|
দেবাশিস বাগচী
প্রধান শিক্ষক
|
|
শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখাই চ্যালেঞ্জ |
ক্যানিং শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কুমারশা গ্রামে কয়েকজন শিক্ষানুরাগী মানুষের প্রচেষ্টায় ১৯৪৯ সালের ১৬ জানুয়ারি গড়ে উঠেছিল এই স্কুল। উদ্দেশ্য ছিল সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এই এলাকায় গ্রামের গরিব, অশিক্ষিতদের ঘরের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা। শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে সকলকে সেই পরিবেশে টেনে আনা। এটাই চ্যালেঞ্জ। যে চেষ্টা আজও অব্যাহত।
প্রায় পাঁচ বিঘা জমির উপরে তৈরি এই বিদ্যালয়ের পরিবেশ প্রাচীন কালে আশ্রমিক পাঠদানের কথা মনে করিয়ে দেয়। বিদ্যালয়ের পাশেই খেলার মাঠ। গাছপালা, পুকুর, ফুলের বাগান নিয়ে পরিবেশটি শিক্ষার অত্যন্ত উপযোগী। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই ওই সমস্ত ফুলের বাগানের পরিচর্যা করে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভ করেছে এই বিদ্যালয়। ছাত্রছাত্রীদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের আরও উন্নতির ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। |
যেমন, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার অনুপাতে উপযুক্ত সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব রয়েছে। অভাব রয়েছে প্রয়োজনীয় সংখ্যায় ক্লাসঘরের। ফলে ছাত্রছাত্রীদের অত্যন্ত কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। পরিকাঠামোর অভাবেই পঞ্চম শ্রেণি থেকে ছাত্রছাত্রীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া যাচ্ছে না। শুধুমাত্র একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে পাড়াশোনার পাশাপাশি এই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা খেলাধূলাতেও নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য ভারতীয় দলের প্রশিক্ষণ শিবিরে ডাক পেয়েছে বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র বিপ্লব বেরা। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র শিবনাথ সাঁতারে জাতীয় স্তরে স্বর্ণপদক লাভ করেছে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশানার পাশাপাশি তাদের দেশ-বিদেশের নানা খবর, সাধারণ জ্ঞানের শিক্ষার জন্য মাঝেমধ্যে বিতকর্সভা, ক্যুইজের আয়োজন করা হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকলেও ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষিকাদের মিলিত চেষ্টা এই বিদ্যালয়েকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা রাখি।
|
আমার চোখে |
চম্পা প্রামাণিক। ক্লাস টেন-এর ফার্স্ট গার্ল |
|
অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই স্কুলে ভর্তি হয়েছি। এতগুলো বছর বিদ্যালয়ের ছাত্রী হওয়ার পড়াশোনার ক্ষেত্রে সুবাদে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্য যেমন পেয়েছি। তেমনই পেয়েছি তাঁদের ভালবাসা, স্নেহ। তাই যখন ভাবি একদিন এই স্কুলের গণ্ডী পেরিয়ে চলে যেতে হবে তখন মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। আমাদের পারিবারিক অবস্থা সচ্ছল। নয়। অনেক কষ্ট করে পড়াশোড়া করতে হয়। তবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অকুণ্ঠ সহযোগিতা সেই পথকে অনেকটাই মসৃণ করে দিয়েছে। স্কুলে অনেক সমস্যা রয়েছে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার তুলনায় বেশি ক্লাসঘর না থাকায় খুব সমস্যা হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকারও অভাব রয়েছে। ক্লাস টেন পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। তবে এ সব সমস্যা সত্ত্বেও আমরা আমাদের স্কুল নিয়ে গর্বিত। কারণ সব সমস্যাকে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাশক্তি আমাদের মধ্যে এনে দিয়েছেন আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই।
|