একেবারে সহজ করে বলতে গেলে, অস্ট্রেলিয়া যথেষ্ট রান তুলতে পারল না। দলে দুটো সেঞ্চুরি থাকলে অবশ্যই আশা করা হবে যে ২৭১-এর চেয়ে বেশি রান উঠবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া বড় শট খেলাটা বড্ড দেরি পর্যন্ত তুলে রেখেছিল। শেষের ওভারগুলোয় লাসিথ মালিঙ্গা বল করতে আসছে, এ রকম পরিস্থিতিতে সেটা অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিকল্পনা। সেঞ্চুরি করার জন্য সমালোচনা হচ্ছে এটা ভাবতে অবাক লাগলেও কথাটা না বলে পারছি না।
এই সমালোচনা থেকে মনে হয় মাইকেল ক্লার্ককে বাদ দেওয়া যায়। কারণ ১১৭ করতে ও মাত্র ৯১ বল নিয়েছে। কিন্তু ওয়ার্নার এক বারের জন্যও কর্তৃত্ব নিয়ে খেলেনি। মনে হয় ৫০ ওভার টিকতে পারাটাই ওর প্রধান লক্ষ্য ছিল। যখন শ্রীলঙ্কা একের পর এক ক্যাচ ফস্কাচ্ছিল, তখনও না। যার জন্য বৈচিত্রহীন অস্ট্রেলীয় বোলিংয়ের উপর খুব বেশি চাপ পড়ে গিয়েছিল।একটা অবাক করা ব্যাপার দেখুন। অস্ট্রেলীয়রা যেখানে ক্রিজ কামড়ে পড়ে থাকার লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিল, সেখানে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং দেখে মনে হল ওরা কোনও কিছু নিয়েই চিন্তিত নয়। দিলশানরা নাগাড়ে ঝুঁকি নিয়ে গেল। অস্ট্রেলীয়রা যেটা করতে পারেনি। শ্রীলঙ্কার ওপেনারদের অসামান্য ফুটওয়ার্ক দেখলাম। ওদের দুর্ধর্ষ ব্যাটিং অস্ট্রেলীয়দের আরও দিশেহারা করে দিয়েছিল। বোলাররা ভেবে পাচ্ছিল না কোন লেংথে বল করবে। উইকেটের কোন দিকটা বাঁচাবে। ছোট বাউন্ডারির পুরো ফায়দা তুলল শ্রীলঙ্কা। প্রতিটা শটই যেন ফিল্ডারদের থেকে অনেক দূরে মারছিল দিলশানরা। দুই ওপেনার ক্রিজে থাকতে অস্ট্রেলীয় বোলাররা যে একটাও মেডেন ওভার বল করতে পারেনি, দেখে একটুও আশ্চর্য হইনি।
দিলশানদের কাছ থেকে আজ যা দেখলাম, সেটা ব্যাটিংয়ের সেরা প্রদর্শনী। আমি তো এটাও বলব যে অস্ট্রেলিয়ায় গোটা গ্রীষ্মে এটাই সেরা ব্যাটিং। বোলারদের তুলোধোনা করা ছাড়া এটাকে আর কিছু বলা যায় না। শ্রীলঙ্কা যে রকম ছন্দে ছিল তাতে সাড়ে তিনশো রান তাড়া করাও আটকাতে হিমশিম খেত ক্লার্করা। অস্ট্রেলিয়ায় এত নৃশংস শ্রীলঙ্কা দল দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। |
কর্তৃত্ব নিয়ে জিতল শ্রীলঙ্কা। ওরা অস্ট্রেলিয়ার দুর্বলতাগুলো ধরে ফেলেছে। এই সিরিজে এক বারও ওরা অস্ট্রেলীয় ব্যাটিংকে ঝড় তুলতে দেয়নি। গাব্বায় ৩২১ করার দিনও নয়। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং পুরোপুরি শ্রীলঙ্কার দয়ার উপর নির্ভর করে আছে। টুর্নামেন্টের বিভিন্ন সময় অস্ট্রেলীয় বোলিং নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছে শ্রীলঙ্কা। ব্রেট লি থাকুক বা না থাকুক, তাতে কোনও তফাত হয়নি।
মঙ্গলবার হারের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্তও কিছুটা দায়ী। ওরা তো জানতই যে শ্রীলঙ্কা সাত জন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান নিয়ে মাঠে নামছে। সবচেয়ে ভাল হত যদি শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে আগে ব্যাট করিয়ে নেওয়া যেত। পরে সেই মতো নিজেদের ইনিংসের গতি ঠিক করতে পারত অস্ট্রেলিয়া।
যাক গে, সিরিজটা এখনও বেঁচে। ২০০৫-’০৬ সালের পরে অস্ট্রেলিয়া কোনও ত্রিদেশীয় সিরিজ জেতেনি। মনে হয় ক্লার্কদের অপেক্ষায় আরও একটা বছর যোগ হবে। |