|
|
|
|
প্রশ্ন তুলে দিল ভোটের ফল |
আর্থিক সংস্কারের ভবিষ্যৎ নিয়ে ধন্দে শেয়ার বাজার |
প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী • কলকাতা |
উত্তর প্রদেশ-সহ কিছু রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের খারাপ ফল শেয়ার বাজার এবং শিল্পমহলের পর্যবেক্ষকদের সামনে একটি বড় প্রশ্ন উসকে দিয়েছে। তা হল, আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে এ বার কংগ্রেস কী ভূমিকা গ্রহণ করবে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের সিংহভাগই মনে করছেন, জনপ্রিয়তার মোহ ছেড়ে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সংস্কারের পথেই জোরকদমে এগোবে কংগ্রেস। তবে শিল্প ও শেয়ার বাজার মহলের একটি ছোট অংশের মত, ভোটে খারাপ ফল সংস্কারের ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে আরও ‘ব্যাক ফুট’-এ ঠেলে দিতে পারে। কারণ, নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে জনপ্রিয়তার রাস্তাকেই আরও বেশি আঁকড়ে ধরতে পারে তারা।
সংস্কারের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই সংশয়ের জেরেই মঙ্গলবারও সেনসেক্স ১৮৯.৫৮ পয়েন্ট পড়েছে। একে অবশ্য ভোটের ফলের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসাবে ব্যাখ্যা করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। বাজেটের আগে পর্যন্ত বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন তাঁরা। এ দিন ডলারে টাকা পড়েছে ৫২ পয়সা। দিনের শেষে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৫০.৩৬/৩৭ টাকা।
তবে দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করা ছাড়া আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভোট চাওয়ার অন্য কোনও রাস্তা কংগ্রেসের সমানে খোলা নেই বলে মনে করছে শেয়ার বাজার মহল। সে জন্য এ বার শরিকদের চাপ অস্বীকার করে দলটি খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসবে বলেও আশা করছে তারা। শেয়ার বাজার মহলের আশা, উন্নয়নের চাকাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে-সব প্রস্তাব শরিকদের চাপে শিকেয় তুলে রেখেছিল কংগ্রেস, তার বেশ কিছু বাস্তবায়িত করার পথে এ বার তারা হাঁটতে পারে।
সে ক্ষেত্রে শরিকেরা সমর্থন তুলে নিয়ে সরকার ফেলার রাস্তায় কি হাঁটতে পারে? শেয়ার বাজার মহলের ধারণা, এই মুহূর্তে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য কোনও দলই প্রস্তুত নয়। সংসদে শরিক দল এবং বিরোধীরা হল্লা করলেও সরকার ফেলে দেওয়ার রাস্তায় তারা এখনই হাঁটবে না বলে মনে করছে শেয়ার বাজার মহল। প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে জানালেন, “এই কারণেই এ বার বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ করতে পারেন।” অজিতবাবুর মতো বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শরিকদের চাপে আর্থিক সংস্কারের বেশ কিছু কর্মসূচি রূপায়ণে বিরত থেকে জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছে কংগ্রেস। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বা কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এ বার তাঁদের নিজস্ব ঢঙেই সংস্কারের পথে হাঁটতে পারেন। শেয়ার বাজার মহলের ধারণা, আসন্ন বাজেটই তার প্রমাণ দেবে।
শেয়ার বাজার এখন তাকিয়ে আছে দু’টি দিনের দিকে। এক, ১৫ মার্চ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি পর্যালোচনা ও আর্থিক সমীক্ষা পেশ। দুই, ১৬ মার্চের বাজেট। শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি সহ দেশের আর্থিক অবস্থা চাঙ্গা করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমানোর পথে হাঁটে কি না, তা নিয়েই লগ্নিকারীদের কৌতূহল চরমে উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ ৫০-১০০ বেসিস পয়েন্ট কমাবে। অন্য দিকে সংস্কারের পথ পরিষ্কার করতে বাজেটে অর্থমন্ত্রী কী ব্যবস্থা নেন, তা দেখতেই আগ্রহী লগ্নিকারীরা।
এ দিকে আর্থিক সংস্কার চলবে বলে মনে করছে ফিকি, অ্যাসোচ্যামের মতো বণিকসভা। ফিকি সভাপতি কে ভি কানোরিয়া বলেন, “ভোটের ফলের দিকে তাকিয়ে আমরা কংগ্রেসকে সংস্কারের পথে চলার জন্য সাহসী হতেই আর্জি জানাচ্ছি।” একই মত অ্যাসোচ্যাম সভাপতি রাজকুমার ধুতের। তিনি বলেন, “আশা করব, মানুষের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্র দ্বিতীয় পর্বের আর্থিক সংস্কার রূপায়ণে দ্রুত এগোবে।” |
|
|
|
|
|