সম্পাদকীয় ১...
মায়াবতীর বিদায়
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সর্বাপেক্ষা চমকপ্রদ ফল উত্তরপ্রদেশে, যেখানে মায়াবতীর অপশাসনের বিরুদ্ধে জনাদেশ মুলায়ম সিংহ যাদবের সমাজবাদী পার্টিকে ক্ষমতায় উৎক্ষেপিত করিয়াছে। রাজ্য-রাজনীতির অন্য দুই দল কংগ্রেস ও বিজেপি মায়াবতী-বিরোধী এই জন-অসন্তোষের প্রায় কোনও সুযোগই লইতে পারে নাই। কারণ ভোটদাতারা সেই দলকেই তাঁহাদের ভোট উজাড় করিয়া দিয়াছেন, যে-দলের পক্ষে সরকার গঠন করা ও পাঁচ বছর তাহা চালানো সম্ভব। ইহার ফলে অন্যতর পরিস্থিতিতে যাঁহারা হয়তো কংগ্রেস কিংবা বিজেপিকে ভোট দিতেন, তাঁহারাও নিজেদের ভোট ‘নষ্ট’ না-করিয়া সমাজবাদী পার্টির প্রার্থীদের বাক্সেই দিয়াছেন, যে-পার্টি তীব্র মায়াবতী-বিরোধীও বটে, আবার যাহার পক্ষে সরকার গড়াও সম্ভব। ইহাকেই ‘ট্যাকটিকাল ভোটিং’ অর্থাৎ কৌশলাত্মক ভোটদান বলা হয়, রাজনীতির মণ্ডলায়ন তথা ভগ্নাংশকরণের পর হইতে হিন্দি বলয়ে যাহা অনুশীলিত হইয়া আসিতেছে। আর ঠিক সেই কারণেই উত্তরপ্রদেশের সদ্য-সমাপ্ত নির্বাচনকে আগামী লোকসভা নির্বাচনের ইঙ্গিতবহ ভাবিলে ভুল করা হইবে।
উত্তরপ্রদেশের মতো গোয়াতেও ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে অপশাসনজনিত অসন্তোষ জনাদেশকে আন্দোলিত করিয়াছে, যে-জন্য সেখানে কংগ্রেসকে হটাইয়া বিজেপি ক্ষমতায়। কিন্তু পঞ্জাব, মণিপুর কিংবা উত্তরাখণ্ডে শাসক দল বা জোটই ক্ষমতায় ফিরিতেছে মণিপুরে কংগ্রেস, পঞ্জাবে অকালি-বিজেপি জোট এবং উত্তরাখণ্ডে সম্ভবত বিজেপি। সেই হিসাবে এই নির্বাচনী মরসুমে কংগ্রেসের ঝুলি বহুলাংশে শূন্যই থাকিয়া যাইতেছে। উত্তরপ্রদেশে রাহুল গাঁধী সহ সমগ্র গাঁধী পরিবার এবং কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনী প্রচারপর্বে যে-রূপ উচ্চ গ্রামে, চড়া সুরে প্রচার, জনসভা, ‘রোড-শো’ করিয়াছেন, কংগ্রেসের হৃত জমি পুনরুদ্ধারে যে-ভাবে সর্বশক্তি নিয়োগ করিয়াছেন, জনরায়ে তাহার কোনও উদ্দীপনাময় প্রতিফলন ঘটে নাই। ভোটদাতাদের উদ্দীপনা থাকিলেও উহা তাঁহাদের হিসাবি কৌশলের নিকট এ-যাত্রা পর্যুদস্ত হইয়াছে। মায়াবতী নির্বাচনী বিপর্যয়ের সম্মুখীন হইলেও যে-ভাবে ২৬ শতাংশের বেশি ভোট পাইয়া আপন দলিত (বিশেষত জাতভ) গণভিত্তি মোটের উপর অক্ষত রাখিতে পারিয়াছেন, কংগ্রেস তাহাতে আঁচড় কাটিতে পারে নাই, যেমন পারে নাই মুলায়ম সিংহের যাদব কিংবা মুসলিম গণভিত্তিতেও। অনগ্রসর মুসলিমদের জন্য ৪ বা ৬ শতাংশ সংরক্ষণের ঘোষণা লইয়া শেষ মুহূর্তের নাটকও কার্যত সংখ্যালঘুদের আকৃষ্ট করে নাই, কেননা তাঁহারা ১৮ শতাংশ সংরক্ষণ প্রস্তাবকারী ‘মৌলানা মুলায়ম’-এর উপরেই ভরসা পুনঃস্থাপিত করিয়াছেন। আর উচ্চবর্ণের ভোটাররাও যে সকলে বিজেপিকে ভোট দেয় নাই কিংবা কংগ্রেসের দিকে ঝোঁকে নাই, বরং অনেকেই সমাজবাদী পার্টিকেই ভোট দিয়াছে, তাহার হেতুও কৌশলগত।
আপাতদৃষ্টিতে কংগ্রেস সমর্থকরা এই নির্বাচনী ফলাফলে উজ্জীবিত হওয়ার কারণ না-দেখিলেও জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস ইহার ফলে কার্যত লাভবানই হইতে পারে। কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের মায়াবতী ও মুলায়ম, উভয়কেই দরকার। সমাজবাদী পার্টি ও বহুজনসমাজ পার্টির সাংসদরা কেন্দ্রীয় শাসক জোটের শরিক না-হইয়াও ইউপিএ-কে নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে সমর্থন করিয়াছে। উত্তরপ্রদেশে রাজ্য-রাজনীতির পট-পরিবর্তন হইলেও সেই সমর্থনে কোনও ভাটা পড়ার কথা নয়। ক্ষমতাচ্যুত মায়াবতীর এখন আরও বেশি করিয়া ইউপিএ-কে প্রয়োজন। আর মুলায়ম সিংহ রাজ্যে একক গরিষ্ঠতা পাইলেও কেন্দ্রকে চটাইয়া রাজ্যের উন্নয়ন ও বিকাশের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করিতে পারিবেন না। তাই জাতীয় বিরোধী দল বিজেপি সংসদের ভিতরে-বাহিরে এই ফলাফলকে ‘কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গণভোট’ বলিয়া হাওয়া গরম করিতে চাহিলেও, শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তর্ঘাত উপেক্ষা করিয়া আর্থিক সংস্কার কর্মসূচির অসম্পূর্ণ এজেন্ডা সম্পূর্ণ করার একটা সুযোগ ইউপিএ-র সামনে উপস্থিত। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রাখিয়া সেই সংস্কার-প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা জরুরি। সাহস ও কল্পনাশক্তির মিশ্রণে মনমোহন সিংহের সরকার যাহাতে সেই দিকে পদক্ষেপ করে, কংগ্রেস নেতৃত্বকেই তাহা সুনিশ্চিত করিতে হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.