তৃণমূলকে জামিনের ধারা,‘পক্ষপাতে’ ক্ষুব্ধ সিপিএম
দেওয়ানদিঘিতে প্রদীপ তা ও কমল গায়েন খুনের আগেই মারপিটে জখম হয়েছিলেন তৃণমূল এবং সিপিএমের দুই কর্মী। প্রথম ঘটনায় অভিযুক্ত সিপিএম কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করেছে। অথচ অন্য ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ জামিনযোগ্য। এই ফারাক তুলে ধরেই এ বার পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগে সরব হয়েছেন বর্ধমানের সিপিএম নেতারা।
ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার বিকেলেই বর্ধমান থানার আইসি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলা গোয়েন্দা বিভাগে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বদলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে আসছেন দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, শহরে অপরাধমূলক কাজ বেড়ে চলায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সুপার স্বপনবাবুর কৈফিয়ত তলব করেছিলেন। এর পরেই, ২২ ফেব্রুয়ারি দেওয়ানদিঘিতে দুই সিপিএম নেতাকে প্রকাশ্যে খুন করা হয়। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট যথাসময়ে হাইকোর্টে জমা না দেওয়ায় ৩ মার্চ ‘শো-কজ’ করা হয়েছিল স্বপনবাবুকে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা অবশ্য দাবি করেন, “এটা রুটিন বদলি।”

আইসি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
গত ২২ ফেব্রুয়ারি সিপিএমের লোকেরা দেওয়ানদিঘিতে বিদ্যুৎবরণ হাজরা নামে এক তৃণমূল কর্মীর দোকানে লালঝান্ডা লাগাতে যাওয়াতেই গণ্ডগোলের সূত্রপাত হয়েছিল বলে অভিযোগ। বিদ্যুৎবাবুকে (বর্তমানে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি) মারধরও করা হয়। পরে তিনি নিজেই প্রদীপবাবু, তাঁর ভাই প্রবীর তা, স্থানীয় সিপিএম কর্মী পীযূষ তা ও রূপকুমার গুপ্তের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় অভিযোগ (কেস নম্বর ১৩৪/১২) দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ৩০৮, ৩৪১, ৩২৩, ৩২৫ ও ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। এর মধ্যে ৩০৮ নম্বর ধারায় খুনের চেষ্টা জামিন অযোগ্য অপরাধ।
বিদ্যুৎবাবুর উপরে হামলার পরেই তৃণমূল সমর্থকদের পাল্টা মারে রূপকুমারবাবু জখম হন বলে অভিযোগ। সিপিএম সূত্রের খবর, তিনি এখনও কলকাতার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি। মারাত্মক জখম হওয়ায় তিনি নিজে অভিযোগ দায়ের করার অবস্থায় ছিলেন না। ওই রাতে তাঁর মা প্রতিমা গুপ্ত ১১ জনের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় অভিযোগ (কেস নম্বর ১৪৪/১২) দায়ের করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুলিশ ৩০৮ ছাড়া বাকি সব ক’টি জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে। অভিযুক্তদের মধ্যে পতিতপাবন তা, সুরজিৎ তা ও ছোটন চক্রবর্তী ইতিমধ্যেই প্রদীপ তা খুনের মামলায় ধৃত। এ ছাড়াও বিদ্যুৎবাবু, মন্টু ঘোষ হাজরা, ঝন্টু ঘোষ হাজরা, বাবু হাজরা, উদয় মণ্ডল, শান্তনু গড়াই, উদয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও সায়ন গুপ্তের নাম রয়েছে।
শেষ দু’জন গত শনিবার আদালতে গিয়ে জামিনও নিয়েছেন বলে তাঁদের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দাস জানান। যদিও দু’টি মামলার কোনওটির ক্ষেত্রেই এখনও পুলিশ অভিযুক্তদের ধরেনি।
সিপিএমের অভিযোগ, কলেজের অধ্যক্ষ নিগ্রহের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার যেমন ‘রায়গঞ্জে বেল, মাজদিয়ায় জেল’ নীতি নিয়েছিল, এ ক্ষেত্রেও কার্যত তা-ই হয়েছে। দলের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের মতে, “পুলিশ কত পক্ষপাতদুষ্ট, সেটা খুনের মামলায় ধৃতদের হেফাজতে না চাওয়াতেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। ওরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে হাল্কা আর আমাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ধারা দেবে, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই।” সিপিএম প্রভাবিত জেলা গণতান্ত্রিক আইনজীবী সঙ্ঘের নেতা কমল দত্তের দাবি, “রূপকুমারবাবুর আঘাত যে বেশি ছিল, হাসপাতালের রিপোর্টই তার প্রমাণ। অথচ তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ লঘু করে দিয়েছে পুলিশ।”
জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হুসেন মির্জা বা বর্ধমান থানার আইসি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় এই নিয়ে কথা বলতে চাননি। তবে থানা সূত্রের দাবি, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রূপকুমারবাবুকে পাওয়া যায়নি। ফলে, তিনি কতটা আহত তা বোঝা সম্ভব হয়নি। যদিও প্রয়োজনে যে কোনও মামলায় পরে নতুন ধারা যোগ করা যায়। রাজ্যের আইনমন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক মলয় ঘটক আবার বলেন, “কে কত আহত, তার উপরে মামলার ধারা নির্ভর করে না, করে দায়ের হওয়া অভিযোগের উপরে। হয়তো রূপকুমারবাবুর তরফে হওয়া অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারা দেওয়ার সুযোগ ছিল না। এতে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠছে কেন?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.