|
|
|
|
সূর্যের চিঠি রাজ্যপালকে |
সুশান্তকে খুনের চেষ্টার নালিশে বিস্ময় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর ও কলকাতা |
আদালত-চত্বরে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষকে চটি মারার ঘটনায় অভিযুক্ত শ্যামাপদ কুণ্ডুকে দু’দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিলেন মেদিনীপুরের সিজেএম কল্লোল দাস। সুশান্তবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৩০৭ ধারায় খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ‘গুরুতর’ এবং জামিন-অযোগ্য ওই ধারা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
চটি দিয়ে কাউকে মারার সঙ্গে খুনের চেষ্টার ‘সম্পর্ক’ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলেন ধৃতের আইনজীবী অরূপ বর্মা। তিনি ধৃতের জামিনের আবেদন করেন। অন্য দিকে, পুলিশ ধৃতকে জেরা করার প্রয়োজনে পাঁচ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চায়। কারণ সুশান্তবাবু অভিযুক্তের কাছে আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল বলে দাবি করেছেন। অরূপবাবুর তার প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন, “আমার মক্কেলের কাছ থেকে শুধু চটি উদ্ধার হয়েছে। তবে কি বন্দুক উদ্ধার সাজানোর জন্যই তাঁকে নিজেদের হেফাজতে চাইছে পুলিশ!” বিচারকও তদন্তকারী অফিসারের কাছে জানতে চান, “হেফাজতে চাইছেন। অস্ত্র উদ্ধার করতে পারবেন তো!” শেষমেশ অবশ্য বিচারক দু’দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন।
মামলার ধারা নিয়ে ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী শুভাশিস রায় বলেন, “এসব ক্ষেত্রে বড়জোর ৩২৩ ধারায় ইচ্ছাকৃত আঘাতের জামিনযোগ্য অভিযোগ দায়ের হতে পারে। চটি দিয়ে মারার ঘটনায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ অভাবনীয়!” আইনজীবীদের একাংশের সন্দেহ, খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করার পিছনে মেদিনীপুর থেকে কঙ্কাল-মামলা সরানোর ‘কৌশল’ থাকতে পারে। প্রসঙ্গত, শ্যামপদবাবুর ছেলে বলরাম সুশান্তবাবুর আইনজীবী প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, রানা গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর বাবাকে পাল্টা মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সেই ঘটনায় এদিন প্রদীপবাবু ওই আদালত থেকেই ‘ব্যক্তিগত বন্ডে’ জামিন পান। |
|
অভিযুক্ত শ্যামাপদ কুণ্ডু। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল |
সুশান্তবাবুর ঘটনাটি সামগ্রিক ভাবে প্রাক্তন ও বর্তমান বিরোধী বিধায়কদের ‘নিরাপত্তাহীনতা’র দৃষ্টিতেই দেখছে প্রধান বিরোধীদল সিপিএম। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকে এ দিন চিঠি দিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বিরোধী শিবিরের প্রাক্তন ও বর্তমান বিধায়কদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকার যাতে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে, সে জন্য রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন। বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সুশান্তবাবুর আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনিও রাজ্য পুলিশের আইজি-কে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে বলেছেন।
এর আগে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র নামে জারি ‘বিতর্কিত’ নির্দেশিকার উল্লেখ করে সূর্যবাবু তাঁর চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা একেবারেই ‘নিরপেক্ষ’ নয়। সূর্যবাবু বলেন,
|
তমলুকে সূর্যকান্ত মিশ্র |
“বারবার বলা সত্ত্বেও সুশান্তবাবুকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি। তিনি যে বিধায়ক আবাসে থাকেন, সেখানে কোনও নিরাপত্তা নেই। এরপর খাস বিচারালয়ের চত্বরেই তিনি আক্রান্ত হলেন! স্পিকারকে এবং পুলিশ-প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরেও চিঠি দিয়েছেন। আমি স্বরাষ্ট্রসচিবকে ফ্যাক্স করেছি। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি। জেড প্লাস, ওয়াই প্লাস কারা কী ধরনের নিরাপত্তা পেতে পারেন, তার তালিকা সরকারি কমিটিই তৈরি করেছে। তার পরেও প্রাক্তন বা বর্তমান বিরোধী অনেক বিধায়কই নিরাপত্তা পাননি। তাই রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চেয়েছি।”
স্পিকার বিমানবাবুও বলেছেন, “যে বিধায়কেরা নিরাপত্তা প্রয়োজন বলে মনে করছেন, তাঁদের তা পাওয়া উচিত। সুশান্তবাবু আমায় চিঠি দিয়েছিলেন। আমার সঙ্গে সূর্যবাবু কথাও বলেছিলেন। আমি আইজি-কে ব্যাপারটা দেখতে বলেছি। বিধায়কদের নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা হওয়া উচিত নয়।” এর আগে আরও অন্তত দু’জন বিধায়কের নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যার ক্ষেত্রে স্পিকার হস্তক্ষেপ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, বিধায়কদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে তিনি প্রশাসনকে জানাতে পারেন। কিন্ত প্রশাসন শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেবে, তাতে তাঁর কিছু করার নেই।
বিরোধী দলনেতা-সহ বেশ কিছু বাম বিধায়ক এখন নিরাপত্তা পান। তা হলে কি সুশান্তবাবুর ঘটনার জন্যই তাঁদের অভিযোগ? সূর্যবাবু বলেন, “একাধিক ঘটনা আছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রতিবাদ হয়েছে। এখন একটা সুনির্দিষ্ট ঘটনা ঘটেছে বলে তার কথা বলছি। এই সরকারের প্রশাসনিক অবস্থান হল নিরাপত্তা না-দেওয়া। আর রাজনৈতিক অবস্থান হল লোক লেলিয়ে দেওয়া!”
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগে চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রাম্জের (ভিক্টর) গাড়িতে দুষ্কৃতীদের হামলা হয়। বিধায়কের অভিযোগ করেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে যাদের গ্রেফতার করা হয়, তাদের জামিন-যোগ্য ধারা দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তেরা ছাড়া পেয়ে পাল্টা এফআইআর করে। তার ভিত্তিতে ফরওয়ার্ড ব্লকের কিছু কর্মী-সমর্থকদের জামিন-অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ভিক্টর স্পিকারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। |
|
|
|
|
|