তিন বিতর্কিত সিদ্ধান্তে আড়ালে বিশ্রী ফুটবল
রেফারিং ডোবাল ইস্টবেঙ্গলকে
আল ওরুবা-১ (ফাতাই আলাও-পেনাল্টি)
ইস্টবেঙ্গল-০
ট্রেভর মর্গ্যান বলে গেলেন, “রাত ন’টা পর্যন্ত খেলা হলেও আমরা আজ গোল করতে পারতাম না।” তার পরে সামান্য শুধরে, “অবশ্য ফ্লাডলাইটই তো নেই। ন’টা পর্যন্ত খেলা হবে কী করে?”
ক্ষোভ না হতাশা, কোন ব্যাপারটা এই স্বীকারোক্তির পিছনে বেশি কাজ করল?
হতে পারে ক্ষোভটাই বেশি। বিরতির বাঁশি বাজা মাত্র উত্তেজিত মর্গ্যান একেবারে মাঠের সেন্টার সার্কেলে চলে গেছিলেন রেফারির সঙ্গে তর্ক করতে। এবং ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে ঢুকে তাঁর ঘোষণা, “এমন রেফারিং হলে বিশ্বের কোথাও জেতা যাবে না।”
একটা গোল বাতিল হল এডমিলসনের। একটা পেনাল্টি দেওয়া হল না টোলগেকে। একটা বিতর্কিত পেনাল্টিতে গোল হজম করতে হল।
ম্যাচ শেষের ছবি। বিমর্ষ ওপারারা। জয়ের আনন্দে মাঠ চুম্বন আল ওরুবার ফুটবলারদের।
মঙ্গলবার যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল সরকার
এএফসি কাপে এমন বিরল দৃশ্য বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা যৌথ উদ্যোগে। বাংলাদেশের রেফারি সামসুজ্জামান হাসান ও শ্রীলঙ্কার সহকারী রেফারিরা দেখিয়ে গেলেন, এএফসি-র রেফারি মাত্রেই ভাল নন। ভারতের রেফারিরা তো এঁদের তুলনায় ইউরোপিয়ান রেফারি। তিনটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পাশাপাশি উল্টোপাল্টা বাঁশি ছিলই। এ সব আই লিগের ম্যাচ হলে তুলকালাম হতে পারত। ক্লাব কর্তারা প্রতিবাদ জানিয়ে সিডি পাঠাচ্ছেন এআইএফএফে। সমর্থকরা যা করেন, তাই করলেন। বোতল ছোড়াছুড়ি, গালাগালি। ময়দানের ‘লজেন্স দিদি’ পর্যন্ত চেঁচাচ্ছিলেন, “এটা রেফারিং!”
কিন্তু গ্রুপের দুর্বলতম বিদেশি টিমের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল কী খেলল?
রবিন সিংহের একটা সিটার নষ্ট করা ছাড়া ম্যাচের আর কিছু ছিল না, মানলেন মর্গ্যানও। ফাইনাল থার্ডে এসে বুদ্ধি প্রয়োগের ব্যাপারটাই ছিল না কারও। সাপোর্টিং প্লে দেখে কেউ বুঝবে না, দলটা মরসুমে এত ম্যাচ খেলে ফেলেছে। মর্গ্যান ওই জন্যও দুঃখ করতে পারেন, রাত ন’টা পর্যন্ত খেললেও...।
ইয়েমেনের সাধারণ দলটায় অসাধারণ খেললেন নাইজিরিয়ান স্টপার ফাতাই আদিসা আলাও। মাঝে মাঝে নিখুঁত ট্যাকলে মনে করাচ্ছিলেন সেরা ফর্মের স্যামি ওমোলোকে। টোলগে-পেন-এডমিলসনের ত্রিভুজ থেমে যাচ্ছিল ফাতাইয়ের পায়ে। অনেক বেশি বল পজেশন রেখে লাভটা কী হল? নতুন ৪-৫-১ ছকে ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠে রবিন, সঞ্জু, সুশান্তদের এই বোধই নেই, কতক্ষণ বল পায়ে রাখা দরকার। রিলিজ করার মোক্ষম সময় কখন? ফাতাইয়ের মতো নেতার অভাব ছিল ইস্টবেঙ্গলে।
মর্গ্যানের মুখরক্ষা তাই তিন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের সৌজন্যে। দশ পা দৌড়ে নেওয়া এডমিলসনের একটা গোলার মতো ফ্রি-কিক বারে লেগে গোলে ঢুকছিল। ওরুবার কিপার মুদা খালেক কোনও মতে বল বের করার সময় দেখা গেল অনেকটা বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড-জার্মানির ম্যাচের রিপ্লে। ওখানে অসংখ্য ক্যামেরা স্পষ্ট দেখিয়েছিল, ল্যাম্পার্ডের বল গোলে ঢোকার পরেও বুঝতে পারেননি রেফারিরা। কলকাতা অত ক্যামেরার অ্যাঙ্গল কোথায় পাবে? টিভি রিপ্লে দেখে মনে হল, পাঁচ ইঞ্চি চওড়া গোল লাইন পেরিয়েছিল এডমিলসনের ফ্রি কিক।
তর্কযোগ্য ব্যাপার। কারণ এডমিলসন, টোলগে, ওপারা-রা চেঁচামেচি করলেও ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক সঞ্জু প্রধান বলছিলেন, “ওটা গোল ছিল না।” কিন্তু বাকি দুটো? বিরতির ঠিক আগে গুরবিন্দর বিপক্ষের শারিয়ানের সঙ্গে নির্বিষ একটা উঁচু বলে লাফাতে গেলেন। সেটা পেনাল্টি হলে টোলগেকে শুয়ে পড়ে আটকে দেওয়াও তো পেনাল্টি। টোলগে মাঠ থেকে চিৎকার করতে করতে ড্রেসিংরুমে ঢুকছিলেন। দেখে ইস্টবেঙ্গলের এক কর্তা আক্ষেপ করছিলেন, “কৃশানু, ভাইচুংরা শুয়ে পড়ে পেনাল্টিটা নিতে জানত। টোলগে এখনও শেখেনি।”
অবশ্য সেই রামও নেই, অযোধ্যাও নেই। বিদেশি দলের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখতে সমর্থকরা বাড়তি উত্তাপ দেখান না। ফুটবলারদের সৌজন্যে বিদেশিদের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার ইতিহাসও হামাগুড়ি দিচ্ছে। অতীতে এমন বৈষম্যের শিকার হয়ে ইস্টবেঙ্গল বাড়তি উদ্দীপ্ত হয়ে টুঁটি চেপে ধরেছে বিপক্ষের। এ ম্যাচে বিরতির পরে বল পজেশন সামান্য বাড়ল, আর কিছু আলো জ্বলল না। অথচ ইয়েমেন চ্যাম্পিয়নরা আমাদের আই লিগের মানের প্রয়াগ ইউনাইটেড বা পুণে এফসি।
ম্যাচটার শেষে দল বেঁধে মাঠের ঘাসে চুমু খাচ্ছিলেন ইয়েমেন ফুটবলাররা। কেউ নাচছিলেন ট্রফি জেতার আনন্দে। দেশের সব আল-কায়দা সন্ত্রাসবাদী যেন আত্মসমর্পণ করেছে। কেন এত আনন্দ, জানতে চাইলে কোচ সালে বললেন, “আমাদের দেশে ঝামেলার জন্য ম্যাচ বাতিল করে দিয়েছে এএফসি। এক বার মনে হচ্ছিল, আমাদের টুর্নামেন্ট খেলাই হবে না। অথচ এটাই আমাদের প্রথম এএফসি কাপ। ম্যাচটা জিতে ফুটবলাররা হতাশা কাটিয়ে উঠেছে।”
ইয়েমেন ফুটবলে আলো ফেরাতে ঢাকা ও কলম্বোর কিছু ছোঁয়া রইল।

ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, হরমনজিৎ, ওপারা, গুরবিন্দর, সৌমিক, সঞ্জু (পাইতে), পেন, সুশান্ত (চরণ), রবিন (বলজিৎ), টোলগে, এডমিলসন।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.