বসন্তের প্রথম বৃষ্টি চায় চা বাগান
রাত পোহালেই দোল। গত কয়েক দশক ধরে হাজারো সমস্যার মধ্যেও এই মরসুমে সকাল থেকে প্রতিটি চা বাগানে বাজতে শুরু করে মাদল। এ বারও বাজছে বটে, তবে বার বার তাল কেটে যাচ্ছে। দোল উৎসবের আনন্দ ছাপিয়ে ফের চা বাগান বন্ধ হবে কি না সেই আশঙ্কা বড় হয়ে দেখা গিয়েছে ডুয়ার্সের বেশ কিছু চা বাগানে। আশঙ্কার কারণ, বৃষ্টি। প্রতি বছর বছরের এই সময়ে বৃষ্টি নামে। এ বার বৃষটির দেখা নেই আকাশে। ফলে মরসুমে চা গাছের প্রথম কুড়ি ‘ফার্স্ট ফ্ল্যাশ’ কবে মিলবে তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় ডুয়ার্সের চা বলয়। পরিস্থিতি এমনই যে বৃষ্টির আশায় ডুয়ার্সের প্রায় প্রতিটি চা বাগানে শুরু হয়েছে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া থেকে পুজোআর্চা। ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হয় বলে শ্রমিকদের একটি প্রচলিত ধারণা। বৃষ্টি নিয়ে এই উদ্বেগ চা শিল্প মহলেও। এমনকী, চা বাগান নিয়ে গবেষণায় নিযুক্ত কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের নাগরাকাটার মুখ্য উপদেষ্টা সুনীল কুমার পাঠকও মনে করেন, “এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টি না হলে চা বাগানের উৎপাদনে প্রভাব পড়বে। সকলেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।” রহিমাবাদ বাগানের ম্যানেজার দেবার্ঘ্য গুহ বলেন, “গতবার তিন ইঞ্চি পরিমাণ বৃষ্টি হলেও এবার চার মাসে অর্ধেক ইঞ্চি বৃষ্টি হয়নি। বাগানের শ্রমিকরাও চিন্তিত। বেশ কিছু বাগানে শ্রমিকরা পুজোআর্চার পাশাপাশি ব্যাঙ ধরে বিয়ে দিচ্ছে।”
মালিকদের আরএসপি দলের চা বাগান শ্রমিক নেতা গোপাল প্রধান বলেন, “বৃষ্টি না হলে ফের কিছু রুগ্ণ বাগান বন্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। বড় বাগান কৃত্রিম জল সেচের মাধ্যমে গাছে জল দিচ্ছে। ছোট বাগানের সেই সামর্থ্য নেই।” বাগান সূত্রে জানা গিয়েছে, ফি বছর নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মার্চ মাসের দোল যাত্রা পর্যন্ত গাছের পাতা তোলা বন্ধ থাকে। বেশি পাতা পাওয়ার আশায় এই সময়ে গাছগুলিকে ছেঁটে ফেলা হয়। শীতকালীন সময়ে যে বৃষ্টি হয় তাতে সবুজে ভরে ওঠে চা গাছ। গত বছর মার্চ পর্যন্ত তিন ইঞ্চি বৃষ্টি হয়েছিল তরাই-ডুয়ার্সের চা বলয়ে। এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে এক ইঞ্চিতে। অথচ একটি চা গাছ থেকে সারা বছর যে পরিমাণ পাতা মেলে তার ১০ শতাংশ মার্চ-মে মাস পর্যন্ত সময়ে মেলে। চা শিল্পে এই তিন মাসের পাতা তোলার সময়কে বলা হয় ফার্স্ট ফ্ল্যাশ। এই সময়ে গাছের নতুন পাতার গুণগত অত্যন্ত ভাল হওয়ায় দামও বেশি মেলে। বাগানের অর্থনৈতিক অবস্থার অনেকটাই নির্ভর করে প্রথম ধাপের পাতার উপর। এ বার বৃষ্টির আকালে দোলের পর ফার্স্ট ফ্ল্যাশের পাতা খুবই সামান্যই মিলবে বলে আশঙ্কা করছেন মালিকপক্ষ। বাগান মালিকদের সংগঠন ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অব ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সচিব প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন, “উত্তরবঙ্গ তথা ডুয়ার্স থেকে প্রতি বছর বৃষ্টি কমছে। তবে এ বার তা এতটা কমবে সেই ধারণা করা যায়নি। ফাস্ট ফ্ল্যাশের পাতা গতবারের তুলনায় অর্ধেক হবে বলে আশঙ্কা করছি।” ইন্ডিয়ান টি প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উত্তরবঙ্গের মুখ্য উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তীর মতে, পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। তিনি বলেছেন, “কিছু চা বাগান কৃত্রিম সেচের ব্যবস্থা করছে। খরচ বেশি হওয়ায় রুগ্ন চা বাগানগুলি সেচের ব্যবস্থা করতে পারছে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.