্রতিলিপি আদালতেও জমা দিয়েছিলেন মহিলা। যা পরে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ দিকে, টাকার দাবি যে ভাবে বেড়ে চলেছিল, তাতে এক সময়ে সন্দেহ হয় শুকদেববাবুর। বারাসত লোক আদালতের বিচারককে সমস্ত ঘটনা জানান তিনি। আদালত ঘটনাটি খতিয়ে দেখে বিজন মিত্র নামে এক আইনজীবীকে তদন্ত করে দেখতে বলেন। ‘জালিয়াতি’ ধরা পড়ে ওই তদন্তে। বিজনবাবু ২ মার্চ বারাসত থানায় শীলাদেবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। মঙ্গলবার পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, শীলাদেবীর বাড়ি নিউ ব্যারাকপুরের ঘোলায়। উত্তম বারাসতেরই বাসিন্দা। তাঁর গাড়ির ব্যাটারির দোকান আছে। বুধবার দু’জনকে বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ জেনেছে, লোক আদালতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল শীলা-উত্তমদের। বারাসত লোক আদালতের কর্মী মিহির মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওঁদের আগে এখানে দেখেছি ঠিকই। কিন্তু প্রতারক বলে বুঝতে পারিনি।” |