কৌশিক সেন সমীপেষু,
আপনার জবানবন্দি (১-৩) পাঠ করলাম। আপনি এবং আপনার সমমনস্ক সুহৃদবর্গ যখন মিছিলে মিছিলে স্লোগান-ফেস্টুনে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তুলেছিলেন, তখন বঙ্গদেশের জনতা খানিকটা শ্রদ্ধামিশ্রিত বিস্ময়ে দূরত্ব বজায় রেখে ফিসফাস শুরু করেছিল। আপনাদের মতো বিদগ্ধ মানুষজনকে লড়াইয়ের মাঠে দেখে তাদের জোরটা বেড়ে গেল। মিডিয়া আপনাদের ‘বিদ্বজ্জন’ আখ্যা দিল। তৎকালীন প্রশাসন প্রতিরোধ করবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, জিত আপনাদেরই হল। দীর্ঘ চৌত্রিশ বছরের রাজশক্তির পতন হল, ২০১১-র মে মাসে। |
আপনাদের বুকে ক্ষত নিয়ে মিছিলে হাঁটা দেখে প্রথম প্রথম মানুষ ‘রং’ খোঁজার চেষ্টা করেনি। সত্যটা প্রকাশিত হল ক্রমে। যখন আপনার সহযোদ্ধাদের অনেকেই পরিবর্তিত সরকারের বহু বিশিষ্ট পদে অভিষিক্ত হলেন। এবং ভোটে না-দাঁড়িয়েই। চৌত্রিশ বছরের অপশাসনের পুরনো ছবিটা এখন বড্ড দ্রুত সামনে চলে আসছে দেখে আপনি বিচলিত। সেই একই ঔদ্ধত্য, আস্ফালন, কুৎসিত আচরণ। সেই সিন্ডিকেট রাজ। শিক্ষায় অরাজকতা। একটা প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই। এত চটজলদি দলতন্ত্র কি বাম রাজত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? ক্ষমতার মসনদে বারংবার থিতু হয়ে দলের বড়, মেজ এবং ছোট দাদারা ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন। প্রোমোটার-রাজ একমাত্র ব্যবসা হয়ে উঠেছিল। মানুষ দেখছিল এই পরিবর্তন। সুতরাং যা ভবিতব্য, তা-ই প্রতিফলিত হয়েছিল নির্বাচনে।
কিন্তু পরিবর্তন কী দিল? কোনও বিরোধী শক্তি থাকবে না কোথাও? অবিচারের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ করা যাবে না? সব কিছুকে এক লহমায় নস্যাৎ করে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সে বন্ধের দিনে চিত্রসাংবাদিক ঠেঙানো হোক বা ধর্ষণ কাণ্ড প্রতিটি ঘটনার পিছনে তিনি প্রত্যক্ষ করছেন সি পি এমের চক্রান্ত। সি পি এম-ও ধীরে ধীরে পরিবর্তন করছে আচার-আচরণে। সফল ব্রিগেড সমাবেশ, যাদবপুরের মিছিল। প্রত্যাবর্তন কবে বা আদৌ হবে কি না, তা মানুষই ঠিক করবে।
ধ্রুবজ্যোতি বাগচী। কলকাতা-১২৫ |