|
|
|
|
সম্পাদকীয় ১... |
সুশাসনের বিকল্প নাই |
আত্মপরিচয়ের খণ্ডিত রাজনীতির দিন ফুরাইয়াছে, এমন কথা বলার সময় নিশ্চয়ই আসে নাই। কিন্তু পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এই রাজনীতির সীমাবদ্ধতার স্পষ্ট সঙ্কেত দিয়াছে। ভারতীয় ভোটাররা ক্রমশ আগের তুলনায় পরিণত হইতেছেন। রামজন্মভূমি মন্দিরের মতো সাম্প্রদায়িক আবেগ উস্কাইয়া যেমন আজ হিন্দুত্বের শিবিরও আর ভোটারদের সম্মুখীন হয় না, একই ভাবে কেবল দলিতের ক্ষমতায়ন কিংবা শিখ পন্থের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়া আজ আর উত্তরপ্রদেশ বা পঞ্জাবের নির্বাচনে জেতা যায় না। ইহা নিঃসন্দেহে ভারতীয় গণতন্ত্রের পরিপক্বতার লক্ষণ, সুতরাং স্বাগত। ভোটদাতারা এখন শাসকদের কাছে সুশাসন চাহেন। তাঁহারা চান বিজলি-পানি-সড়কের সুবন্দোবস্ত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ন্যূনতম বুনিয়াদি পরিষেবা, নিরাপদে চলাফেরা করার নিশ্চয়তা অর্থাৎ সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সুযোগ। এ সবের অতিরিক্ত যদি কিছু শাসকরা দিতে পারেন, তবে সেটা উপরি-পাওনা, তবে এই জিনিসগুলি তাঁহাদের চাই-ই।
আর যাঁহারা এই সুশাসন দিতে দ্বিধাগ্রস্ত কিংবা অপারগ, যত শুকনো আশ্বাস ও উদ্দীপ্ত স্লোগানই দেওয়া হউক, তাঁহারা ব্যালট-বাক্সে প্রত্যাখ্যাত হইবেন। উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীর সরকার ঠিক এই কারণেই জনাদেশ হইতে বঞ্চিত। এমনকী দলিতরাও সর্ব ক্ষেত্রে তাঁহার পাশে দাঁড়ান নাই, যেহেতু তিনি রাজ্যে সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা কায়েম করিতে চেষ্টিত হন নাই। মুলায়ম সিংহ যাদবের ভূতপূর্ব সরকারের অপশাসনের স্মৃতিও সাময়িক ভাবে তাঁহাদের কাছে ম্লান হইয়া গিয়াছে, কিংবা হয়তো মায়াবতীকে শিক্ষা দিতে তাঁহারা মুলায়ম সিংহকে আরও একটা সুযোগ দিতে চাহিয়াছেন। মুলায়ম ব্যর্থ হইলে যেমন সুযোগ আবার মায়াবতীর, বা অন্য কাহারও, মিলিতে পারে। পঞ্জাবের গত ছেচল্লিশ বছরের নির্বাচনী ইতিহাসে শাসক দলের ক্ষমতায় ফিরিবার নজির নাই। কিন্তু সে রাজ্যের অকালি-বিজেপি জোট সরকার রাজ্যবাসীর ন্যূনতম চাহিদা মিটাইতে সফল কর্মসূচি গ্রহণ করিয়া সেই নজিরই সৃষ্টি করিয়াছে। তুলনায় কংগ্রেস নেতারা ডেরা সাচ্চা সৌদায় উপর্যুপরি সফর করিয়া শিখ আবেগে সুড়সুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করিলেও শিখ জনমতকে প্রভাবিত করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন।
গোয়ায় কংগ্রেস মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ এবং জনসাধারণের ন্যূনতম প্রাপ্যগুলির সংস্থানে ঔদাসীন্য শাসকদের প্রত্যাখ্যান করিতে ভোটদাতাদের প্রেরিত করিয়াছে। আবার মণিপুরে কংগ্রেসের ইবোবি সিংহ সরকারের সুশাসন দেওয়ার প্রয়াস কংগ্রেসকে উপর্যুপরি তিন বার রাজ্যে ক্ষমতাসীন হইতে সাহায্য করিয়াছে। উত্তরাখণ্ডে বিজেপি সরকারের দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ তাহাকে এতটাই অপ্রিয় করিয়া তোলে যে সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বদল করিয়া পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির দক্ষ প্রশাসক খান্ডুরিকে বসাইয়াও শেষ রক্ষা করা যায় নাই। তবু যে বিজেপি শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার করমর্দনের দূরত্বে পৌঁছাইয়া গিয়াছে, খান্ডুরির সংক্ষিপ্ত সুশাসনই তাহা সম্ভব করিয়াছে। ভোটাররা শাসকদের কাছ হইতে সু-রাজ চান, আগের সরকারের মুণ্ডপাত, যাবতীয় অপশাসনের জন্য পূর্ববর্তী সরকারের উপর দায় চাপানো কিংবা ‘জনপ্রিয়’ নূতন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের গল্প শুনিতে শুনিতে তাঁহারা বিরক্ত হইয়া ওঠেন। তাঁহারা দেখিতে চাহেন, যে-দলকে তাঁহারা ভোট দিয়া শাসক বানাইয়াছেন, তাহার সরকার ও মন্ত্রীরা কাজ করিতেছেন, না অ-কাজ, তাঁহারা জনকল্যাণে দায়বদ্ধ, নাকি স্বজনপোষণে নির্লজ্জ, সর্বোপরি তাঁহারা প্রশাসক হিসাবে নিরপেক্ষ, নাকি দলীয় কর্মী-সমর্থক ও বশংবদদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। যত বিপুল ভোটেই একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হউক না কেন, জনসাধারণের নজরদারির এই পরীক্ষায় কৃতকার্য হইতেই হইবে। |
|
|
|
|
|