উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্নীতির মামলায় যাঁদের নামে অভিযোগ রয়েছে, সেই রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের ব্যাপারে অনুমতি দিল কর্মসমিতি। সোম ও মঙ্গলবার দুদিন ধরে কলকাতায় নতুন কর্মসমিতির বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি, ওই মামলায় প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষকান্তি সাহার বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের জন্য পুলিশ অনুমতি চেয়ে যে আবেদন করেছে তা আচার্যের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্মসমিতি। এই ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অরুণাভ বসু মজুমদার বলেন, “সরকারি নির্দেশ মেনে কর্মসমিতি গঠনের পরে প্রথম বৈঠকে ২০০ টির বেশি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকার ও প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষকান্তি সাহার বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের জন্য পুলিশের অনুমতি চাওয়ার বিষয়টি পেশ হয়। দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে চার্জসিট পেশের ব্যাপারে কর্মসমিতির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা মত দিয়েছেন। পীযূষবাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইন প্রয়োগের অনুমতি চাওয়ার বিষয়টি আচার্য তথা রাজ্যপালের বিবেচনার জন্য পাঠানোর পক্ষে মত দিয়েছে কর্মসমিতি।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত বছরের জুলাই মাসে দিলীপবাবু ও প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষকান্তি সাহার বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি চায় পুলিশ। বিধি অনুযায়ী, রেজিস্ট্রার দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের অনুমতি দিতে পারে কর্মসমিতি। কারণ, কর্মসমিতিই দিলীপবাবুকে নিযুক্ত করেছে। কিন্তু, উপাচার্যদের নিয়োগ করে থাকেন আচাযা তথা রাজ্যপাল। সে জন্য প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষবাবুর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের জন্য আচার্য তথা রাজ্যপালের সম্মতি প্রয়োজন। তাই পীযূষবাবুর বিরুদ্ধে চার্জসিট পেশের জন্য পুলিশ অনুমতি চেয়ে যে আবেদন করেছে তা আচার্যের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্মসমিতি। |
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বিভাগের একটি অ্যাকাউন্টে প্রায় দেড় কোটি টাকা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ৪ বছরের বেশি সময় ধরে বিতর্ক চলছে। ওই মামলায় দিলীপবাবু ও পীযূষবাবুর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় তা নিয়ে রাজ্যের শিক্ষা মহলেও দীর্ঘদিন ধরে চলছে নানা জল্পনা। পুলিশ তদন্তের পরে চার্জশিট পেশের জন্য অনুমতি চাইলেও ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পরে কর্মসমিতির কোনও বৈঠক বিশ্ববিদ্যালয়ে না-হওয়ায় জল্পনা আরও বেড়েছে। রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের পরেও মামলার অগ্রগতি না-হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই ক্ষোভ দানা বাঁধে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দেড় কোটি টাকা দুর্নীতির মামলার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পরে ১০ দিনের মাথায় রাজ্যের আইনমন্ত্রীর দফতর থেকে শিক্ষা দফতরকে জানানো হয়, অন্তত দুটি ধারায় পুলিশ চার্জশিট দিতে পারে। তবে দুর্নীতি দমন আইন প্রয়োগের জন্য কর্মসমিতির অনুমোদন জরুরি বলে আইনমন্ত্রী মত দেন। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে কর্মসমিতি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। নতুন কর্মসমিতির সদস্য হবেন ৩০ জন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জনকে রাজ্য সরকার মনোনীত করেছেন। বাকি ১৭ জন সদস্যকে নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, মনোনীত সদস্য-সদস্যাদের মধ্যে ১১ জনকে নিয়ে প্রথম বৈঠক ডাকা হয়। সেখানেই ২০০টি-র বেশি বিষয়ে আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত নেয় কর্মসমিতি। তবে দুর্নীতি মামলায় চার্জশিট পেশের বিষয়টি আলোচনার সময়ে তিন জন সদস্য অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে তাঁদের আপত্তির কথা নথিভুক্ত করান। কিন্তু, বাকি ৮ জন সহমত হওয়ায় চার্জশিট পেশের বিষয়টি অনুমোদিত হয়। এই প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার দিলীপবাবু বলেন, “প্রক্রিয়া মেনে কর্মসমিতি গঠনের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি বলে অভিযোগে উচ্চ আদালতে মামলা করেছি। তা বিচারাধীন রয়েছে। সে জন্য কোনও মন্তব্য করব না।” উপাচার্য অরুণাভবাবু অবশ্য দাবি করেন, সরকারি বিধি মেনে কর্মসমিতির বৈঠক হয়েছে। |