দারিদ্রহীন গড়ার স্বপ্ন দেখে ওরা মাওবাদীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মাওবাদীদের হাতে গরিবদের খুন হতে দেখে মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়াডের দুই সদস্যের ‘মোহভঙ্গ’ হয়। মঙ্গলবার পুরুলিয়ায় পুলিশ সুপারের অফিসে আত্মসমর্পণ করার পরে এ কথাই জানালেন মাওবাদী দম্পতি রমেশ সিং সর্দার ওরফে তপন এবং শিবানী লায়া ওরফে হেমলতা ওরফে সীমা। রমেশ বলরামপুর থানার বাঁধডি গ্রামের বাসিন্দা। শিবানী বাগমুণ্ডির একরা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের নিয়ে এ পর্যন্ত পুরুলিয়ায় পুলিশ সুপারের কাছে মাওবাদীদের দু’টি দম্পতি সমাজে মূল স্ত্রোতে ফেরার জন্য আত্মসমর্পণ করলেন। এর আগে যুধিষ্ঠির রাজোয়াড় ও আকরি সহিস নামের মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়াডের এক দম্পতি ধরা দেয়। |
ওই দম্পতির দাবি, “মাওবাদীদের কথায় ও কাজে কোনও মিল নেই। গ্রামে এসে ওরা দারিদ্রামুক্ত সমাজের কথা বলে আমাদের নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওদের সঙ্গে কাজ করে দেখলাম ক্ষমতা দখলের জন্য একের পর এক মানুষ খুন করছে। আদর্শের কথা জানতে চাইলে জবাব মিলত না। মোহভঙ্গ হওয়াতেই স্কোয়াড ছেড়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিই।”
এ দিন দুপুরে কড়া পুলিশি পাহারায় তাঁদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।.পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কোয়াডে দু’জনেই রাইফেল ব্যবহার করেছেন। হেমলতা স্কোয়াডে যোগ দেন বেশ কয়েক বছর আগে। রমেশ গিয়েছিলেন বছর দুয়েক আগে। স্কোয়াডেই সম্প্রতি তাঁদের বিয়ে হয়। তবে এ দিন তাঁদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। তাঁরা দু’জনেই জানান, স্কোয়াড ছেড়ে পালিয়ে আসার সময় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আসতে পারেননি। পুলিশের দাবি, হেমলতা স্কোয়াডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনীতে যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অ্যাকশনে’ ছিলেন। ঝালদার বাগবিন্ধ্যা গ্রামে ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীদের খুনের ঘটনা থেকে অযোধ্যা পাহাড়ে পার্থ বিশ্বাস, সৌমজিৎ বসুকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় তিনি যুক্ত ছিলেন। অন্য দিকে, রমেশের বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগে বলরামপুরের খুনটাঁড়ে তৃণমূল সমর্থক অজিত সিং সর্দার ও তাঁর ছেলে বাকু সিং সর্দারকে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকা-সহ একাধিক খুন ও নাশকতার অভিযোগ রয়েছে।
আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ বলেন, “কয়েকদিন আগেই ওই মাওবাদী দম্পতি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁরা সমাজের মূলস্ত্রোতে ফিরতে চায়। তাঁদের পুরুলিয়া পুলিশ লাইনের ‘ট্রানজিট ক্যাম্পে’ রাখা হবে।” এই নিয়ে মোট পাঁচ জন স্কোয়াড সদস্য পুরুলিয়ায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করলেন। |