শিক্ষাঙ্গনে বাহিরের রাজনীতির অনুপ্রবেশ কাহাকে বলে? কী রূপে তাহা রোধ করা যায়? প্রশ্নটি লইয়া কিছু কাল ধরিয়াই নানাবিধ চর্চা চলিতেছে। কাজের কাজ কিছুই হয় নাই। সম্প্রতি একটি উত্তর মিলিয়াছে। মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানাইয়াছেন, বিশেষ কোনও প্রয়োজন ব্যতিরেকে তাঁহার দলের কোনও নেতা বা নেত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করিবেন না। ধরিয়া লওয়াই যায়, এই নির্দেশের অন্তরালে একটি সদিচ্ছা বিদ্যমান। প্রশ্ন হইল, সদিচ্ছামাত্রেই কি কাজ হইবে? নেতারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে প্রবেশ করিলেন না, বাহিরে কিছু দূরে শিবির করিয়া বসিয়া থাকিলেন, তাহাতেই কি শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির ছায়াপাত রোধ করা সম্ভব? উত্তরটি নেতিবাচক। নহে। সম্ভব নহে। যদি সত্যই এমন একটি সদিচ্ছা থাকে, তাহা হইলে সমস্যাটির মূলে প্রবেশ করিতে হইবে। কী সেই মূলাধার? ছাত্র-রাজনীতি। কার্যত, দলতন্ত্রের পালিত ছাত্র-রাজনীতি! কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি এবং তাহার নানাবিধ ব্যাধি এমন ভাবেই অনুপ্রবিষ্ট যে, নেতারা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ফটকের বাহিরে থাকিলেন, না ভিতরে, সেই প্রশ্নটি অর্থহীন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র নির্বাচন হইতেছে। লড়িতেছে কাহারা? উত্তরটি সরল। সি পি এম, তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস! ইহাই সেই মূলাধার।
ইহাই বিবেচনা দাবি করে। গভীরতর বিবেচনা। সম্প্রতি জানা গিয়াছে, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভোটের যে ধারাটির কথা ভাবা হইতেছে, তাহা অ-রাজনৈতিক না হইবার সম্ভাবনাই প্রবল। অর্থাৎ, দলীয় রাজনীতির ছায়া যে ভাবে অন্য পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র নির্বাচনে ছায়া ফেলে, তাহাকে রোধ করিবার মতো কোনও বন্দোবস্ত গ্রহণের কথা বলা হয় নাই। এই সূত্রেই গভীরতর প্রশ্নটি আরও প্রাসঙ্গিক। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্বাচনে সি পি এম, তৃণমূল কংগ্রেস বা কংগ্রেস-এর মতো দলের কী? ছাত্র রাজনীতিকে দলীয় রাজনীতিতন্ত্র হইতে মুক্ত করিবার ইশারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাঁহারা পাঠ লইতেছেন, তাঁহাদের নিজস্ব দাবিদাওয়া থাকিতেই পারে। পড়িবার সময় তাঁহাদের নানাবিধ সমস্যা, বিভিন্ন পরামর্শ ইত্যাদিও থাকা সম্ভব। তাহার জন্য রাজনৈতিক দল বা তাহাদের অনুসারী সংগঠনের দ্বারস্থ হইতে হইবে কেন? সুতরাং যে সকল ‘ছাত্র সংগঠন’ বৃহৎ রাজনৈতিক দলের শাখা হইয়া কাজ করিতেছে, তাহাদেরই বা থাকিবার প্রয়োজন কী? যদি রাজনীতির সংস্রবকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হইতে দূরে রাখিতেই হয়, তাহা হইলে নিছকই দলীয় নেতাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করিয়া লাভ নাই। রাজনীতিকেই মূলে-স্থূলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হইতে বাহির করিতে হইবে। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িবার সময় সে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক, সুতরাং প্রতিষ্ঠানের বাহিরে তাহার নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস, এমনকী রাজনৈতিক পরিচয়ও থাকিতেই পারে। সেই বিশ্বাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে চালান করিবার কোনও কারণ নাই। |